সেন্টমার্টিনে চিহ্ন দিতে কাটা হচ্ছে কুকুরের কান

এসএম রুবেল, কক্সবাজার: কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে জš§নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় প্রায় এক হাজার কুকুরের কান কেটে নেয়া হয়েছে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এ কার্যক্রম চলমান আছে। সেন্টমার্টিনের বিভিন্ন জায়গায় ‘কান কাটা কুকুরগুলো বন্ধ্যাকৃত কুকুর’ লিখে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে বিদ্যানন্দ।

এ বিষয়ে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার (কমিউনিকেশন) মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপে কুকুর বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে কুকুরদের বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। আর বন্ধ্যাত্বকৃত কুকুর চেনার জন্যই তাদের কান কেটে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে প্রাণী অধিকার কর্মী রাকিবুল এমিল বলেন, কুকুরকে বন্ধ্যাত্বকরণের পর কান কেটে চিহ্ন দিতে হয়। আমেরিকা-সহ বিশ্বের বহু দেশ এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। এটি ইন্টারন্যাশনাল সাইন। যেহেতু অ্যানেশথেশিয়া প্রয়োগ করে কান কাটা হয়, তাই কুকুর ব্যথা পায় না, পরে ওষুধের মাধ্যমে ক্ষত শুকিয়ে যায়। তাই কান কাটা নিরাপদ প্রক্রিয়া। অপরদিকে কান কাটার ফলে কুকুরের সৌন্দর্য নষ্ট হয় সত্য, কিন্তু বড় পরিসরে উপকারিতার কথা চিন্তা করলে তা সমস্যা মনে হবে না।

বন্ধ্যাত্বকরণের অন্য কোনো চিহ্ন দেয়া যায় কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, কুকুরের শরীরে ট্যাগ লাগানো যায়। কিন্তু যখন কুকুর পারস্পরিক ফাইট করবে তখন ট্যাগ নষ্ট হতে পারে। কুকুরের কানের মধ্যে সিল দেয়া যায়। তবে সেটি দৃশ্যমানভাবে দেখা যাবে না। ফলে একই কুকুরকে বারবার বন্ধ্যাত্বকরণ করার ঝুঁকি থাকে। এক্ষেত্রে প্রচলিত প্রক্রিয়ায় কান কেটে দেয়া হয়।

তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, কুকুরের কান কেটে নেয়ার বিষয়টি অমানবিক ও অনৈতিক। বন্ধ্যাত্বকরণ করতে হলেই যে সেই কুকুরের কান কেটে নিতে হবে, এ ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা খুবই নিন্দনীয়। একটি প্রাণীকে জেনেশুনে বিকলাঙ্গ করে দেয়া আইনবহির্ভূত কাজ। কেননা অসংখ্য স্থায়ী উপায় রয়েছে বন্ধ্যাত্বকরণের চিহ্ন দেয়ার।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, সৈকতের বালিয়াড়িতে বিভিন্ন কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব কুকুরের বেশিরভাগেরই একটি কানের অংশ কাটা রয়েছে, যার কারণে অন্য স্বাভাবিক কুকুর থেকে এদের আলাদা দেখাচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন বন্ধ্যাত্বকরণের সময় কুকুরগুলোর কান কেটে ফেলেছে।

সেন্টমার্টিন ঘুরে এসে মিটাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ সরওয়ার কামাল বলেন, ‘মানুষের মতো কুকুরের অনুভূতি প্রকাশের ক্ষমতা নেই। কুকুরের শরীরের একটি অংশ কেটে বন্ধ্যাত্বকরণের চিহ্নিত করার মাধ্যমে নিরীহ প্রাণীর প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। বিদ্যানন্দের মতো মানবিক কাজের মোড়কে মোড়ানো একটি সংগঠন কীভাবে প্রাণীর প্রতি এই অমানবিক কাজ করেছে, তা প্রশ্ন থেকে যায়।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ জানান, প্রাণীদের নিজস্ব অধিকার আছে। এভাবে একটি প্রাণীর কান কেটে নেয়া কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। পাশাপাশি জোর করে বন্ধ্যাত্বকরণের প্রক্রিয়াও বিধিবহির্ভূত।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কুকুরের কান কেটে চিহ্ন রাখার প্রবণতাটা সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে। কান না কেটে অন্য পদ্ধতিতে নিশ্চয় চিহ্নিত করা যায়। যেমন, যেসব কুকুরের বন্ধ্যাত্বকরণ হয়েছে, সেগুলোকে একটা বিশেষ রংয়ের কলার পরিয়েও এই বার্তা দেয়া যায়Ñএদের বন্ধ্যাত্বকরণ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাহাব উদ্দিন জানান, বন্ধ্যাত্বকরণের চিহ্ন হিসেবে কুকুরের কান কাটা যাবে না। ভবিষ্যতে যাতে কোনো কুকুরের কান কাটা না হয়, সে বিষয়ে তিনি ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০