চীনা ওষুধের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা ইউরোপের 

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যন্ত্রপাতি ও খনিজ পদার্থ থেকে শুরু করে অনেক পণ্যের জন্য গোটা বিশ্ব চীনের ওপর কমবেশি নির্ভরশীল। এবার জানা গেল ওষুধের ক্ষেত্রেও চীনের আধিপত্য বাড়ছে। সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে ইউরোপের দেশগুলোয় সেই নির্ভরতা কিছুটা কমানোর চেষ্টা চলছে। খবর: ডয়চে ভেলে।

বিশ্বে সেরা শক্তি হয়ে ওঠা চীনের লক্ষ্য। অভ্যন্তরীণ ওষুধশিল্পের ক্ষেত্রেও চীন সেই লক্ষ্য পূরণ করতে চাইছে। বিশ্বের অনেক দেশ চীনে তৈরি ওষুধের ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, দেশগুলো কি চিকিৎসা পণ্যের ক্ষেত্রে চীনের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে চলেছে? সে ক্ষেত্রে এমন পণ্যের রপ্তানি কি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে?

সবসময় সস্তার পণ্য উৎপাদন করা চীনের ওষুধশিল্পের মূলমন্ত্র। এই শিল্প খাতের দ্রুত উত্থানের ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বও সাহায্য করেছে। ওষুধ বিশেষজ্ঞ উলরিকে হলৎসগ্রাবে বলেন, এর প্রেক্ষাপট হলো, আমরা ওষুধের জন্য বেশি ব্যয় করতে চাই না, যদিও সেটাই চিকিৎসার সবচেয়ে সস্তা উপায়। সে কারণে উৎপাদনের ব্যয় কমানোর চেষ্টা করা হয়। সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, এমন সব দেশে যাওয়া যেখানে সস্তা শ্রম, কম পরিবেশবিধি ও জ্বালানির কম মূল্য রয়েছে।

বর্তমানে জার্মানিতে একটি ট্যাবলেটের দাম ছয় সেন্ট, যা একটা চুইংগামের সমান। চীনের বদলে ইউরোপে তৈরি একটি মাত্র ট্যাবলেটের দাম জার্মানিতে ১০ থেকে ২০ সেন্ট বেশি হতে পারে। তবে চীনের ওপর নির্ভরতা আরও কমাতে বিশ্বের কোথাও রোগীরা বাড়তি মাশুল গুনতে প্রস্তুত কি না, তা কারও জানা নেই।

চীন বর্তমানে ৪০ শতাংশ অ্যাক্টিভ ইনগ্রিডিয়েন্ট বা চিকিৎসার ওষুধের অংশ উৎপাদন করছে বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন। আপাতদৃষ্টিতে সেটা মনে না হলেও চীন সেই প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছে। প্রতিযোগিতার বাজারে বাকিদের তুলনায় চীনের একটা সুবিধা রয়েছে। দেশটি ওষুধের বেশিরভাগ কাঁচামালও উৎপাদন করে। বিশাল আকারে উৎপাদনের কারণে তার মূল্যও অত্যন্ত কম।

দামের ক্ষেত্রে সেই সুবিধার দৌলতে চীন বিদেশি প্রতিযোগীদের বাজার থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। যেমন সেফালোস্পোরিন নামের অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে সেটা দেখা যাচ্ছে। এমনকি অত্যাধুনিক উৎপাদন প্রক্রিয়া সত্ত্বেও জার্মানির কোনো কোম্পানি চীনের সামনে মাথা তোলার সুযোগ পাচ্ছে না। উলরিকে হলৎসগ্রাবে জানান, কয়েক বছর আগেও হ্যোক্সট কোম্পানি সেফালোস্পোরিন উৎপাদন করত। চীনের স্পষ্ট উত্থানের ফলে সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। তারা সব সময়ে হ্যোক্সটের তুলনায় কম দাম হেঁকে এসেছে। সে সময়কার হ্যোক্সট কোম্পানির মালিকরা তখন বাধ্য হয়ে বললেন, এটা আর লাভজনক নয়, আমরা উৎপাদন বন্ধ করে দেব।

এর পরিণাম সম্পর্কে উলরিকে বলেন, ভালো করে সেফালোস্পোরিনের দিকে নজর দিলে লক্ষ করবেন, সেটির ভিত্তির মৌলিক উপাদান হলো অ্যামিনোসেফালিক পিউরানয়েক অ্যাসিড, যা বড় আকারে শুধু চীনেই উৎপাদিত হয়। তাই যুদ্ধ বেধে গেলে আমরা তাইওয়ানের পক্ষে অবস্থান নিলে চীন যদি ইউরোপে সেই উপাদান আর সরবরাহ না করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমাদের খালি হাতে বসে থাকতে হবে। সেফালোস্পোরিন আর পাওয়া যাবে না। অথচ অ্যান্টিবায়োটিকের মতো ওষুধ জীবন বাঁচায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন বর্তমানে বিশ্বের প্রতি ১০টি প্রাথমিক স্তরের ওষুধের মধ্যে একটির জন্য গবেষণা চালাচ্ছে। ওষুধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে আন্দ্রেয়াস মাইসার বলেন, আমার মতে, তারা আরও বেশি উদ্ধাবন-বান্ধব। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ধার না ধরে তারা কোনোকিছু বাস্তবায়ন করতে চাইলে সেটা করে ছাড়ে। তাদের আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আমাদের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত ঘটে। অন্যদিকে ‘কোর ইন্ডাস্ট্রি’ হিসেবে চিহ্নিত হলে অর্থ, সহায়তা ও তহবিলের অভাব হয় না।

ইউরোপ আবার ওষুধ উৎপাদন ফিরিয়ে আনতে চায়। যেমন ইউরোপে প্যারাসিটামল নামের ব্যথার ওষুধের এক-তৃতীয়াংশ চাহিদা মেটাতে ফ্রান্সে একটি কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে মোটা অঙ্কের সরকারি ভর্তুকির কারণেই সেটা সম্ভব হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০