নিজস্ব প্রতিবেদক: যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদসহ ৩৩০ জনকে বৃহস্পতিবার ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি।
বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম গতকাল বুধবার এক বার্তায় বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী উপকূলের নৌবাহিনীর জেটি ঘাট এলাকা দিয়ে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৩৩০ সদস্যকে দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা। তবে দুপক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে ওই বিজিপি সদস্যদের কক্সবাজার থেকে সমুদ্রপথে মিয়ানমারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ৩৩০ জনের মধ্যে ১০০ জনকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্ত এলাকা থেকে টেকনাফে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমারের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ বাংলাদেশের সীমানায় এসে গভীর সাগরে অবস্থান করবে। পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ওই জাহাজে নিয়ে গিয়ে হস্তান্তর করা হবে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।
বাহিনীগুলো হলোÑ তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ। তারা শান, রাখাইন, চীন ও কেয়াহ রাজ্যে লড়াই চালাচ্ছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট দখল করে ইতোমধ্যে তারা সাফল্য দেখিয়েছে।
আরাকান আর্মি (এএ) এ জোটের অন্যতম অংশ। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী এটি। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।
রাখাইনে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। যুদ্ধের গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়ছে এপাড়ে। এরকম ঘটনায় অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন কয়েকজন। ঢাকায় মিয়ানমারের দূতকে ডেকে এসব ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানানো হয় বাংলাদেশের তরফ থেকে।
এদিকে যুদ্ধের মধ্যে বিদ্রোহীরা বিজিপির কয়েকটি সীমান্ত ফাঁড়ি দখল করে নিলে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে। পরের কয়েক দিনে তাদের সংখ্যা পৌঁছায় ৩৩০ জনে।
শুরুতে তাদের নিরস্ত্র করে বিজিবি হেফাজতে রাখা হয় বান্দরবানের একটি স্কুলে। পরে তাদের সরিয়ে নেয়া হয় টেকনাফে।
এর মধ্যেই তাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের তরফ থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মিয়ানমারও তাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়।
কিছুদিন আগে ভারত যেভাবে মিয়ানমারের সৈন্যদের ফেরত পাঠিয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সময়ে প্রত্যাবাসনের জন্য বিজিপি সদস্যদের আকাশপথে ফেরত পাঠানোর কথা বলেছিল বাংলাদেশ।
তবে ধারণক্ষমতা এবং একসঙ্গে সবাইকে নিয়ে যাওয়ার সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে পরে মিয়ানমারের প্রস্তাবে তাদের নৌপথে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।