সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ সময়মতো পরিশোধ না করায় ২০২৩ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৭৮৭ মামলা করে। প্রতি বছর খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে হাজারের অধিক মামলা করে। মামলার তালিকায় আছে চট্টগ্রামের একাধিক শীর্ষ ব্যবসায়ীসহ পাইকারি দোকানদার। কিন্তু পাওনা আদায়ের বিষয়ে চিন্তিত অধিকাংশ ব্যাংক ব্যবস্থাপকরা।
ব্যাংক ও অর্থঋণ আদালতের সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের অনেক ব্যবসায়ী ভোজ্যতেল আমদানিকারক, আবাসন নির্মাতা, পোশাক উৎপাদন ও জাহাজ ভাঙা শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের পাইকারি পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ নিয়ে সময়মতো পরিশোধ করতে না পেরে খেলাপি হয়ে পড়ে। আর এসব খেলাপি ঋণ আদায়ে ২০২৩ সালে চট্টগ্রামের একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ৭০০টি মামলা করে। মামলার রেজিস্টার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, খেলাপি পাওনা আদায়ে সবচেয়ে বেশি মামলা করে ব্র্যাক ব্যাংক। পাশাপাশি লংকাবাংলা, আইডিএলসি, স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, রূপালী, ওয়ান, ইস্টার্ন, সাউথ-ইস্ট ব্যাংক, ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, আইএফডিসি, জনতা, বেসিক, উত্তরা, এবি, এনসিসি, মার্কেন্টাইল, ইউসিবিএল ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান একাধিক মামলা করেছে। এছাড়া বর্তমানে চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে এ-সংক্রান্ত মামলা রয়েছে চার হাজার ৮০০। এর মধ্যে অর্থঋণ মামলার সংখ্যা এক হাজার ৮০০। বাকিগুলো জারি মামলা ও মিস মামলা।
মামলার বাদী ব্যাংকগুলোর একাধিক শাখা ব্যবস্থাপক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খেলাপি ঋণ আদায়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো যোগাযোগ ও নির্দিষ্ট সময় অনুসরণ করে না, সেক্ষেত্রে আমরা মামলা করছি। কিন্তু এসব পাওনা আদায়ে খুব চিন্তিত আছি।’
অপরদিকে ব্যাংক, ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন ও আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংকঋণের সুদ বেশি, টানা লোকসান, ব্যাংকের দায় পরিশোধে ব্যর্থতা ও আন্তর্জাতিক বাজারে ধারাবাহিক দরপতনের কারণে ব্যবসায়ীদের এমন অবস্থা। এ অবস্থায় ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতা করলে এ ঋণ পরিশোধ করা যাবে।
এ বিষয়ে মোস্তফা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান শফিক উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা অনেক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছি। আমরা ব্যবসা করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে চাই। খেলাপি ঋণ কাটিয়ে ওঠার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত ব্যবসায়ীদের দীর্ঘমেয়াদি সুদ আরোপ স্থগিত করে দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি নতুনভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করতে হবে।