মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার, রাজনীতিক লে. জেনারেল মীর শওকত আলী ১৯৩৮ সালের ১১ জানুয়ারি ঢাকায় জন্ম গ্রহণ করেন। মীর শওকত আলী প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন ঢাকার মাহুতটুলি ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে। তিনি ১৯৫৩ সালে আরমানিটোলা সরকারি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। এরপর তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। মীর শওকত আলী ১৯৫৮ সালে বিএসসি ডিগ্রি এবং আর্মিতে কমিশন লাভ করেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন রেজিমেন্টে অ্যাডজুট্যান্ট, কোয়ার্টার মাস্টার, কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে এবং সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীতে কাজ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি রংপুর সীমান্তে পাক-ভারত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। শওকত আলী ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কোয়েটা স্টাফ কলেজ থেকে পিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন এবং চট্টগ্রামের ষোলো শহরে ৮-ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মীর শওকত আলী ইউনিটের সঙ্গে চট্টগ্রামে অবস্থানরত ছিলেন। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাক বাহিনীর বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে তিনি ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে বিদ্রোহ করেন এবং রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৩০ মার্চের পর তিনি পুরো বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। মুজিবনগরে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠনের পর মীর শওকত আলী ৫নং সেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। মীর শওকত আলী ৫নং সেক্টরের দায়িত্ব পালনকালে উল্লেখযোগ্য যেসব অপারেশনে নেতৃত্ব দেন সেগুলো হচ্ছে: জৈন্তাপুর আক্রমণ, ছাতক অপারেশন, গোয়াইনঘাটের যুদ্ধ, তাহেরপুর আক্রমণ, রাজাপুর আক্রমণ, বর্নী আক্রমণ, রাজানগর অপারেশন, বনগাঁও আক্রমণ, টেংরাটিলা অপারেশন, সালুটিকার অপারেশন, লামাকাজির অপারেশন, খাদিমনগর আক্রমণ। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে মীর শওকত আলী লে. কর্নেল পদে উন্নীত হন। স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনীর পুনর্গঠনে মীর শওকত আলীর সক্রিয় ভ‚মিকা ছিল। তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড গঠন করে এর ব্রিগেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৫ সালে তিনি অন্যান্য ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে কায়রোতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সফরে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৫ সালে মীর শওকত সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ নিযুক্ত হন। মীর শওকত আলী ১৯৮১ সালের ৯ জুন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মিশর, সুদান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও পর্তুগালে ক‚টনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। মীর শওকত আলী স্বৈরাচারী শাসনের প্রতিবাদে ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রদূতের পদ থেকে অবসর নেন। পরে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন এবং ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে তিনি ঢাকার লালবাগ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১০ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় তার মৃত্যু হয়। [সংগৃহীত]