ড. শামসুল আলম পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব)। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগে ১৯৭৪ সালে। ১৯৮৩ সালে তিনি ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি এবং ১৯৯১ সালে যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করেন। অধ্যাপনা জীবনে ড. আলম জার্মানির হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও নেদারল্যান্ডসের ভাগিনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রায় পাঁচ বছর কাজ করেছেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায়। সরকারের আমন্ত্রণে ৩৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনশেষে ২০০৯ সালে যোগ দেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য পদে। তার সরাসরি ব্যবস্থাপনা ও অংশগ্রহণে দেশের প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১, ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সামাজিক কৌশলপত্র প্রণীত হয়েছে। সম্প্রতি এসেছিলেন শেয়ার বিজ কার্যালয়ে। একান্ত আলাপচারিতায় জানিয়েছেন দেশের উন্নয়নের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্ডা এমডিজি ও এসডিজির নানা দিক। আলোচনার অংশবিশেষ তুলে ধরেছেন মাসুম বিল্লাহ
শেয়ার বিজ: গত আট বছরে জিইডির তত্ববধানে দুটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এমডিজি বাস্তবায়নের ওপর ১৫টি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। নতুন বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডা হিসেবে আবিভর্‚ত হয়েছে এসডিজি। পাশাপাশি ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এসব বিষয়ে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করছি।
ড. শামসুল আলম: বর্তমানে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এর আগে ছিল প্রথম প্রজন্মের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্ডা সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্ট (এমডিজি)। এর একটি ইতিহাস আছে। প্রথমে ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনিরোতে আর্থ সামিট হয়। সেখানে জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় এজেন্ডা ২১ উপস্থাপন করা হয় এবং তা গৃহীত হয়। ওই এজেন্ডায় মূলত জলবায়ু অভিযোজনের বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা কীভাবে করা সম্ভব হবে সে বিষয়েই বিশেষ গুরুত্ব ছিল। তবে কেবল জলবায়ু অভিযোজন হলেই হবে না, এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নও জরুরি। একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অসঙ্গতিও দূর করতে হবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বনেতারা আবার আলোচনায় বসলেন ১৯৯৭ সালে। সেটিকে রিও প্লাস-৫ সম্মেলন বলা হয়। ওই সম্মেলনে এসব বিষয় আলোচনা হলো ঠিকই, কিন্তু কী ধরনের উন্নয়ন এজেন্ডা গ্রহণ করা হবে, সে বিষয়ে চ‚ড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হলো না। ওই দুটি সম্মেলনের ভিত্তিতে সর্বশেষ যা এলো তার মধ্যে একটি হলো জলবার্য়ু পরিবর্তনের অভিঘাত কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, আরেকটি হলো সামাজিক উন্নয়ন ও জেন্ডার সমতা কীভাবে আনয়ন করা যায়।
এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য উন্নয়ন এজেন্ডা নির্ধারণের কাজ শুরু করে জাতিসংঘ। সর্বশেষ ২০০০ সালে জাতিসংঘে যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে বিশ্বনেতারা সম্মিলিতভাবে একটি ঘোষণা দিলেন, যেটি মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট ডিক্লারেশন হিসেবে বিবেচিত। ওই ঘোষণায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষরও রয়েছে। ওই ঘোষণায় বলা হলো, একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডা প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলার পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচন, জেন্ডার সমতায়ন এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়ন বিষয়টি থাকবে। এটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ওই ঘোষণার বিপরীতে একটি উন্নয়ন এজেন্ডা নির্ধারণ করা হলো। তা হলো মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস (এমডিজি)। এতে আটটি অভীষ্ট নির্ধারণ করা হলো। আটটি অভীষ্টের বর্ণনায় ১৮টি লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হলো। পরে এ লক্ষ্যমাত্রা ২১টিতে উন্নীত হয়। আর এ লক্ষ্যগুলোর অগ্রগতি পরিমাপের জন্য ৪৮টি সূচক দেওয়া হয়েছিল। পরে তা ৬০টিতে উন্নীত হয়। পূর্ণমাত্রার (Full Blown) এমডিজিতে ২১টি লক্ষ্যমাত্রা ও ৬০টি সূচক নির্ধারণ করা হয়। আর এটির বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয় ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল। এ সময়ে যে পরিবর্তন হবে, তা পরিমাপ করা হবে ১৯৯০-৯১ সালের ভিত্তিবছরের ভিত্তিতে। ১৯৯০-৯১ সালকে ভিত্তি বছর ধরারও একটি যৌক্তিকতা ছিল। কারণ ওই সময়ে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ উম্মুক্ত অর্থনীতি (Liberalized Economy) চালু করে। এমনকি চীনও এ সময় থেকে উম্মুক্ত হতে থাকে। ২০০৩ সালে এমডিজির দলিলটি হাতে আসে। যদিও এর বাস্তবায়ন মেয়াদ শুরু হয়ে যায় ২০০১ সালেই। আটটি অভীষ্টের মধ্যে বেশিরভাগই সামাজিক খাতের। এর মধ্যে ছিল দারিদ্র্য, শিক্ষা, জেন্ডার, স্বাস্থ্য, জলবায়ু অভিযোজন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। এগুলোই ছিল এমডিজির প্রধান বিষয়।
২০০৯ সালে জিইডিতে যোগ দেওয়ার পর ২০০৩ সাল থেকে ওই সময় পর্যন্ত আমি তিনটি প্রতিবেদন পেয়েছিলাম। এর একটি হলো এমডিজি ফাইন্যান্সিং, অর্থাৎ কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে এমডিজি অর্জনে। আর দুটি ছিল অগ্রগতি প্রতিবেদন। ২০০৯ সালে তখন এমডিজি যুগ চলছিল। আমাকে মূলত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের। তবে আমি রূপকল্প ২০২১-এর ভিত্তিতে ১০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়নের পর সেটিকে সামনে রেখে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নে হাত দিয়েছি। ওই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দুটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল। মূলত ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই এমডিজির অনেক লক্ষ্য অর্জিত হয়েছিল। কারণ এমডিজিতে যেসব অভীষ্ট নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেগুলো ছিল সামাজিক খাতনির্ভর। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়ও সামাজিক খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, যে কারণে এমডিজির অর্জনটা ভালো হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সময়ে এমডিজি বিষয়ে প্রণীত ১৫টি মূল্যায়ন প্রতিবেদন এই সাফল্য বিশ্ববাসীকে জানাতে অত্যন্ত সহায়ক হয়েছে।
২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এমডিজিসহ সর্বমোট ৫৫টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জিইডি। জিইডি হলো সরকারের দারিদ্র্য, এমডিজি ও এসডিজি-বিষয়ক ফোকাল পয়েন্ট। যদিও এসডিজি অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে একটি উইং খোলা হয়েছে এবং একজন প্রধান সমন্বয়ক সেটার দায়িত্বে আছেন। তবে এটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে জিইডি।
এমডিজির ক্ষেত্রে ২১টি লক্ষ্যের মধ্যে ১৮টিই আমরা অর্জন করেছি। আর তিনটিতে পিছিয়ে আছি। সেই তিনটির মধ্যে একটি হলো প্রশিক্ষিত দাইয়ের (ধাত্রী) মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো ৫০ শতাংশে উন্নীতকরণ। এমডিজি যখন শুরু হয়েছিল তখন এর হার ছিল মাত্র পাঁচ শতাংশ। এমডিজির মেয়াদশেষে এটি ৪৩ শতাংশে উন্নীত হয়। পাঁচ থেকে ৪৩ শতাংশে উন্নীত করাও বিরাট ব্যাপার। তবে এমডিজির লক্ষ্য থেকে সেটি কম।
