শেয়ার বিজ ডেস্ক: রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার টুকুরিয়া, বড় আলমপুর, চতরা ও কাবিলপুর মিলে চারটি ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষে রংপুর ও দিনাজপুর জেলাকে দ্বিখণ্ডিত করে প্রবাহিত হয়েছে করতোয়া নদী। প্রতিবছরই বর্ণিত ইউনিয়নগুলোর ওই নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর জমিজিরাত ও ঘরবাড়ি ভাঙনের কারণে করতোয়ার গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অভাব-অনাটন হয় তাদের নিত্যদিনের সাথি। দীর্ঘ সময় পর সেই করতোয়ার জেগে ওঠা বালিচরে এখন সবুজের সমারোহ। ক’বছর আগেও যেখানে কোনো ফসলই হতো না, সেখানে এখন দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। বালিচরের জমিগুলো এখন আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে করতোয়ার তীরবর্তী গ্রামের চিরঅভাবী কৃষকদের। খবর: বাসস।
গম, ভুট্টা, গোলআলু, মিষ্টিআলু, মিষ্টিকুমড়া, মরিচ, টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের রবি ফসল চাষ করে অনেক পরিবারেই সচ্ছলতা এসেছে। চর এলাকার গ্রাম কুয়াতপুরের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম, মমিনুল, হাসেম আলী, গিলাবাড়ীর জায়েদ আলী, মাটিয়ালপাড়ার সুরুজ আলী, কুমারপুরের আনিছার মোল্লা, ঘাঁষিপুরের নুর আলম খান, বোয়ালমারীর আব্দুল জব্বার, জয়ন্তিপুরের মিয়াজান, শিমুলবাড়ী গ্রামের আফছার আলী, বাঁশপুকুরিয়ার কৃষক ফরহাদ হোসেন ও মহিবুল ইসলাম জানান, ক’বছর আগেও এই এলাকার মানুষের সংসারে অভাব-অনাটন ছিল নিত্যসঙ্গী। বর্তমানে সেই অবস্থা আর নেই। করতোয়া নদীর ধারে জেগে ওঠা বালিচরের জমিগুলোয় বন্যায় পলি জমে যাওয়ায় সেগুলো এখন কৃষিজমিতে পরিণত হয়েছে।
রবি মৌসুমে সেচের মাধ্যমে ওইসব জমিতে ফসল চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই। বর্তমানে উল্লিখিত গ্রামগুলোর প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কটি রাস্তা পাকা হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনও হয়েছে। ফলে করতোয়ার তীরবর্তী পিছিয়ে থাকা গ্রামগুলো এখন আলোকিত। মানুষ তাদের সন্তানদের স্কুল-কলেজমুখী করছেন। আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা পাকা করার দাবি জানিয়েছেন তারা। ওই এলাকার গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, একসময়কার ধু-ধু বালিচরে এখন দৃষ্টিনন্দন সবুজের সমারোহ। কাঁচা মরিচ, টমেটো, গম, ভুট্টা, গোলআলু, মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টিআলু, বেগুনসহ নানা ধরনের রবি ফসলের চাষে ভরে গেছে। এসব জমিতে উঠতি ফসল দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
যে জমিতে একসময় কোনো ফসল ফলত না, সেই জমিতে একরের পর একর ভুট্টার চাষ হয়েছে। গতবছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হওয়ায় ও দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা এবার আরও বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
ঘাষিপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক ও চতরা ইউপির সদস্য নুর মোহাম্মদ গোল্লা বলেন, শুধু বালি আর বালির কারণে করতোয়ার পারে আমাদের প্রায় চার-পাঁচ একর জমিতে আগে কোনো ফসল চাষ হতো না। বর্তমানে সেগুলোয় ভুট্টা, টমেটো, গোলআলু, মিষ্টিআলু, মরিচসহ নানা রবিশস্য চাষ হচ্ছে। প্রতি একরে প্রায় ১২০ মণ ভুট্টা, ১২০ থেকে ১৩০ মণ গোলআলু এবং প্রায় ১৩০ মণ পর্যন্ত টমেটোর ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, গোলআলুর জমিতে সাথি ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষ করে চর এলাকার কৃষকরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হচ্ছেন। তিনি তার বসতবাড়ি দেখিয়ে দিয়ে বলেন, বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় সরিয়েছি
পাঁচ-ছয়বার। এখন যেখানে বাড়ি দেখছেন, এটিও আগামী দু-এক বছরের মধ্যে সরাতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান বলেন, এবছর উপজেলায় ছয় হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। ভুট্টা, মরিচ, টমেটো ও মিষ্টিআলুর চাষ করতোয়ার চর এলাকায় তুলনামূলকভাবে বেশি। চীনাবাদাম ও মসুরের ডাল চাষও হচ্ছে। খাদ্যশস্যের মতো অন্যান্য ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে কৃষকরা যাতে সফলতা অর্জন করতে পারেন, সে লক্ষ্যে গম, ভুট্টা, সরষে, ধান, পেঁয়াজসহ ১৮ হাজার কৃষককে বিনা মূল্যে বীজ ও সার দেয়ার কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে চরবাসীর প্রণোদনার পরিমাণ তুলানামূলকভাবে বেশি।