উদ্যোক্তা-পরিচালক দ্বদ্ব: হট্টগোলে এজিএম পণ্ড বিআইএফসির

নিজস্ব প্রতিবেদক: অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি ‘বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি’র (বিআইএফসি) বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) হট্টগোল করেছেন বিনিয়োগকারীরা। এর জের ধরে পণ্ড হয়েছে কোম্পানিটির এজিএম। তবে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে ‘এজিএম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, কোম্পানিটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছে সুকুজা ভেনচার্স লিমিটেড। বিএফআইসি’তে সুকুজা ভেনচার্সের মাত্র পাঁচ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘন করে অর্থ সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগের সুযোগ নিয়ে মাত্র পাঁচ শতাংশ শেয়ারধারী পরিচালকরাই কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ওই পরিচালকদের বিরুদ্ধে করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বর্তমান পরিচালনা পরিষদের সাত পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেনকে গত ৫ জুন অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। বিআইএফসির দুর্নীতি বিবেচনায় নিয়ে এজিএমের আগে ‘এ’ ক্যাটাগরির অডিট ফার্ম দিয়ে অডিট করার নির্দেশনাও দিয়েছেন। বিষয়টি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আগামী ৫ অক্টোবর শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এমন অবস্থার মধ্যেই আদালতের নির্দেশনাকে পাশ কাটিয়ে গতকাল বুধবার রমনার পুলিশ কনভেনশন হলে ২১তম এজিএমের আয়োজন করলে পরিচালকদের দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডার মুখে তা পণ্ড হয়ে যায়।

এর আগে গত মঙ্গলবার ‘পরিচালকদের অবৈধ ঘোষণা ও আদালতের নির্দেশনা’র বিষয়টি উল্লেখ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানায় বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘২০১০ সালের মহাধসের পর এখনও অনেক বিনিয়োগকারী ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অনিয়ম দিন দিন বাড়ছে। বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিআইএফসি অন্যতম। কোম্পানির মাত্র পাঁচ শতাংশ শেয়ারধারণকারী পরিচালনা পর্ষদের সাত পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেনকে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছেন। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আগামী ৫ অক্টোবর এ-সংক্রান্ত শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। তাই এজিএম স্থগিত করার দাবিতে বিএসইসির কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছিল। তারপরও এজিএম আয়োজন করায় বিনিয়োগকারীদের দুই গ্রুপের মধ্যে হট্টগোল হয়েছে। পরে কোনো আলোচনা ছাড়াই এজিএম পণ্ড হয়েছে।’

তবে বিএফআইসির বর্তমান পরিচালনা পরিষদের নিয়োগ করা গণসংযোগ প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘বিএফআইসির এজিএম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়েছে।

এদিকে আইন লঙ্ঘন করে ঋণের নামে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে বিআইএফসির উদ্যোক্তা ও সাবেক পরিচালকরা। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নানের সানম্যান গ্রæপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও অন্য পরিচালকদের নামে ওই ঋণ নেওয়া হয়। জালিয়াতি ফাঁসের দেড় বছরেও ওই অর্থ ফেরত পায়নি বিএফআইসি। খেলাপি ঋণের দায় বইতে গিয়ে লাভজনক অবস্থা থেকে লোকসানে জড়িয়েছে কোম্পানিটি। গত দুই বছরেই প্রায় ১২৫ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের কোম্পানিটি।

একইভাবে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত (ছয় মাসে) প্রায় ৩৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা পরিচালন লোকসানে রয়েছে বিএফআইসি। অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সুদ বাবদ প্রায় ছয় কোটি ৪৭ লাখ টাকা আয় করেছে বিএফআইসি, যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কম। এর বিপরীতে আমানতের বিপরীতে গ্রাহকদের প্রায় ৩৭ কোটি ১০ লাখ টাকা মুনাফা দিয়েছে কোম্পানিটি। এ কারণে সর্বশেষ অর্ধবার্ষিকে বিএফআইসির পরিচালন লোকসান ৩৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর কর-পরবর্তী লোকসান হয়েছে প্রায় ৩৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে পথচলা শুরু বিএফআইসির। এর পর থেকে লাভজনক অবস্থানে ছিল কোম্পানিটি। ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চার বছরে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে বিএফআইসি। লাভজনক অবস্থানে থাকা কোম্পানিটি ২০১৫ সালে এসে প্রায় ৬২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে। এ সময়ে শেয়ারপ্রতি ছয় টাকা ২২ পয়সা লোকসান গুনেছে বিএফআইসি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে শেয়ারপ্রতি লোকসান আরও প্রায় ৫০ পয়সা বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী লোকসান প্রায় পাঁচ কোটি বেড়ে প্রায় ৬৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০