জলবায়ুর ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল, দেশের মোট ভুমির ২০ শতাংশ বনভুমি থাকতে হবে। এমডিজি শুরুর সময় এটি ছিল ৯ শতাংশ। সেটি ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এক্ষেত্রে অর্জন ভালো। তবে এমডিজির লক্ষ্যের চেয়ে কম। শিশু ও নবজাতক মৃত্যুহার কমানোর ক্ষেত্রেও আমাদের অর্জন ভালো। দারিদ্র্য নির্ধারিত সময়ের তিন বছর আগেই অর্ধেকে নেমে এসেছে। কথা ছিল ১৯৯০-৯১ সালে যা দারিদ্র্য ছিল, ২০১৫ সালে তার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। ওই সময়ে আমাদের দারিদ্র্য ছিল ৫৭ শতাংশ। এর অর্ধেক সাড়ে ২৮ শতাংশ, যা ২০১২ সালেই আমরা অর্জন করতে পেরেছি। ২০১২ সালে আমাদের সাধারণ দারিদ্র্য হার ২৯ শতাংশে নেমে আসে। অর্থাৎ জাতিসংঘের ঘোষিত সময়ের তিন বছর আগেই আমরা দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্য অর্জন করেছি। শিশুমৃত্যু হ্রাস করার লক্ষ্য পুরোটাই অর্জিত হয়েছে। জেন্ডার সমতায়নের ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে জেন্ডার সমতা আনতে হবে। আমরা তা অর্জন করতে পেরেছি। এমডিজির এসব লক্ষ্য অর্জনে সফলতার জন্য মোট ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ।
ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও এমডিজির মেয়াদ একই সঙ্গে শেষ হলো। এর আগেই টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলো (এসডিজি) প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। আবার একই সময়ে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নেরও কাজ শুরু করি আমরা। এসডিজি প্রণয়নের আগে ২০১২ সালে রিও প্লাস-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ১২ হাজার প্রতিনিধি রিও ডি জেনিরোতে জড়ো হলেন। আমি নিজেও ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে ১৬৯টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরাও ছিলেন। এমডিজি-পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার বিষয়ে অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন মত দিলেন। অনেকে বললেন, পরবর্তী এজেন্ডা হবে এমডিজি প্লাস। অন্যান্য নামও প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেখানে ‘ফিউচার উই ওয়ান্ট’ শীর্ষক একটি ঘোষণা এলো। বলা হলো, এটিতে তিনটি বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে। এমডিজিতে ছিল সামাজিক আর জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু। আর এটিতে জলবায়ু, সামাজিক ও অর্থনৈতিক তিনটি বিষয়কেই সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। এ তিনটিকে স্তম্ভ ধরে পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা প্রণয়ন করা হবে। আর এ তিনটির উন্নয়ন সমানতালে হলে তবেই আমরা সেটিকে টেকসই উন্নয়ন বলবো। কারণ অনেক দেশেই প্রবৃদ্ধি টেকসই হয়নি। সাত-আট শতাংশ থেকে প্রবৃদ্ধি এক-দুই শতাংশে নেমে আসার নজির রয়েছে। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় এমনটি হয়েছে। আবার অনেক ধনী দেশও গরিব হয়েছে, যেমন লিবিয়া। দেশটি হয়তো সংঘাতের কারণে দরিদ্র হয়েছে। যে কারণেই হোক, তাদের উন্নয়ন টেকসই হয়নি। চীন ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থেকে আবার সাত শতাংশে নেমে এসেছে। ভারত সাত শতাংশ থেকে সাড়ে তিন-চার শতাংশে নেমে এসেছিল। আবার অনেক দেশে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিও হয়েছে। এই যে একটি দেশের ধনী হওয়া থেকে আবার দরিদ্র হয়ে পড়া এটা কীভাবে রোধ করা যায়, সেটিই ছিল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য থেকেই এসডিজির উদ্ভব, অর্থাৎ দারিদ্র্য একবার কমলে তা আর বাড়বে না। প্রবৃদ্ধির এত ওঠানামা থাকবে না, যদি টেকসই উন্নয়ন হয়।
