আবদুর রহিম, নারায়ণগঞ্জ: গেল কয়েক মাস আগে থেকে নারায়ণগঞ্জে গ্যাসের চাপ কম থাকলেও, গত কয়েকদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে তীব্র গ্যাস দেখা দিয়েছে। গ্যাসের সংকট দেখা দেয়ায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা তাদের প্রতিষ্ঠান নিয়ে অজানা শঙ্কায় ভুগছেন। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে মালিক, শ্রমিকদের মধ্যে। সম্প্রতি বিকেএমইএর এক সভায় ব্যবসায়ী নেতারা গ্যাসের সংকট নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের মতে, গ্যাসের সমস্যার সমাধান না হলে হুমকির মুখে পড়বে পোশাক খাত।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের নিটওয়্যার শিল্পের বড় একটি অংশ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বিসিক এলাকায় অবস্থিত। এছাড়া ছোট, বড় প্রায় সাড়ে ৪শ ডাইং রয়েছে নারায়ণগঞ্জে। হঠাৎ করে গ্যাসের তীব্র সংকটে মুখ থুবড়ে পড়েছে রপ্তানিমুখী এসব প্রতিষ্ঠানা। শুধু শিল্পপ্রতিষ্ঠানই মুখ থুবড়ে পড়েনি। আবাসিক এলাকায়ও তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। দিনের বেলায় গ্যাস পাচ্ছে না গৃহিণীরা। গভীর রাতঅবধি অপেক্ষায় থেকে রান্নার কাজ করতে হচ্ছে তাদের। তবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত এ সমস্যার সমাধানের। তবে কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জোর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই সম্প্রতি গ্যাসের সংকটে কোনো রকমে চলছে। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের একাধিক ইউনিট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে রপ্তানি আয়ও মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের দাবি এ অবস্থা চলতে থাকলে বিদেশি ক্রেতারাও এক সময় মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।
সম্প্রতি, বিকেএমইএ’র এক সভায় প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান বলেছেন, আমরা বহুবার গ্যাসের সমস্যা চেষ্টা করে দূর করতে পারছি না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক বিপদগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা নিট ব্যবসা করি যারা আমাদের ৩টা জিনিস খুব প্রয়োজন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি। শুধু আমাদের সমস্যা একটাই আগে বিদ্যুৎ ছিল না, এখন সমস্যা হলো আমাদের গ্যাস সরবরাহ নেই। আমরা বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে নিটওয়্যার রপ্তানি করছি আড়াই হাজার কোটি টাকা। এটা যদি হিসাব করতে যাই তাহলে বাংলাদেশের সব থেকে বেশি আয় করে নিটওয়্যার, আর এর মাধ্যমেই আমরা ফরেন কারেন্সি আনতে পারছি। আর এই জন্যই আজ ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের সঙ্গে জড়িত। প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে যদি চিন্তা করি তাহলে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এই নিটওয়্যারে।
একই সংকটের কথা উল্লেখ করেন এমবি নিট ফ্যাশন লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে আমরা যখন সরকারের সঙ্গে বসি। তখন বলেছিল যে, আমরা যদি বর্ধিত মূল্য দিই তাহলে আমাদের কন্টিনিউয়াসলি গ্যাস দেবে। আমরা সেই প্রত্যাশায় রাজি হলাম। সরকার ১২ টাকার গ্যাস ৩০ টাকা করেছিল, সেটাও আমরা গ্রহণ করেছিলাম। আমরা বর্ধিতহারে ওই মূল্য দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু গ্যাস পাচ্ছি না। গ্যাস পাওয়ার না থাকায় আমার নিটিং বন্ধ হয়ে আছে। আমাদের ডাইং যেখানে প্রতিদিন ১০০ ক্যাপাসিটি ডাইং থাকে সেখানে ১ মাসে মাত্র ৮৫ ক্যাপাসিটি ডাইং আমরা প্রস্তুত করতে পেরেছি। এতে করে আমার কাটিং সুইং বন্ধ হয়ে আছে। পর্যাপ্ত ফেব্রিক্স না পাওয়ায় আমাদের রপ্তানি বন্ধ হচ্ছে। এমন অবস্থা থাকলে আমার ফেব্রিক্স আমদানিতে চলে যেতে হবে, এতে আমাদের ৫০-৬০ ভাগ ইনপুটে চলে যাবে। একদিকে এমনিতেই আমাদের ফরেন কারেন্সির সংকট, এরপর ডলার ক্রাইসিস আরও বড় আকার ধারণ করবে।
এদিকে, গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে আবাসিক এলাকায়। বাসাবাড়িতে গ্যাসের জন্য গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয় গৃহিণীদের। দিনের বেলায় গ্যাস না পাওয়ায় গভীর রাতে রান্নার কাজ করতে হয়। অনেকে বিকল্প হিসেবে লাকড়ির চুলা, কেউ কেউ বৈদ্যুতিক চুলা ব্যবহার করছে। এছাড়া এলপি গ্যাসের সিলেন্ডার ব্যবহার করে রান্নাবান্না করছে। সম্প্রতি সময়ে গ্যাসের তীব্র সংকট প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বলেছেন, গ্যাস সরবরাহে গত শুক্র ও শনিবার একটা সমস্যা হয়েছিল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের দুটি টার্মিনালের একটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এটি ফিরিয়ে আনার পর সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এতে বিশেষ করে চট্টগ্রামে ও পরবর্তীকালে ঢাকায় গ্যাস সরবরাহে সমস্যা হয়। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।