জাবি প্রক্টর: অভিযোগ এলে ধামাচাপা দেওয়াই যার কাজ

জাবি প্রতিনিধি,ওসমান সরদার : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান যেন ধামাচাপা দেওয়ার প্রক্টর নামেই পরিচিত।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রলীগের নৈতিক স্খলন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক ব্যবসা সবকিছুই ধামাচাপা দেওয়াই যেন তার কাজ।

গত বছরের ৪ আগস্ট নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) এক শিক্ষিকাকে আটকে টাকা আদায় করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতাকর্মী। ঐ দিনই এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষিকা মৌখিকভাবে অভিযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে। কিন্তু প্রক্টর বিষয়টি ধামাচাপা দেয়। কিন্তু  ১০ আগস্ট ঘটনা জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সংবাদ মাধ্যমকে জানায় আগামী এক দুই দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। কিন্তু সেই এক দুই দিন আজ ৬ মাসে পরিনত হয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি  দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ আছে। ২০২১ সালের ৮ জুলাই এক ছাত্রীকে পোশাক ও শরীর সম্পর্কে অশ্লীল মন্তব্য এবং উত্ত্যক্তের ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের দুই প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ভুক্তভোগী ঐ ছাত্রী। ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। তবে অভিযোগের পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি বিচার। এখানেও ধামাচাপা দিয়েছেন প্রক্টর।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ্ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের প্রভাষক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের দায়মুক্তিপত্র লেখানোর সময় প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান উপস্থিত ছিলেন। ওইটাও সে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।

এসকল ঘটনায় স্বপ্রনোদিতভাবে প্রক্টর হিসেবে ব্যবস্থা নিবেন বলে সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করলেও তিনি আজও কোন ব্যবস্থা নেননি। ছাত্রলীগ তাদের কর্মীদের বাচাতে সেসময় প্রক্টরের সাথে কয়েক দফায় বৈঠকও করেন। প্রক্টরের ছাত্রলীগ প্রীতির কারণ তিনি এমন আচরণ করেছেন। এজন্য এখন তার পরিচয় হয়েছে ছাত্রলীগের প্রক্টর।

সেসময় তিনি সংবাদ মাধ্যমকে আরো জানায় যে, ঘটনাটি জানার পর ওই শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তিনি লিখিত অভিযোগ করতে চাননি। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নেবে। বিষয়টি সম্পর্কে উপাচার্যও অবগত আছেন। তিনি এই ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনেরা এই ঘটনাকে প্রক্টরের ছাত্রলীগ প্রীতি আখ্যা দিয়েছেন । তাঁরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাঁদাবাজির মতো ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে কালক্ষেপণ করছে । যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে। অপরাধীরা ভবিষ্যতে অপরাধ করতে আরো সাহস পাবে।

এ বিষয়ে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমাদের হাতে কোনো লিখিত অভিযোগ আসে নি। তাই ব্যবস্থা নিতে পারি নি। শোকজ লেটার এখন লেখাই আছে। স্বপ্রনোদিত ভাবে কেন তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নিলেন না এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, যেহেতু বিষয়টি তোমরা প্রশ্ন করেছো আমরা আবার বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিবো। আমি অনেক দিন আগেই লিখে রেখেছি। কিন্তু আমাদের হাতে কোনো লিখিত অভিযোগ আসে নি। আমরা পত্রিকা মারফত ও মৌখিত ভাবে জানতে পেরেছি ঘটনা সম্পর্কে। কিন্তু শৌকোচে লিখার ধরন কি হবে তা নির্ভর করছে লিখিত অভিযোগের উপর।”

এ বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক নুরুল আলমকে একাধিক বার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম এলাকায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) এক শিক্ষিকাকে আটকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের জয় পাল এবং বাংলা বিভাগের মারুফুল হাসান মারুফের বিরুদ্ধে। তারা উভয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। জয় পাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক এবং মারুফ ছাত্রলীগকর্মী হিসেবে পরিচিত। তারা উভয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনী হলের আবাসিক ছাত্র। এই ঘটনায় অভিযুক্ত জয়পাল স্বীকারও করেন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানায়, জোরপূর্বক টাকা আদায়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারা মিষ্টি খাওয়ার জন্য আমাদের টাকা দিয়েছে। তারপরও আমরা ভুল বুঝতে পেরে বিকাশের মাধ্যমে টাকা ফেরত দিয়েছি এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষকের মাধ্যমে ওই শিক্ষিকার কাছে ক্ষমাও চেয়েছি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০