স্বল্প মূলধনি ৮ কোম্পানির শেয়ারে অস্বাভাবিক ক্যাপিটাল গেইন!

বিদায়ী বছরজুড়ে মন্দায় কেটেছে দেশের পুঁজিবাজার। ফ্লোর প্রাইসের কারণে বেশিরভাগ কোম্পানির দর একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে আটকে ছিল। এর মাঝেও কিছু কোম্পানির শেয়ার স্বল্পমেয়াদে উল্লেখযোগ্য ওঠানামা করে। এসব কোম্পানির শেয়ারের ক্যাপিটাল গেইন নিয়ে তিন পর্বের ধারাবাহিকের আজ থাকছে প্রথম পর্ব

সাইমউল্লাহ সবুজ: দেশের সার্বিক অর্থনীতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না পুঁজিবাজার। পিছিয়ে থাকা বাজারটি সদ্য বিদায়ী বছরেও মন্দায় কাটিয়েছে। কৃত্রিমভাবে বাজার ধরে রাখতে অব্যাহত ছিল ফ্লোর প্রাইস। বাজারের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর আটকে ছিল এ নিয়মে। তবে মন্দাবাজারেও স্বল্প মূলধনি ও লোকসানি কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে বছরজুড়ে সক্রিয় ছিল কারসাজি চক্র। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বছরের বিভিন্ন সময়ে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে আট কোম্পানির শেয়ারে সর্বোচ্চ ক্যাপিটাল গেইন হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ক্যাপিটাল গেইন করেছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ, যা ৯৮২ দশমিক ৮২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিবিধ খাতের কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ। বিদায়ী বছরের ১৬ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৯ টাকা ৯০ পয়সা, যা বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের ১২ তারিখে ১০৭ টাকা ২০ পয়সায় পৌঁছায়। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে বেড়েছে ৯৭ টাকা ৩০ পয়সা বা ৯৮২ দশমিক ৮২ শতাংশ।

তথ্যমতে, সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৬ পয়সা এবং কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৮৭ টাকায়। ২০২১-২২ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিলেও তার আগের (২০২০-২১) বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ।

‘বি’ ক্যাটেগরির কোম্পানিটির ১৫০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৯৮ কোটি আট লাখ টাকা। মোট শেয়ারের ৩০ দশমিক ১৩ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৭ দশমিক ০১ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৬২ দশমিক ৮৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

ক্যাপিটাল গেইনের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শেয়ারদর বেড়েছে বিমা খাতের কোম্পানি ট্রাস্ট

ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের। ২০২৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির ১১ মে শেয়ারদর ছিল ১১ টাকা, যা ১২ জুন ৮২ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছায়। মাত্র ১ মাসের ব্যবধানে শেয়ারদর বাড়ে ৭১ টাকা ৫০ পয়সা বা ৬৫০ শতাংশ। তবে উত্থান পরবর্তী শেয়ারদরে স্বাভাবিক লেনদেন অব্যাহত রয়েছে।

তথ্যমতে, ‘এন’ ক্যাটেগরির কোম্পানিটির ১০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা। মোট শেয়ারের ৫১ দশমিক ৩৫ শতাংশ আছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৪৪ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি এমারেল্ড অয়েলের শেয়ারদর সদ্য সমাপ্ত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ২৮ টাকা ৫০ পয়সা ছিল, যা ১২ জুলাই ১৮২ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছায়। এ হিসেবে মাত্র সাড়ে চার মাসের ব্যবধানে শেয়ারদর বাড়ে ১৫৪ টাকা বা ৫৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বছরটিতে সর্বোচ্চ শেয়ারদর বাড়ার মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে কোম্পানিটি।

জুন সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৭৩ পয়সা এবং কোম্পানিটির এনএভিপিএস ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৩৭ পয়সায়। আগের হিসাব বছরে ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিলেও তার আগে ২০১৬ সালে পর কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।

‘বি’ ক্যাটেগরিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির ১০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৫৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের ৩৮ দশমিক ২৬ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৫০ দশমিক ৫৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

সর্বোচ্চ ক্যাপিটাল গেইনের তালিকায় এরপর ছিল কাগজ ও মুদ্রণ খাতের কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড (কেপিপিএল)। কোম্পানিটি বছরের প্রথম ৫ মাস ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার পর শেয়ারটি ৭ মে ৮ টাকা ৯ পয়সা থেকে যাত্রা করে। ১২ ডিসেম্বর শেয়ারদর ৩৩ টাকা ৭০ পয়সায় পৌঁছায়। এ হিসেবে শেয়ারদর বেড়েছে ২৪ টাকা ৮০ পয়সা বা ২৭৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

