বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র এলাকায় শতাধিক বাড়িতে ফাটল

প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের নর্থ প্যাড এলাকার আশপাশের ভূমি শনিবার রাতে কেঁপে উঠেছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল রোববার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রোডাকশন বিভাগের পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি জানানো হয়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলায় দেশের অন্যতম গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা অবস্থিত। এ গ্যাসক্ষেত্রের নর্থ প্যাডের পশ্চিমে নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাগ, জামারগাঁও. রাধাপুর, রামেরগাঁও, মধুরা, সাদুল্লাহসহ বেশ কিছু গ্রাম আছে। গ্রামগুলোয় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। শনিবার রাত ১০টার দিকে হঠাৎ করে ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। কিছুক্ষণ পরপর ভূমি কাঁপছিল। এ তীব্র কাঁপুনিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে। অনেকে ছোটাছুটি শুরু করেন। শতাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। এলাকাবাসী রাতেই গ্যাসক্ষেত্রের সামনে এসে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করেন। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন এলাকাবাসীকে শান্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।

স্থানীয়রা জানায়, গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত গ্যাসক্ষেত্র এলাকায় প্রতিদিন তিন-চারবার বিকট শব্দ ও অতিরিক্ত কাঁপুনি হয়। তাতে মাটি কেঁপে ফাটল ধরেছে ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়নের ২০ গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়িতে।

তারা জানায়, বিষয়টি একাধিকবার জানানো হলেও বিবিয়ানা কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়নি। এ অবস্থায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কায় দিন কাটছে স্থানীয়দের। গতকাল শনিবার রাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কয়েক শ মানুষ বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড ঘেরাও করে। এ সময় বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানায় স্থানীয়রা।

উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের কসবা গ্রামের শ্যামল আহমেদ বলেন, গ্যাসক্ষেত্রে কৃত্রিম ভূমিকম্প ঘটানোর কারণে তাদের পাঁচ-ছয়টি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ কারণে তারা সবাই আতঙ্কে রয়েছেন। গত রাতে বাড়ির লোকজন ঘুমাতে পারেনি।

জামারগাঁও গ্রামের সিরাজ আলী বলেন, গ্যাসক্ষেত্রে হয়তো নতুন কূপ খনন হচ্ছে। কাজের অসাবধানতার কারণে কিছুক্ষণ পরপর ভূমি কেঁপে উঠছে। এতে মানুষের বসতঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচবার বিকট শব্দ হয় এবং আশপাশের মাটি কেঁপে ওঠে।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনুপম দাশ বলেন, ‘এলাকাবাসীর এমন অভিযোগে আমরা কথা বলেছি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে। তারা আমাদের জানিয়েছেন যে আজ বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন।’

এ প্রসঙ্গে হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ লোকজন বিষয়টি আমাকে জানানোর পর আমি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। কেন অতিরিক্ত কাঁপুনি হয়েছে তা দ্রুত খতিয়ে দেখা হবে বলে তারা আশ্বাস দিয়েছেন

এদিকে বিষয়টি তদন্তে বাপেক্সের ভূতাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান ও পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রোডাকশন) মো. সালাহ উদ্দিন। কমিটি তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।

বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করছে বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন। প্রতিষ্ঠানটির যোগাযোগ ব্যবস্থাপক শেখ জাহিদুর রহমান বলেন, এই গ্যাসক্ষেত্রে বর্তমানে ড্রিলিংয়ের কাজ চলছে। হয়তো এ থেকে ভূমি কাঁপার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞ দল আসার পর পুরো বিষয়টি জানা যাবে।

শেভরন বাংলাদেশের পরিচালক (জনসংযোগ) শামীম হাসান বলেন, ‘আমরা গ্যাসক্ষেত্র থেকে যতটুকু গ্যাস পাই, তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করে থাকি। এ প্রকল্প পরিচালনার কাজ করে থাকে পেট্রোবাংলা।’

এদিকে গতকাল বিকালেও বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের চৌরাস্তা এলাকায় স্থানীয় লোকজন এক প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সমাবেশে বসতঘরে ফাটল ধরার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চান ভুক্তভোগীরা। অন্যথায় তারা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়ার কথা বলেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০