সেজন্য রিও প্লাস-২০-তে ওই ঘোষণাটি এলো যে, উন্নয়নটাকে স্থিতিশীল করতে হবে। সেজন্য জলবায়ুর অভিঘাতগুলো মোকাবিলা করতে হবে। আর সামাজিক অগ্রগতিও অক্ষুন্ন রাখতে হবে। সেজন্য সামাজিক বৈষম্য ও আয়বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। ২০১২ সালে এ সিদ্ধান্ত হলো। এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ২০১৩ সালে জাতিসংঘ একটি কমিটি করে দেয়, যার নাম ওপেন ওয়ার্কিং গ্রুপ। ১৬৯টি দেশ সেই ওপেন ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য হলো। এর সঙ্গে জাতিসংঘেরও প্রতিনিধি যুক্ত হলো। তাদের দায়িত্ব দেওয়া হলো এসডিজির খসড়া প্রণয়ন করার জন্য। এ কাজে ওই কমিটি ৮০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানালো, যারা এমডিজিতে ভালো করেছে। প্রথম যে ১৮টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। এসডিজির খসড়া প্রণয়নে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য সরকার জিইডির সদস্যকে প্রধান করে ১২ সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়। সেই কমিটি ২০১২ সালের শেষের দিকে কাজ শুরু করে। এ দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে সংলাপ শুরু করি। নাগরিক শ্রেণী, বিশেষজ্ঞ, মিডিয়া, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা একটি খসড়া প্রণয়ন করলাম। সেখানে আমরা ১১টি অভীষ্টের বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি। এগুলোর মধ্যে ৫৮টি লক্ষ্যমাত্রা সন্নিবেশ করা হলো। এ অভীষ্টগুলোর মধ্যে সামাজিক সাম্য, জেন্ডার সমতা, শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর ২৪১টি সূচক দেওয়া হলো সেগুলো পরিমাপের জন্য। সব মিলে পূর্ণাঙ্গ একটি প্রস্তাব আমরা জাতিসংঘে পাঠালাম। বাংলাদেশ এসডিজির জন্য যে সভায় খসড়া চুড়ান্ত করা হয়, সে সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি ছিলেন।
২০১৩ সালের ৬ জুন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওপেন ওয়ার্কিং গ্রুপে ওই প্রস্তাব পাঠানো হয়। আমাদের পাঠানো ১১টি অভীষ্টের প্রস্তাবের মধ্যে ১০টিই এসডিজিতে প্রতিফলিত হয়েছে। আর যে একটি বাকি ছিল সেটি লক্ষ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তার মানে আমরা বিশ্বের চাহিদার সঙ্গে আমাদের চাহিদার তাল মেলাতে পেরেছি বলেই আমাদের প্রস্তাবগুলো গৃহীত হয়েছে।
শেয়ার বিজ: এসডিজি বাস্তবায়নে কী করছেন? সে বিষয়ে কিছু বলুন।
২০১৫ সালের জুনে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয়। ওই বছরের মার্চে আমরা সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করি। তখন আমরা বিবেচনায় নিই যে, পরিচালনা দলিলটি এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে, যাতে এসডিজির অভীষ্টগুলো সেখানে প্রতিফলিত হয়। বিশেষ করে আমাদের প্রস্তাবগুলো আমরা অন্তর্ভুক্ত করবো। এরই মধ্যে জাতিসংঘ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নাগরিকদের মতামত নেওয়ার জন্য এসডিজির খসড়াটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। ৮৫ লাখ মানুষ এ খসড়ার ওপর মতামত দিয়েছে। এসব বিচার-বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘ একটি চ‚ড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করে, যেটি ২০১৫ সালের জুলাইয়ে আমরা হাতে পাই। এটিতে ১৬৯টি লক্ষ্য সন্নিবেশিত ছিল। তখন আমাদের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে। এসডিজির লক্ষ্যগুলোর মধ্যে যেগুলো আমাদের প্রয়োজন, সেগুলো আমাদের জাতীয় পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্যে ১৩টি থিমেটিক এরিয়ায় সেগুলো ভাগ করলাম। এক্ষেত্রে এসডিজির লক্ষ্যগুলো জাতীয় পরিকল্পনায় যেভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে, এমডিজির ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। তারপরও এমডিজিতে অর্জন ভালো ছিল। কারণ স্বতঃস্ফ‚র্তভাবেই আমরা সংবিধানের