ইমাম হোসেন, মীরসরাই (চট্টগ্রাম): মীরসরাই রেলওয়ে স্টেশনটি দীর্ঘ প্রায় পনেরো বছর ধরে বন্ধ। শতবর্ষী এই স্টেশনটি বন্ধ হওয়ার পর চুরি হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা ও মালামাল। কখন চালু হবে সে আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয়রা। স্টেশনটিতে পুনরায় ট্রেন থামলে হাজার হাজার মানুষ সুফল পাবে বলে অভিমত এলাকাবাসীর।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জনমানবহীন স্টেশনের কক্ষগুলোতে গরু-ছাগল পালন, জুয়ার আসর, মাদকসেবীর আড্ডাসহ নানান অনিয়ম চলতে থাকে। স্টেশনটি বন্ধ হওয়ায় ফলে নষ্ট হচ্ছে রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামি। দখল হয়ে গেছে অনেক জায়গা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে ১৪৯ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথ নির্মিত হয়েছিল। আসাম বেঙ্গলে রেলওয়ের থাকাকালীন সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এ স্টেশনগুলোতে নিয়মিত ট্রেন থামত। ফলে এলাকার মানুষ ছিল ট্রেননির্ভর। ভ্রমণ, সবজি, ফলমূল আমদানি-রপ্তনিসহ বিভিন্ন জরুরি কাজে ট্রেনই ছিল প্রিয় পরিবহন। এক সময় এসব স্টেশন থেকে ভারত, পাকিস্তানেও মালামাল আনা-নেয়া হতো। কিন্তু ২০০৮ সালে আয় কম যাওয়া ও লোকবল সংকটের কারণে স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়।
গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মীরসরাই সদর রেলস্টেশন উন্নয়ন কার্যক্রম শেষে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকা এই রেলস্টেশনটি চালু হওয়ার জন্য রেলস্টেশনের আধুনিক সিগন্যালিং, নতুন ডিজিটাল কক্ষ নির্মাণ, লাইন সংস্কারসহ বিভিন্ন আধুনিকায়ন কাজ শেষ হওয়ার পর আবারও থেমে গেছে কার্যক্রম। উন্নয়ন থেমে যাওয়ায় জনমনে বিরাজ করছে স্বপ্নভঙ্গের আতঙ্ক।
আব্দুর রহমান নামে একজন বলেন, স্টেশনটি যখন চালু ছিল তখন গোডাউনের মালামাল আখাউড়ার কাঁঠাল, সিলেটের কাঁঠাল আনা নেয়া হতো বলা যায় এক প্রকার জমজমাট ছিল। স্টেশনটি বন্ধ হওয়ার পর থেকে মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।
চিনকি আস্তানা স্টেশন মাস্টার সিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা স্টেশন বন্ধ থাকলে তার পরবর্তী স্টেশনটির সঙ্গে সঠিক সিগন্যাল পাওয়া যায় না। যার ফলে গাড়ি নির্দিষ্ট গতিতে চলাচল করতে পারে না। ফলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে রেল যেতে বিলম্ব হয়। তিনি আরও বলেন, মীরসরাই রেলস্টেশনটি খুব তাড়াতাড়ি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মীরসরাই বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল আবছার বলেন, রেলওয়ের দক্ষ জনবল সংকটের পাশাপাশি বন্ধ স্টেশনের কারণে গতি হারায় ট্রেন। মীরসরাই থেকে মীরসরাই স্টেশনের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা সুবিধা না। বিশেষ করে গ্রামীণ পর্যায়ে রেল যোগাযোগব্যবস্থা যেন আরও বাড়ানো যায় এটা আমাদের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম (পূর্ব) মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা মূলত গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন দীর্ঘ দিনের বন্ধ হওয়া স্টেশন এ যাবৎ লোকবল স্বল্পতার কারণে বন্ধ ছিল। সেই গুলো আমরা গুরুত্ব নির্ধারণ করে চালু হওয়ার করা রয়েছে। মীরসরাই স্টেশনটি পর্যায়ক্রমে হবে। রেলওয়ের শত বছরের পুরোনো স্টেশনটি চালু হলে রাজস্ব আয় বাড়ার পাশাপাশি এলাকাবাসী পাবে তাদের কাক্সিক্ষত সেবা। স্টেশনটি শিগগিরই চালু হবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
