একবছরে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ বেড়েছে লাখ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে দিন দিন ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক বছরে সরকারের এ খাত থেকে ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

খাত-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় সরকারি খরচ মেটাতে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং উৎস ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। তাই দিন দিন এই খাত থেকে সরকারের ঋণ বেড়ে চলছে। তবে ঋণের ক্ষেত্রে সরকারের সতর্ক থাকা উচিত বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর শেষে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকায়। ২০২২ সালের একই সময়ে ঋণ স্থিতি ছিল ৭ লাখ ১৪ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে দেশীয় উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের নভেম্বরের শেষে ব্যাংক থেকে নেয়া সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়ায় ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২২ সালের নভেম্বরে ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। এক বছরে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ বেড়েছে ৯০ হাজার ৯৭৯ কোটি বা ৩০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংক থেকে সরকারের নেয়া সরাসরি ঋণই হলো ব্যাংক খাতের ঋণ।

২০২৩ সালের নভেম্বর শেষে ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে নেয়া ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৪ লাখ ২৭ হাজার ২৫৬ কোটি টাকায়। যা ২০২২ সালের একই সময় ছিল ৪ লাখ ১৬ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা। এক বছরে এই খাত থেকে ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৬২ শতাংশ। সরকার সঞ্চয়পত্র, বিল ও বন্ড বিক্রি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেয়।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য উৎস থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, সরকারের মোট ঋণ বাড়লেও চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর অবশ্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ কমেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎসের প্রকৃত ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১৩৫ কোটি টাকায়, যা আগের অর্থবছরের একই সময় ছিল ৩৪ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ ২৫ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা কমেছে।

জানা যায়, বিদায়ী বছরের শুরু থেকে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। তাই অর্থনীতিবিদরা ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়া বন্ধের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়া বাড়লে তা পরোক্ষভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে ঋণ দেয়া বন্ধ করে দেয়। তাই চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ কমেছে।

তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ পেয়েছে ৩ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। পাঁচ মাসে ঋণ কমেছে ২৮ হাজার ৮১২ কোটি টাকা।

অন্যদিকে একই সময় অন্য খাতে সরকারের ঋণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে অন্য খাত থেকে সরকার ঋণ পেয়েছে ৫ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ২ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। পাঁচ মাসে ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আয় কমেছে ২৩ হাজার কোটি টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০