চেতনার আলোকে সেগুলো আমাদের পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করেছি। সেদিক থেকে এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের প্রস্তুতিটা খুবই ভালো। আর এসডিজি অর্জনের মাধ্যমেই বাংলাদেশ উন্নত দেশের পথে ধাবিত হতে সক্ষম হবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুমোদিত হয় ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর। এর আগের মাসে ২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অনুমোদন পায় এসডিজি। ওই অধিবেশনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছিলেন। কাছাকাছি সময়ে আমাদের জাতীয় পরিকল্পনা ও বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডা অনুমোদন পায়। ফলে জাতীয় পরিকল্পনা দলিলে এসডিজির লক্ষ্যগুলো অন্তর্ভুক্ত করা সহজ হয়েছে।
২০১৫ সালের নভেম্বরে এডিজি অর্জনের কৌশল নির্ধারণে তৎকালীন মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী একটি কমিটি করে দেন, যেটির নাম দেওয়া হয় ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড মনিটরিং কমিটি ফর এসডিজিস। ওই কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে রাখা হলো জিইডিকে। কমিটির সদস্য হলেন ২০টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব। পরে এসডিজির মুখ্য সমন্বয়কের একটি পদ সৃষ্টি করা হলো। তৎকালীন মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদের দায়িত্বশেষে তিনি এসডিজির মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্ব নেন। বর্তমানে তিনি এ দায়িত্বে আছেন।
সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে অঙ্গীকার করা হলো, এসডিজি বাস্তবায়নে আমরা পূর্ণমাত্রায় এগিয়ে যাবো। সে লক্ষ্যে আমরা সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে ২২টি মন্ত্রণালয়ের সর্বপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ব্যক্তিখাতকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া থিংক ট্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছি। বিশেষভাবে মিডিয়ার সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে। জাতীয় সচেতনতা সৃষ্টির জন্য যা যা করা দরকার, আমরা তা করেছি।
আর এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যেটাকে আমরা বলছি এসডিজি ম্যাপিং। অর্থাৎ সরকারের কোন দফতর এসডিজির কোন লক্ষ্যটি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেবে, তা নির্দিষ্ট করা হয়েছে এ ম্যাপিংয়ে। বাংলাদেশই প্রথম এ ম্যাপিং প্রণয়ন করেছে।
এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি পরিমাপের জন্য জাতিসংঘ ২৩১টি সূচক নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখলাম এ সূচকগুলোর মধ্যে আমাদের কাছে ৭০টির তথ্য আছে মাত্র। ১০৮টির আংশিক তথ্য আছে। আর ৬৩টির কোনো তথ্যই নেই আমাদের কাছে, অর্থাৎ বাংলাদেশ সেগুলো সংগ্রহ করে না। এভাবে সুনির্দিষ্টভাবে একটি বই প্রণয়ন করে সেখানে কোনটির তথ্য আছে আর কোনটির নেই, তা চিহ্নিত করলাম। বইটি আমরা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি এবং অনুরোধ করেছি প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে।
এরপর আমরা যেটা করেছি তা হলো এসডিজির অর্থায়নের রূপরেখা প্রণয়ন। এসডিজি একটি বিশাল ও দ্বৈততা-সম্বলিত জটিল উন্নয়ন দলিল। এমডিজিতে যেখানে মাত্র আটটি অভীষ্ট ছিল, এখানে তা ১৭টিতে উন্নীত হলো। এমডিজিতে লক্ষ্য ছিল মাত্র ২১টি। এটিতে লক্ষ্য ১৬৯টি। আবার অনেকগুলো লক্ষ্যের মধ্যে উপ-লক্ষ্য (ঝঁন ঞধৎমবঃং) রয়েছে। সব মিলে লক্ষ্য দুই শতাধিকের ওপর হবে। আমরা দেখলাম এটি অর্জন আমাদের জন্য একটি অতিরিক্ত কাজ। আমাদের জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যই অনেক কার্যক্রম হাতে নিতে হচ্ছে। আর এটি অর্জনে আরও কিছু অতিরিক্ত কাজ করতে হবে। আমরাই প্রথম বিশ্লেষাত্মকভাবে সমৃদ্ধ একটি অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করে দেখালাম, এখানে অনেক দ্বৈততা রয়েছে, যেমন ২০১৫ সালে যে দারিদ্র্য ছিল ২০৩০ সালে তা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। আবার বলা হচ্ছে, ক্ষুধা থাকতে পারবে না। এখানে দ্বৈততা রয়েছে। যিনি দরিদ্র, তিনিই তো ক্ষুধার্ত। পুরো পেট খেতে পারলে তো তাকে দরিদ্র বলা যায় না। আবার সুস্বাস্থ্যের কথা বলা হচ্ছে। যে ভালো খেতে পারে, তার তো পুষ্টিহীনতার কোনো কারণ নেই। সুতরাং এ বিষয়টি দারিদ্র্য নিরসনের সঙ্গে সম্পর্কিত। আবার পূর্ণ কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছে। কর্মসংস্থান থাকলে তো আর দারিদ্র্যও থাকে না। এসব বিষয় বিবেচনায় দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রেই দ্বৈততা বা আংশিক দ্বৈততা রয়েছে। তাই দ্বৈততা আছে যেসব ক্ষেত্রে সেগুলো পরিহার করা হয়েছে, অর্থাৎ একটি লক্ষ্য দিয়ে যদি অন্য একটি পূরণ হয়ে যায়, তাহলে দ্বিতীয়টি আর গণনায় ধরা হয়নি। এসব বিবেচনায় নিয়ে এসডিজির অর্থায়নের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, এসডিজি অর্জনে ৯২৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত অর্থ লাগবে বাংলাদেশের জন্য। এ অর্থ প্রয়োজন হবে ২০১৩ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য। দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদদের নিয়ে এই অর্থায়ন কৌশল বারবার বিশ্লেষণ করে প্রকাশ করেছি। কিন্তু একটি জাতীয় দৈনিকে বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা জিইডির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, এসডিজি বাস্তবায়নে যে অর্থ ব্যয় হবে তা দিয়ে এক হাজার ৮০০ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। তথ্যটি সঠিক নয়। কারণ পদ্মা সেতুর ব্যয় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে ৯২৮ বিলিয়ন ডলারে ২৬৫টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। আর সব টাকা দিয়েই কেবল পদ্মা সেতু তৈরি হবে, এটা অদ্ভুত চিন্তা বা বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রয়াস।
এসডিজি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্ডা হলেও তা বাস্তবায়ন করা হবে আমাদের নিজস্ব কৌশলেই। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে এসডিজি অর্জন করা হবে। সে হিসাবে ২০৩০ সাল নাগাদ আমাদের তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা লাগবে এসডিজি অর্জনে। এরই মধ্যে এসডিজি অর্জনের জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের বিস্তারিত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সব মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনা আমাদের হাতে এসেছে। শিগগিরই এ কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা সম্ভব হবে। এটি করা হলে একটি মৌলিক উদ্ভাবনী কাজ সম্পন্ন হবে। এসডিজি আমাদের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি আন্তর্জাতিক দলিল। সেজন্য এটির বাস্তবায়নেও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি খুব নিষ্ঠার সঙ্গে। আমরা এটি বাস্তবায়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করবো এ কারণে যে, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার পথে এসডিজি অর্জন সার্বিক সহায়ক ভ‚মিকা রাখতে পারবে। উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে এসডিজি একটি মই হিসেবে কাজ করবে।
এসডিজি অর্জনে উপাত্তের সহজলভ্যতা কতটা জরুরি এমন প্রশ্নের জবাবে ড. শামসুল আলম বলেন, কেবল এসডিজি নয়, যে কোনো উন্নয়নের জন্য উপাত্তের সহজলভ্যতা একান্ত অপরিহার্য। এটা না থাকলে রাষ্ট্রের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আসে না বলে আমি মনে করি। তাই সরকার কী ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে তা জনগণকে জানানো উচিত। তথ্য নির্ভরযোগ্য হতে হবে।
