নিজস্ব প্রতিবেদক : উচ্চ আদালতে সরকারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনিষ্পন্ন মামলাগুলোর মধ্যে সর্বাধিক মামলা রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের। ১০০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বের সরকারি অর্থের সংশ্লেষ বিবেচনায় ৬৫টি মামলাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ মামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিভাগের মামলাগুলোর নিষ্পত্তি বিলম্ব হওয়াকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বিভাগ সংশ্লিষ্টরা। মামলার দীর্ঘসূত্রতার সুযোগ নিয়ে সরকারি রাজস্ব পরিশোধ না করে আর্থিক সুবিধা নেয়ার প্রয়াস পাচ্ছেন দায়েরিগণ।
উচ্চ আদালতে সরকারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনিষ্পন্ন মামলা ৯১ হাজার ৫১৯টি। এই সময় নিষ্পন্ন হয়েছে মাত্র ৬৩৭টি। এর মধ্যে সরকারের পক্ষে ৫২০টি এবং বিপক্ষে ১১৭টি মামলা নিষ্পন্ন হয়েছে। আর নতুন করে ২ হাজার ৯২৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) সরকারের ৬৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ অনিষ্পন্ন মামলা রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের। সংখ্যার হিসেবে ১৪ হাজার ২৮৪টি। ওই সময়ে এই বিভাগে নতুন করে দায় করা হয়েছে ৩৫৪টি মাললা। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের নিষ্পন্ন হওয়া ১৫৯টি মামলার মধ্যে সরকারের পক্ষে নিষ্পন্ন হয়েছে ১২২টি। অবশিষ্ট মামলাগুলো সরকারের বিপক্ষে নিষ্পন্ন হয়েছে।
অনিষ্পন্ন মামলার হিসাবে পরের অবস্থানে রয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা ১২ হাজার ৩৬৮টি। এই সময়ে নতুন করে দায় করা হয়েছে ১৩৬টি মামলা। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিষ্পন্ন হওয়া ১৭ মামলার সবগুলো সরকারের পক্ষে নিষ্পন্ন হয়েছে।
আর পরের অবস্থানে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের অনিষ্পন্ন মামলা রয়েছে ৭ হাজার ৩২০টি। এই বিভাগে নতুন করে দায় করা হয়েছে ১২৪ মামলা। নিষ্পন্ন হওয়া ১৯টি মামলার মধ্যে সরকারের পক্ষে ১২টি এবং বিপক্ষে ৭টি মামলা নিষ্পন্ন হয়েছে।
উচ্চ আদালতে সরকারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনিষ্পন্ন মামলাগুলো মধ্যে অর্থ বিভাগের ৫ হাজার ৭১১টি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৫ হাজার ৫৫৮টি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের ৪ হাজার ৮৬০টি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ৪ হাজার ২৪৪টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৩ হাজার ৩৯০টি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৩ হাজার ১৩৮টি মামলা রয়েছে।
বিভাগীয় কমিশনগুলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনের সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭৮০টি অনিষ্পন্ন মামলা রয়েছে। এছাড়া অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রলায়ের সবার্ধিক অনিষ্পন্ন মামলা রয়েছে।
উচ্চ আদালতে চলমান সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলা পরিচালনা কার্যক্রম পরিবীক্ষণের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। গত ২৩ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে কমিটির চতুর্থ সভায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অতি গুরুত্বপূর্ণ ৪০টি মামলার তথ্য পর্যালোচনা করা হয়।
পর্যালোচনা প্রতিবেদনে দেখা যায়, কমিটি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্কসংক্রান্ত ১১৫টি, করসংক্রান্ত ৫৯১টি, বৃহৎ করদাতা ইউনিট-মূসক এবং কাস্টমস বা এক্সাইজ বা ভ্যাট সংক্রান্ত ২২৪টি মামলাকে গুরুত্বপূর্ণ মামলার মধ্যে ১০০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বের সরকারি অর্থের সংশ্লেষ বিবেচনায় ৬৫টি মামলাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ মামলা হিসেবে দেখিয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের মামলার নিষ্পত্তি বিলম্বিত হওয়া বিভাগটির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। (জ্যেষ্ঠ সচিব, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ) কেননা মামলার দীর্ঘসূত্রতার সুযোগ নিয়ে যথাসময়ে সরকারি রাজস্ব পরিশোধ না করে নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রয়াস পাচ্ছেন। উচ্চমূল্যের আর্থিক সংশ্লেষ থাকা মামলাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণ করে দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। সচিব, আইন ও বিচার বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
আর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত অতি মূল্যবান পরিত্যক্ত সম্পত্তি সংক্রান্ত ৩৬টি মামলাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
আর বিভাগীয় কমিশনারদের মাধ্যমে ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ১ হাজার ৫৭টি মামলাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৪২৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫০টি, খুলনা বিভাগে ১০০টি, বরিশাল বিভাগে ৭৭টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৫টি সিলেট বিভাগে ৭টি এবং রংপুর বিভাগে ২৮টি মামলা।
সরকারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলার তথ্য সংরক্ষণ ও সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনা সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা গতিশীল করতে ‘স্মার্ট কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ সফটওয়্যার নির্মাণ কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়েও সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এছাড়াও মামলায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে প্রয়োজনীয় জবাবা দেওয়াসহ মামলা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। আইন ও বিচার বিভাগ বেসরকারি আইনজীবী নিয়োগ এবং বেসরকারি আইনজীবীর মধ্যেমে মামলা পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা বা আদেশের খসড়া প্রস্তুত করে কমিটিতে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।