জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: বিনিয়োগকারীরা ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট, আপিল ও শুনানির ব্যবস্থা অনলাইন করার কথা জানিয়েছেন, যাতে রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধ সহজ হয়। আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের সঙ্গে অনলাইনে সংযোগ বা সমন্বয় নেই। ফলে এক উইং অপর উইংয়ের কোনো কিছু দেখতে পারে না। এ কারণে এক সংস্থা অডিট করলেও অপর সংস্থার কাছে বাড়তি কাগজপত্র জমা দিতে হয়। তাই এনবিআরের তিন উইংয়ের সংযোগ বা সমন্বয় করার দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার এনবিআর সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিডার প্রতিনিধি এই তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, অনিবাসীদের যে উৎসে কর্তন করা হয়, তার হার অনেক বেশি বলে অনিবাসীরা বিডায় জানিয়েছেন। দ্বৈত করহার চুক্তির ক্ষেত্রে যে টেকনিক্যাল সার্ভিস ফি প্রদান করা হয়, সেক্ষেত্রে এখন কোনো বেনিফিট দেয়া হয় না। কোম্পানি করহার ৩৫ থেকে সাড়ে ২৭ শতাংশ করা হলেও প্রকৃত কর পরিশোধের পরিমাণ অনেক বেশি। এটা কমানো হলে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন। রয়্যালিটি, লাইসেন্স ফি, কারিগরি সেবার ফি পরিশোধের ক্ষেত্রে মুনাফার ১০ শতাংশ পর্যন্ত অনুমোদিত। আর বিডা ও ফরেক্সের বিধানে বলা হয়েছে, টার্নওভারের ৬ শতাংশ। টার্নওভারের ওপর হলে ব্যবসা সহজ হবে।
বলা হয়েছে, গার্মেন্টসে যে ঝুট হয়, সেই ঝুট দিয়ে ফাইবার তৈরি হয়। সেই ফাইবার থেকে আবার সুতা তৈরি করা হচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্পে এই সুতা ব্যবহার করা হচ্ছে। ঝুট কেনার ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ ও সুতার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এই শিল্প অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব। এখানে পানি বা অন্য কোনো রাসায়নিক ব্যবহƒত হয় না। মেশিনের সাহায্যে ঝুট থেকে ফাইবার ও ফাইবার থেকে সুতা তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি বা ভ্যাট কমাতে পারলে তুলা আমদানি কমবে, দেশ উপকৃত হবে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) প্রতিনিধি বলেন, বেজা সারাদেশে ১০০টি ইকোনমিক জোন নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার জন্য ভ্যাট, কাস্টমস ও আয়কর থেকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। বেজার পক্ষ থেকে এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানানো হয়। সরকারি নীতি সহায়তা দীর্ঘ সময় অব্যাহত না থাকলে বিনিয়োগ সহায়ক হয় না। ইকোনমিক জোনে উৎপাদিত কয়েকটি পণ্য দেশে উৎপাদিত হওয়ায় সেগুলোর আমদানিতে শুল্ককর বাড়ানো হলে উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বেজার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আয়কর অব্যাহতি দেয়া আছে। এরপরও এসব প্রতিষ্ঠানের আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর কর্তন করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রিম আয়কর কর্তন করা না হলে তাদের দাপ্তরিক কাজ কমে যাবে। এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য (শুল্কনীতি) মাসুদ সাদিক বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় যে পাঁচ বছর, ১০ বছর চলে না, বন্ধ হয়ে যায়। তখন বেজার প্রতিনিধি বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে করের সেই দায়িত্ব বেজা নেবে। আলোচনা সভায় জমি লিজের ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
অন্যদিকে হয়রানি বন্ধে সম্পূর্ণ অটোমোশন না হওয়া পর্যন্ত করদাতাদের জন্য অডিট কার্যক্রম সহজ করার দাবি জানিয়েছে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)। পাশাপাশি আংশিক রপ্তানিকারকদের জন্য কাঁচামালের শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা সহজীকরণসহ একাধিক প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে বেজা আমদানি পর্যায়ে উৎপাদনকারীর জন্য অগ্রিম আয়কর ও বেশকিছু পণ্যে শুল্ক ছাড় চেয়েছে।
বিল্ডের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অটোমেশন প্রক্রিয়া চালুর বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে, যা সম্পূর্ণ কার্যকর হলে অডিটসহ অন্যান্য কর প্রতিপালনীয়
বিষয়গুলো স্বচ্ছ এবং সহজতর হবে। কিন্তু সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় না হওয়া পর্যন্ত হয়রানি বন্ধে করদাতাদের জন্য চলমান প্রক্রিয়ায় অডিট কার্যক্রম কীভাবে সহজতর করা যায় সেই দিকে জোর দেয়া প্রয়োজন।
প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, তিন বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য সব কর প্রদানের পর তাদের ন্যূনতম ৫ বছরের জন্য কোনো আয়কর নিরীক্ষার (ব্যক্তি বা কোম্পানি) অধীন থাকা উচিত নয়। এছাড়া এনবিআর থেকে সর্বোচ্চ কর/ভ্যাট সম্মান পাওয়া কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের পরবর্তী ৩ বছরের জন্য কোনো অডিট প্রক্রিয়ার অধীন থাকাও উচিত নয়। অডিটযোগ্য ফাইল নির্বাচন এবং একটি অডিট প্রক্রিয়ার ওপর করদাতাদের জন্য সুনির্দিষ্ট এবং সহজ অডিট গাইডলাইন প্রণয়ন করা উচিত।