কয়েক বছর ধরে দেশে বজ্রপাতে অধিক মৃত্যুর বিষয়টি বলা যায় আতঙ্ক তৈরি করেছে। বৈশাখ থেকে পুরো বর্ষা মৌসুমেই এ দুর্যোগ লক্ষ করা যায়। বর্তমানে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর মধ্যে বজ্রপাতের স্থান সবার উপরে। স্যাটেলাইট থেকে নেওয়া ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চ থেকে মে এ তিন মাসে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে। দেশের অন্যান্য অংশেও বজ পাতে হতাহতের ঘটনা কম নয়। অবস্থা দেখে বজ্রপাতকে সরকার ২০১৫ সালেই দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এ থেকে রেহাই পাওয়ার উদ্যোগও লক্ষ করা যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশ, বজ্রপাত কমাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে দশ লাখ তালগাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ গাছ বজ্রপাত-নিরোধী; আবার এর ফল ও রস বিক্রি করে আয় করা যেতে পারে। তালগাছের কাঠ ব্যবহার করা যায় জ্বালানি এবং নৌকা ও ঘর তৈরির উপাদান হিসেবে। জানা যাচ্ছে, এ লক্ষ্যে তালবীজ ও চারা বিতরণ করা হচ্ছে সরকারিভাবে। কোথাও কোথাও তরুণরা এগিয়ে এসেছে স্বেচ্ছায়। বাড়ির আশপাশে ও পথের ধারে তারা তালের চারা রোপণ করছে সারিবদ্ধভাবে। পথের দুপাশে সারিবদ্ধ তালগাছের দৃশ্য মোহনীয়ও বটে। গতকালের শেয়ার বিজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাবনার সাঁথিয়ায় একদিনে দুই লাখ তালবীজ রোপণ করা হয়েছে। যশোরের মনিরামপুরেও উদ্বোধন করা হয়েছে তালবীজ রোপণ কর্মসূচির।
সরকার বজ্রপাতে করণীয় বিষয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে, প্রচারপত্র করছে, বাসাবাড়িতে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড লাগানোর অনুরোধ করছে। গ্রামগঞ্জে অবশ্য তালগাছ ও নারিকেল গাছই এর ভালো বিকল্প। আশার কথা, গ্রামের সাধারণ মানুষ তালবীজ রোপণের উদ্যোগে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে এগিয়ে আসছে।
কেন দেশে বজ্রপাতের প্রকোপ বেড়ে গেল, তার কারণ উদঘাটনেও কাজ করতে হবে। অনেকে বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বজ্রপাত এতটা বেড়েছে। স্থানীয় পর্যায়েও যেভাবে গাছপালা কাটা হচ্ছে, সে হারে তা লাগানো হচ্ছে না। পরিবেশগত বিপর্যয়ে আমাদেরও দায় রয়েছে। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক তহবিল থেকে প্রাপ্ত সহায়তার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে আমাদের নিজ স্বার্থেই।
বজ্রপাতের শিকার বেশিরভাগই মাঠ, হাওর, বিল ও নদীতে কর্মরত খেটে খাওয়া মানুষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী। বজ্রপাতে কোনো পরিবারের এমন কেউ মারা গেলে সেখানে কী অভিঘাত পড়ে, তা সহজেই অনুমেয়। বাস্তবতা হলো, বজ্রপাতের ভয়ে কৃষক মাঠে যাওয়া ছেড়ে দেবে না। রাখাল গরু-মহিষের দেখভাল করতে যাবেই। জেলে বিল বা নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া বন্ধ করবে না। দেশে, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে বজ্রপাত-নিরোধী গাছপালা বাড়িয়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতাও বাড়াতে হবে। স্থানীয় সরকার ও প্রশাসন এ কাজে এগিয়ে আসতে পারে। কী ধরনের ঝড়-বৃষ্টিতে বা তার আগে-পরে বজ্রপাত বেশি ঘটে থাকে, সে বিষয়ে কিছু সাধারণ জ্ঞান সবারই জানা প্রয়োজন। বজ্রপাতের বেলায় তাৎক্ষণিকভাবে কী করতে হবে, সেটি জানা থাকলেও বিপদ এড়ানো কঠিন হবে না।
Add Comment