রোহিঙ্গাদের ত্রাণে সেনাসহায়তা

 

দেশে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সামরিক বাহিনীকে নিয়োজিত করা হয়। এসব ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা প্রশ্নাতীত। সম্প্রতি দেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার দাবি ছিল। তাদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণে গৃহীত সরকারের সিদ্ধান্তকে তাই প্রশংসনীয় বলবো আমরা।

শনিবার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ত্রাণের দায়িত্ব নিয়ে সেনা কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেছেনÑএ কার্যক্রম থেকে বাদ যাবে না কেউ। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, এতদিন অসংগঠিতভাবে ত্রাণ বিতরণ হয়েছিল। শরণার্থীদের বড় একটি অংশ ছিল ত্রাণবঞ্চিত। অনেকে আবার বেশি পাচ্ছিল। ত্রাণ বিতরণের নামে শোডাউনের চেষ্টাও ছিল লক্ষণীয়। এখন সেনাবাহিনী এর দায়িত্ব পাওয়ায় তেমনটি আর ঘটবে না বলেই সবার আশা।

সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই ৫৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণকক্ষে ত্রাণসামগ্রী জমা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে তিনটি নিবন্ধন বুথ বসিয়ে দাতাদের কাছ থেকে ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করছেন সেনাসদস্যরা। দাতাদের ‘ত্রাণসামগ্রী গৃহীত’ মর্মে রসিদ দেওয়া হচ্ছে। তবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থাগুলোর ত্রাণ বিতরণে বিধিনিষেধ নেই। সংস্থাগুলো নিজস্ব তত্ত¡াবধানে ত্রাণ বিতরণ করছে। সেক্ষেত্রে তেমন অভিযোগও নেই।

খবরে প্রকাশ, সেনাবাহিনীর সম্মতি না পেয়ে ফিরে গেছেন নিজস্ব উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণে আসা কয়েকজন। শৃঙ্খলাবোধের প্রশংসা করে দায়িত্বরত সেনাসদস্যদের হাতে ত্রাণ দিয়ে হাসিমুখেই ফিরে যান তারা। তারা বলেছেনÑ‘এবার ত্রাণসামগ্রী সঠিকভাবে বণ্টন হবে’।

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর প্রথম শর্ত হলো নিবন্ধন। এ কাজে ইউএনএইচসিআরসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সম্পৃক্ত থাকায় নিবন্ধিতদের ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় অস্বীকার করতে পারবে না মিয়ানমার। ‘নিজেদের নাগরিক নয়’ ধরনের অজুহাতও তুলতে পারবে না। যথাযথভাবে নিবন্ধন করা গেলে রোহিঙ্গাদের কেউ এদেশের মূলধারায় মিলতে পারবে না। সংগ্রহ করতে পারবে না এখানকার জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা পাসপোর্ট। এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের কাছে মোবাইল ফোনের সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যথাযথ তালিকা করা গেলে সব রোহিঙ্গাকেই ক্রমান্বয়ে স্বদেশে পাঠানো সম্ভব। এরই মধ্যে প্রধানত আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি বলেছেন, ‘যাচাই-বাছাই’ করে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া হবে। এ অবস্থায় অনেকেই মনে করেন, রোহিঙ্গা নিবন্ধনেও সেনাসদস্যদের সহায়তা নেওয়া যায়।

বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। তাদের খাদ্য, ওষুধপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস জোগানোর দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। ত্রাণের সুষ্ঠু বণ্টনে আমাদের আন্তরিকতায় কিন্তু কমতি নেই। শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াতে সাধারণ মানুষও এগিয়ে এসেছে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে। তবে আমাদের সামর্র্থ্য সীমিত। সেটি পরিপূরণে বিশ্বসম্প্রদায় এগিয়ে এলে তাদের দুর্ভোগ লাঘবে আমরা অবশ্যই সক্ষম হবো। এক্ষেত্রে দক্ষ সেনাসহায়তা হলো তার গ্যারান্টি।

বিতাড়িত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক আশ্রয় দিয়ে তাদের দুর্ভোগ লাঘবে আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সুনামও রয়েছে বৈকি। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নদী পারাপারে বাণিজ্য করছে একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী। অর্থের বিনিময়ে নিবন্ধন, এনআইডি কার্ড পাইয়ে দেওয়ার বাণিজ্যও হতে পারে। এসব রোধে পুলিশেরই তৎপর হওয়ার কথা। রোহিঙ্গাদের ত্রাণে সেনাসদস্যরা নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি আমরা আশা করবো, পুলিশও তার কাজে সাফল্য দেখাবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০