এসডিজিতে গণতন্ত্রকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. শামসুল আলম বলেন, গণতন্ত্র ছাড়া কোনো উন্নয়ন টেকসই হয় না। বহুদেশে গণতন্ত্র না থাকার কারণে তাদের অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্য তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মিসর, লিবিয়া, তিউনিসিয়া ও সিরিয়ায় অস্থিরতা তাই প্রমাণ করে। এতে বোঝা যায়, কোনো দেশ ধনী হলেও কোনো লাভ হয় না, যদি সেখানে গণতন্ত্র না থাকে। কাজেই গণতন্ত্র অপরিহার্য। এসডিজির ১৬তম অভীষ্টে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। এই অন্তর্ভুক্তির মধ্যে ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, শিশু-যুবা সবাইকেই উন্নয়নের আওতায় আনতে হবে, যাতে কেউ বাদ না পড়ে। এটিই মূলত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। আর সব স্তরে জবাবদিহিমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে যতদিন না আমাদের আমলাতন্ত্র পূর্ণ দায়িত্বশীল, সক্রিয় ও দেশপ্রেমমূলক ভ‚মিকা পালন করতে না পারবে, ততদিন এসব কার্যকর করা কঠিন। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, বেলজিয়ামের কথা। একটি ছোট দেশ, কিন্তু তাদের মধ্যে বিবাদ আছে। উত্তরাংশের ফ্লান্ডার্স জনগোষ্ঠী স্বাধীন হয়ে যেতে চায়, আর দক্ষিণাংশ ফ্রেঞ্চ ভাষাভাষীÑতারাও উত্তরাংশের ডাচ্ ভাষাভাষীদের পছন্দ করে না। বহুদিন ধরেই তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের কারণে গত নির্বাচনের পর তারা সরকার গঠন করতে পারছিল না। ১৩ মাস কোনো সরকারই গঠন করা যায়নি, কিন্তু সেজন্য দেশটিতে কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়নি। কোনো ট্রেন বিলম্বে আসেনি, একটি স্কুল বন্ধ হয়নি, কোনো লুটতরাজ হয়নি; কিন্তু আমাদের দেশে এক সপ্তাহ সরকারে না থাকলে কয়টা দোকান অক্ষত থাকবে? বেলজিয়ামে এটা সম্ভব হয়েছে দায়িত্বশীল আমলাতন্ত্রের কার্যকারিতার কারণে। সবাই তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেছে। এটিই প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষ। তবে এর জন্য প্রত্যেক নাগরিককেই দায়িত্ব নিতে হবে, সক্রিয় দেশপ্রেমিকের ভ‚মিকা পালন করতে হবে।
ভিশন ২০৪১ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ছিল ভিশন ২০২১। এখন দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ভিশন ২০৪১ প্রণয়নের কাজ চলছে। পাঁচটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে এ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। ভিশন ২০৪১-এর রূপকাঠামো প্রণয়ন করা হয়েছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের অনুমতিসাপেক্ষে এ প্রেক্ষিত পরিকল্পনার খসড়া চ‚ড়ান্ত করতে পারবো। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা পূর্ণাঙ্গ রূপকল্পটি সরকারের হাতে তুলে দিতে পারবো বলে আশা করছি। তারপর সরকার এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে।
ভিশন ২০৪১-এ একটি স্পষ্ট রূপকাঠামো থাকবে। ২০৪১ সালে আমরা কোন স্থানে অবস্থান করবো তা পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করা হবে। দারিদ্র্য থাকবে না, ক্ষুধা থাকবে না, কর্মসংস্থানের রূপ কী হবে এসব বিষয় সার্বিকভাবে সেখানে উপস্থাপন করা হবে। ভিশন ২০৪১ প্রণয়নের জন্য ১৬টি ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার বা গবেষণাপত্র তৈরির কাজ চলছে। এ কাজ সম্পন্ন করার জন্য দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই ব্যাকগ্রাউন্ড পেপারগুলোর ভিত্তিতে আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করবো। এরই মধ্যে সেগুলো আমাদের হাতে আসতে শুরু করেছে।
শেয়ার বিজ: বিস্তৃত, তথ্যবহুল ও খোলামেলা আলোচনার জন্য এবং আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে সশ্রদ্ধ ধন্যবাদ।
Add Comment