শেয়ার বিজ ডেস্ক: পাকিস্তানের ১৬তম সাধারণ নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় বেশ দেরি হচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা গেছে। ওই ফলাফলে দেখা যায়, বেশ খানিকটা এগিয়ে আছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত মোট ১৩২টি আসনের ফল ঘোষণা করেছে। তার মধ্যে ৪৮টি আসনে জয় পেয়েছেন ইমরানের প্রার্থীরা। খবর: বিবিসি।
বিবিসি উর্দু জানিয়েছে, বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা পর্যন্ত মিনিট পর্যন্ত আসনভিত্তিক প্রাপ্ত ফলাফলে জেতার দিক থেকে এগিয়ে আছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রার্থীরা পেয়েছেন ৩২টি আসন। অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় থাকা নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল) ৪১টি আসন পেয়েছে। বাকি ১১টি আসনে জয়যুক্ত হয়েছে নির্বাচনে অংশ নেয়া অন্যান্য প্রার্থীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবার ভোট গণনায় ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যোগাযোগে গোলযোগের কারণে ভোট গণনায় দেরি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার নির্বাচনের দিন নিñিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভোটগ্রহণ শুরুর মাত্র ১০ মিনিট আগে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল পাকিস্তানে। কল ও ডেটা সেবা, কোনোটিই সচল ছিল না।
গত বুধবার হামলার ঘটনা মোবাইল পরিষেবা বন্ধের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সেদিন পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে প্রার্থীদের কার্যালয়ে দু’টি পৃথক বোমা হামলায় কমপক্ষে ২৮ জন নিহত হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ থাকায় এখন নির্বাচনী ফলাফল আসতে দেরি হচ্ছে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন স্থানীয় কর্মকর্তাদের প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করতে বলেছে। এদিকে ইমরান খানের দল বলছে ফলাফল ঘোষণায় এমন বিলম্ব ভোট কারচুপির লক্ষণ।
এখন পর্যন্ত যেসব আসনের ফলাফল দিয়েছে, তাতে টানটান উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। কারণ আসন সংখ্যার দিক থেকে দলগুলো প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভোটের ফলাফল দিতে দেরি হলেও দেশটির প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ ভোটার এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন যে কে হতে যাচ্ছেন তাদের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। তবে এবারের নির্বাচনে ভোট কারচুপি হোক বা না হোক, সেনাবাহিনীর সুনজরে থাকার কারণে চতুর্থবারের মতো ফের নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করছেন অনেক বিশ্লেষক।
রাষ্ট্রীয় গোপন নথি পাচারের অভিযোগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এখন জেলবন্দি থাকলেও ফলাফলে দেখা যাচ্ছে তার দল সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভালো করছে। নির্বাচনের পরদিন পূর্ণাঙ্গ ফলাফল পাওয়াটা অস্বাভাবিক না হলেও পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তার মাত্রা নজিরবিহীন বলছেন বিশ্লেষকরা।
ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিসের তামান্না সালিকুদ্দিন বিবিসি নিউজডেকে বলেন, এই নির্বাচনের ফলাফল একপ্রকার ‘হয়ে যাওয়া যুক্তি’। তার মতে, এই চুক্তি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ও তার দল পিএমএল-এর বিজয়ের পথ অনেকটা পরিষ্কার করেছে। তিনি বলেন, ‘খুব কম অফিশিয়াল ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে এবং ইসিপি তথ্য প্রকাশ করছে না। আমার মনে হয়, এটা অস্বাভাবিক। যারা এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন, তাদের জন্য এটি একটি বড় বিস্ময়।’
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যে ফলাফল আসছে, তাতে কোনো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বলে মনে করা হচ্ছিল। যদিও তার এমন উন্নতি কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। কারণ মাত্র ছয় বছর আগে, অর্থাৎ গত নির্বাচনের সময় দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল তাকে। স্বেচ্ছা নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ১৯৯৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল। এরপর ২০১৭ সালে তার তৃতীয় মেয়াদের সময় সীমা কমিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি তিনি নির্বাসন থেকে ফিরেছেন। গত বছর তার বিরুদ্ধে দেয়া ক্ষমতায় আসতে আজীবন নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়েছে। সরিয়ে ফেলা হয়েছে তার সব অপরাধের রেকর্ডও। সবমিলিয়ে সেনাবাহিনীর সমর্থনে তিনি আবারও নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন।
বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পি)। অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করা ৩৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিক মূলত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো এবং প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির ছেলে। বেনজির ভুট্টো ২০০৭ সালে বাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে ৫৪ বছর বয়সে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন। ২০২২ সালে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি।