আলুক্ষেতে ‘লেট ব্লাইট’রোগ, শঙ্কায় চাষি

প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহী অঞ্চলে দেখা দিয়েছে আলুর লেট ব্লাইট রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর গাছের কাণ্ড পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে আলুর ফলন কমে যাওয়ার শঙ্কা করছেন কৃষকরা। কৃষকদের অভিযোগ, তাদের সচেতন করতে কৃষি বিভাগের দৃশ্যমান তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। কৃষকরা অনুমাননির্ভর হয়ে বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহার করছেন, তাতেও ফসল রক্ষা করতে পারছেন না। তবে কৃষি অফিস বলছে, খুবই কম জমির আলু গাছে এই রোগ দেখা দিয়েছে। কীটনাশক স্প্রে করলে তা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় এ বছর আলুর চাষ হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে। আর গত বছর আলুর চাষ হয়েছিল ৩৬ হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে। তবে গত বছরের তুলনায় এই বছর আলুর চাষের জমি কমেছে ১ হাজার ৬৯৬ হেক্টর। তবে উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলুর চাষ হয়েছে তানোরে।

জানা গেছে, তানোরে চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৬০ হেক্টর কম জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। এদিকে তানোরের ব্র্যাক কোম্পানির আলু রোপণ করে প্রায় পাঁচ হাজার কৃষক সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এসব কৃষক ক্ষতিপূরণের দাবি করে এখনও কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি।

সরেজমিন দেখা গেছে, তানোরের কামারগাঁ ইউনিয়নের ধানোরা গ্রামের অধিকাংশ আলুক্ষেতে পচন রোগে আক্রান্ত হয়ে আলুগাছ পচে যাচ্ছে। চাষিরা বলছেন, কয়েকদিনের শৈতপ্রবাহ, মেঘলা আকাশ ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে আলুগাছে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে জমি ইজারা নিয়ে আলুচাষে প্রতি বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা ও নিজস্ব জমিতে প্রতি বিঘায় প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

গোকুল গ্রামের কৃষক সাহিন বলেন, এবার তিনি ৫০ বিঘা জমিতে আলুচাষ করেছেন। পচন রোগে ইতোমধ্যে তার আলুক্ষেতের সিংহভাগ গাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা পুরোপুরি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। হঠাৎ করেই ক্ষেতে এই রোগের আক্রমণ হয়েছে। ওষুধ স্প্রে করেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। আবাদ মারা গেলে কীভাবে চলব।

একই মাঠের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, পচন রোগে আক্রান্ত তার আলুক্ষেতে তিনি বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহার করেছেন, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। এবার তিনি ৫ একর জমিতে আলুর চাষ করেছেন। কিন্তু পাতা পচা রোগ দেখা দেয়ায় কিছুটা চিন্তিত।

এসব বিষয়ে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, আমার জানা মতে, কোথাও আলুগাছে পচন রোগ ধরেনি। আলুর গাছ ভালো অবস্থায় আছে, আলুগাছে পচন রোগ দেখা দিলে কৃষকরা যদি তাদের কাছে পরামর্শ নিতে না আসেন তাহলে তো তাদের করণীয় কিছু নেই।

তিনি বলেন, কিছু কিছু এলাকায় লেট ব্লাইট রোগ দেখা দিয়েছে। চাষিরা স্প্রে করছে। সেখান থেকে রোগ বৃদ্ধির সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘এ অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। ঘন কুয়াশা থাকলে আলুর মধ্যে লেট ব্লাইট হতে পারে। কৃষকদের পরিমিত ছত্রাক নাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। কৃষকের আলুক্ষেত ভালো আছে। তারা জেলার বিভিন্ন উপজেলার আলুর ক্ষেত পরিদর্শন করছেন। একই সঙ্গে চাষিদের সঙ্গে কথা বলছেন। আলুর ভালো ফলনে তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০