নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেডিকেল সেক্টরে মাফিয়া চক্র কাজ করে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, এই মাফিয়া চক্র ওষুধসহ মেডিকেল উপকরণ সরবরাহে রি-এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।
পাশাপাশি আদালত বলেন, স্বাস্থ্য খাত নিয়ে সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। শুধু আদেশ দিলাম, পত্রিকায় নাম আসল এটা আমরা চাই না। ১৮ কোটি মানুষের উপকার হবে এমন কিছু করতে চাই।
গতকাল রোববার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া রিটের শুনানিতে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালত এ মামলায় পরবর্তী আদেশের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এবিএম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।
আদালত এই মামলায় দেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে তথ্য ও আইন তুলে ধরার জন্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনিরকে ‘ইন্টারভেনর’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আইওয়াশ ও হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ।
ওইদিন আদালত বলেছিলেন, দায় এড়ানোর জন্য তারা এ ধরনের রিপোর্ট দাখিল করেছেন।
আদালত বলেন, শিশু আয়ানের অ্যাজমা সমস্যা থাকার কথা জানার পরও কেন চিকিৎসকরা অপারেশনের জন্য এত তাড়াহুড়া করলেন? শিশু আয়ানের সুন্নতে খতনা করার সময় যে পরিমাণ ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে, হার্টের বাইপাসেও এত ওষুধ লাগে না।
গত ২৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দাখিল করা প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়েছে, ৫ বছর ৮ মাস বয়সী আয়ানের ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা (হাঁপানি) ছিল। এই বয়সে অটোপিক বা অ্যালার্জিক অ্যাজমা হয়ে থাকে। ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা অ্যালার্জেন (অতি সংবেদনশীলকারক) দিয়ে হয়।
অস্ত্রোপচারের আগে আয়ানকে অ্যানেসথেসিয়া বা সংবেদনহীন করতে প্রয়োগ করা ইনজেকশন প্রোফোফল মারাত্মক অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া (অ্যানাফিল্যাকটয়েড রিঅ্যাকশন) সৃষ্টি করতে পারে; যা শ্বাসতন্ত্র সংকোচিত হয়ে (ল্যারিঙ্গো স্পাজম) বা (ব্রঙ্কোস্পাজম) শ্বাসনালির আশপাশের পেশি শক্ত হয়ে খিঁচুনি হয়ে থাকতে পারে; যা অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ম্যানেজ করেছেন।
চার নম্বর মতামতে বলা হয়েছে, সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) এবং ওষুধ দিয়ে (মেডিকেশন) আয়ানের হƒদস্পন্দন ফিরিয়ে আনতে ১০ মিনিটের মতো সময় লেগেছিল। যার কারণে হাইপক্সিক ব্রেইন ইনজুরি (মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ বন্ধ হয়ে মৃত্যু) হয়ে আয়ানের মৃত্যু হতে পারে। তখন সিটি স্ক্যান বা ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাম-ইসিজি করলে হাইপক্সিক ব্রেন ইনজুরি হয়েছিল কি না, তা জানা যেত। তাছাড়া সিপিআর কারণে (রিব ফ্রেকচার) পাঁজরের হাড়ও ভেঙে যেতে পারে বলে ধারণার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আয়ান চাইল্ডহুড অ্যাজমা সমস্যায় ভুগছিল। শ্বাসকষ্টের জন্য আয়ানকে মাঝে মধ্যে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেয়া লাগত। সুন্নতে খতনার অপারেশনের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি।
প্রতিবেদনের মতামত অংশে আরও বলা হয়, শিশু আয়ানের অপারেশনের সময় স্বাভাবিক রক্তপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে উপপরিচালক (আইন) ডা. পরিমল কুমার পাল ১৫ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন জমা দেন।
উল্লেখ্য, সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় শিশু আয়ানের। এ ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পাশাপাশি প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।