কাগজ ও মুদ্রণ খাতের কোম্পানিটি ২০১৪ সালে পুঁঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিলেও বাকি বছরগুলোয় পাঁচ শতাংশের বেশি দিতে পারেনি। এর মধ্যে কোম্পানিটি ২০১৪ সালে পাঁচ শতাংশ, ২০১৯ সালে এক শতাংশ আর শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয় ২০২০ সালে। অন্য বছরগুলোয় লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয় কেপিপিএল।

সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাব বছরে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ১০ পয়সা এবং কোম্পানিটির এনএভিপিএস ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৮৬ পয়সায়।

‘বি’ ক্যাটেগরিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির ১০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৭৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের মাত্র ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ আছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১ দশমিক ১১ শতাংশ। বাকি ৫৯ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

বিমা খাতের কোম্পানি ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার ক্যাপিটাল গেইনে পঞ্চম স্থানে ছিল। কোম্পানিটির শেয়ারদর সদ্য সমাপ্ত বছরের ১৬ এপ্রিল ৩৫ টাকা ১০ পয়সা ছিল, যা ২১ সেপ্টেম্বর ১৩২ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছায়। অর্থাৎ বেড়েছে ৯৭ টাকা ৪০ পয়সা বা ২৭৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।

কোম্পানিটি ২০২১-২২ হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। আলোচ্য হিসাববছরে ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৭২ পয়সা এবং এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ৩১ পয়সায়। ২০২১ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।

‘বি’ ক্যাটেগরিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির ১০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা। মোট শেয়ারের ৫২ দশমিক ৬৪ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৩৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি শ্যামপুর সুগার মিলস্ লিমিটেড ক্যাপিটাল গেইনে ষষ্ঠ স্থানে ছিল। কোম্পানিটির শেয়ারদর সদ্য সমাপ্ত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ৬৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে যাত্রা করে, যা ১৬ নভেম্বর ২৩৬ টাকায় পৌঁছায়। এ হিসাবে শেয়ারদর বেড়েছে ১৭২ টাকা ৫০ পয়সা বা ২৭১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

লোকসানে থাকা শ্যামপুর সুগার মিলসের বিনিয়োগকারীদের গত কয়েক বছরে লভ্যাংশ দেয়নি। জুন সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাববছরে শ্যামপুর সুগার মিলসের শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ৪৩ টাকা ৬২ পয়সা এবং এনএভিপিএস ঘাটতি হয় ১ হাজার ২১১ টাকা ২১ পয়সা।

‘জেড’ ক্যাটেগরিতে থাকা কোম্পানিটির ৫০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৫ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের ৫১ শতাংশ আছে সরকারের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৪৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

চামড়া খাতের কোম্পানি লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমিটেড ক্যাপিটাল গেইনে সপ্তম স্থানে রয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ারদর গেল বছরের ১ মার্চ ছিল ৩৯ টাকা, যা ৬ আগস্ট বছরের সর্বোচ্চ ১৩৬ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছায়। বেড়েছে ৯৭ টাকা ৫০ পয়সা বা ২৫০ শতাংশ।

চামড়া খাতের কোম্পানিটি ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৩ হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য দশমিক ৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। আলোচ্য বছরে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের ইপিএস হয়েছে ২৩ পয়সা এবং এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ১৯ পয়সায়।

‘বি’ ক্যাটেগরিতে তালিকাভূক্ত কোম্পানিটির ৭৫ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৪৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের ৩৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩২ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার। বাকি ২৯ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

বিমা খাতের কোম্পানি রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ক্যাপিটাল গেইনে অষ্টম স্থানে রয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ারদর গেল বছরের ৩ জানুয়ারি ৭৬ টাকা ৭০ পয়সা ছিল। তা ৪ জুলাই বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। ওইদিন শেয়ারটি ২৪৭ টাকায় লেনদেন হয়। এ হিসেবে শেয়ারদর বেড়েছে ১৭০ টাকা ৩০ পয়সা বা ২২২ দশমিক ০৩ শতাংশ।

রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্স ২০২১-২২ হিসাববছরের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। আগের আগের বছর ১৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং ২০২০ সালে ১৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ও ২ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করে।

‘এ’ ক্যাটেগরিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির ১০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা। মোট শেয়ারের ৩২ দশমিক ০৭ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বাকি ৫১ দশমিক ৫৩ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০