প্রতিনিধি, গাইবান্ধা: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, তিন ফসলি জমিতে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের যে পাঁয়তারা চলছে, তা বন্ধ করতে হবে। ফসলি জমিতে কোনো রকম স্থাপনা হতে পারে না। এটা রাষ্ট্রের নীতি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বারবার বলে যাচ্ছেন, কোনো ফসলি জমি নষ্ট করে যেন স্থাপনা না হয়।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে গতকাল সাঁওতাল সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। উপজেলার কাটামোড় এলাকায় এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, এএলআরডি, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ ও গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সুলতানা কামাল বলেন, ভূমি উদ্ধারের আন্দোলন করার সময় সাঁওতালদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। তিনজন সাঁওতাল নিহত হয়েছেন। সেটার বিচার তারা দীর্ঘদিন ধরে চাচ্ছেন। এ বিচার আটকে রাখা হয়েছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থেকে মুক্তিযুদ্ধের আলোকে দেশ পরিচালনা করছে। যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার হয়ে দেশ চালাতে হয়, তাহলে কিন্তু সরকারকে এই সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের চেষ্টা করতেই হবে। এ উন্নয়ন করতে হলে তাদের ফসলের জমিতে হাত দেয়া চলবে না। তাদের ওপর যদি কোনো রকম অত্যাচার হয়, নির্যাতন হয়, সেটার সুবিচার করতে হবে।
সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘আমরা এসডিজিতেও স্বাক্ষর করেছি। সেখানে বলা হয়েছে, কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যারা পিছিয়ে আছেন, তাদের সামনে নিয়ে আসার জন্য কাজ করতে হবে। তাদের যে দাবিগুলো রয়েছে, যেমন সংখ্যালঘু কমিশন, তাদের সুরক্ষা কমিশন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য আলাদা কমিশন, সেগুলো যেন গঠিত হয়।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাক্সে। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্যসচিব জাহাঙ্গীর কবির, নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের সদস্যসচিব প্রবীর চক্রবর্তী, আদিবাসী নেতা সুফল হেমব্রম, থোমাস হেমব্রম, নিরঞ্জন পাহান, মানবাধিকারকর্মী গোলাম রব্বানী প্রমুখ।
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, পৃথিবীজুড়ে খাদ্যের মূল্য বেড়ে গেছে। শস্যের ফলন কমে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। এই অবস্থায় বাগদা ফার্মের জমিতে কোনো অবস্থায় স্থাপনা করা ঠিক হবে না।
এর আগে সকাল ৯টায় সাঁওতালপল্লির মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে তীর-ধনুক, ব্যানার, বিভিন্ন দাবিদাওয়া-সংবলিত ফেস্টুন নিয়ে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের কাটামোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে দুপুরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে পাঁচ শতাধিক সাঁওতাল অংশ নেন।