নোয়াখালীতে মা-মেয়েকে ধর্ষণের আগে চুরির নাটক সাজান আওয়ামী লীগ নেতা ও সহযোগীরা: পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় গত সোমবার দিবাগত রাতে মা (৩০) ও মেয়েকে (১২) ধর্ষণের জন্য বাড়িতে ঢোকার আগে চুরির নাটক সাজান গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের ওরফে মুন্সি মেম্বার (৫০)। এর আগে বিভিন্ন সময় ওই নারীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে সফল না হয়ে সহযোগী হারুনের মাধ্যমে চুরির নাটক সাজান। সে অনুযায়ী তৃতীয় আরেকজনকে দিয়ে সিঁধ কেটে বসতঘরে ঢুকে দুজন মাকে এবং একজন মেয়েকে ধর্ষণ করেন। গতকাল বুধবার নিজ কার্যালয়ে ডাকা প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।

পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরজনকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে। গ্রেপ্তার এক ব্যক্তির তথ্যের ভিত্তিতে সিঁধ কাটার কাজে ব্যবহƒত কোদাল এবং ভয় দেখানোর কাজে ব্যবহƒত ধারালো দা, কালো প্যান্ট ও কালো টুপি উদ্ধার করা হয়েছে।

মা ও মেয়েকে ধর্ষণের পর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ঘরে থাকা নগদ টাকা ও সোনার গয়না নিয়ে চলে যান। ঘটনাটি কাউকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন তারা।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার দুজন হলেন সুবর্ণচর উপজেলার এক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি আবুল খায়ের ওরফে মুন্সি মেম্বার ও তার সহযোগী মো. মেহেরাজ (৪৮)। তাদের মধ্যে আবুল খায়েরকে গত মঙ্গলবার বিকালে জেলা শহর মাইজদী থেকে এবং মেহেরাজকে গতকাল দিবাগত রাতে সুবর্ণচরের চর ক্লার্ক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নির্যাতনের শিকার নারী ও তার মেয়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে এজাহারভুক্ত আসামি আবুল খায়েরকে এবং পরে অজ্ঞাতনামা আসামি মেহেরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মেহেরাজের বক্তব্যের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আবুল খায়েরের ঘনিষ্ঠ একই এলাকার হারুন ওই নারীর ঘরে টাকাপয়সা রয়েছে বলে লোভ দেখিয়ে মেহেরাজকে চুরি করতে যাওয়ার জন্য রাজি করায়। সে অনুযায়ী সে সোমবার দিবাগত রাতে বসতঘরে সিঁধ কেটে ভেতরে প্রবেশ করে। সে ঘরের দরজা খুলে দিতেই দেখে হারুনের পেছনে আবুল খায়ের ওরফে মুন্সি। তখন ঘরের ভেতর এক কক্ষে মা এবং আরেক কক্ষে মেয়ে ঘুমিয়ে ছিল। পরে মা ও মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন, মা ও মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগটি প্রতিবেশী স্বজনরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মা ও মেয়েকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার নারী থানায় একটি মামলা করেছেন। আবুল খায়ের ও হারুনের নাম মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। অপর আসামিকে তিনি চিনতে পারেননি। সেই অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে মেহেরাজের নাম মামলায় যুক্ত করা হবে। গ্রেপ্তার আবুল খায়ের ও মেহেরাজকে গতকাল বুধবার দুপুরে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের রাতে সুবর্ণচরে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আলোচিত ওই ঘটনার মামলার রায়ে সোমবার ১০ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক। এ মামলার প্রধান আসামি ছিলেন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০