সন্তানের চিকিৎসার জন্য পাওনা টাকা চাওয়ায় নৃশংসভাবে হত্যা!

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-লক্ষীপুর রুটে চলাচলকারী আন্তঃজেলা গণপরিবহন ‘ঢাকা এক্সপ্রেস’ পরিবহনের টিকিট বিক্রি কর্মী ফারুক। একই পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার নিজাম উদ্দিন। সন্তান অসুস্থতার কারণে নিজামের কাছে পাওনা টাকার জন্য চাপ দেন ফারুক। এর জের ধরেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ফারুককে। হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এই তথ্য জানায়।

গ্রেপ্তাররা হলেনÑমূল পরিকল্পনাকারী নিজাম উদ্দিন, মো. সোহাগ, জহিরুল ইসলাম, রনি হোসেন ও মো. বাদশা। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহƒত স্ক্রু ড্রাইভার ও লোহার রড উদ্ধার করা হয়।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র?্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, নিজাম ও ভুক্তভোগী ফারুখ হোসেন একসঙ্গে টঙ্গীর চেরাগআলী এলাকায় ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনের কাউন্টারে কাজ করত। ৫ থেকে ৬ বছরের পরিচয়ের সুবাদে তাদের মধ্যে প্রায়ই টাকা লেনদেন হতো। নিহত ফারুক তার পাওনা টাকা পেতে চাপ সৃষ্টি করায় নিজাম তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে।

গত ৮ জানুয়ারি নিজাম উদ্দিনের কাছে ফারুক পাওনা টাকা চাইলে কথা কাটাকাটি হয়। ফারুকের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে নিজাম তাকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশাসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওইদিনই রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টায় নিজাম মোবাইলে ফোন করে ফারুককে টাকা নেয়ার জন্য কাউন্টারে আসতে বলে। পরবর্তী সময় ফারুক টাকা নিতে কাউন্টারে এলে নিজামের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশা ভিকটিমকে মারধর করে বাসে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঢাকা এক্সপ্রেসের একটি খালি বাসে ফারুক হোসেনকে তুলে নিয়ে পূর্বাচল ৩০০ ফিট এলাকায় যায় নিজাম। সেখানে গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ফারুককে গুরুতর আঘাত করে। এ সময় বাদশাহ বাসের টুলবক্স থেকে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে ফারুকের এক চোখ উপড়ে ফেলে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর ৩০০ ফিট থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ের পাশে রঘুরামপুর এলাকার রাস্তার পাশে ফারুকের লাশটি ফেলে বাসটি নিয়ে ল²ীপুরের উদ্দেশে পালিয়ে যায়। পরে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায় সবাই।

৯ জানুয়ারি সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে রাস্তার পাশে একটি চোখ উপড়ানো অজ্ঞাতনামা মৃতদেহ দেখে স্থানীয় লোকজন কাছের র‌্যাব ক্যাম্পে জানায়। পরে র‌্যাব-১ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহের সঙ্গে থাকা মানিব্যাগে বিভিন্ন নথিপত্র এবং ওআইভিএস (অনসাইট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম) ডিভাইসের মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা মৃতদেহটির নাম ও পরিচয় শনাক্ত করে।

পরবর্তীতে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ১১ জানুয়ারি রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র?্যাব-১১ এর সহায়তায় র?্যাব-১ এর যৌথ আভিযানিক দল রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুরের টঙ্গী এবং ল²ীপুরের রায়পুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে।

ফারুক স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবার নিয়ে রাজধানীর তুরাগের বাউনিয়া এলাকায় বসবাস করতেন। ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনের টিকিট কাউন্টার ম্যান হিসেবে কাজ করতেন তিনি।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত নিজাম উদ্দিন ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে ৭ বছর ধরে কাউন্টার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে। তার বিরুদ্ধে ল²ীপুরের সদর থানায়ও ১টি হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার বাদশা গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি গ্রিল ওয়ার্কশপে কাজ করত। তার সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত নিজাম উদ্দিন ও রনির পূর্বপরিচয় সূত্রে সখ্য ছিল। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত রনি ঢাকা এক্সপ্রেস ও লাবিবা ক্লাসিক পরিবহনের টঙ্গী স্টেশনের কাউন্টার মালিক। সোহাগ ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে ১৭ বছর ধরে সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি করছিল। তার বিরুদ্ধেও ঝালকাঠি, রাজাপুর থানায় মারামারি সংক্রান্ত ১টি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার জহিরুল ইসলাম ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে ৪ বছর ধরে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি করছিল। তার বিরুদ্ধে লক্ষীপুরের সদর থানায় ১টি মামলা রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০