ভাষার মাসেও অবহেলিত কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শহিদ মিনার

আসলাম বেগ, প্রতিনিধি: ‘ফেব্রুয়ারি’ বাঙালির গর্বের মাস, ভাষার মাস। বায়ান্নর এ মাসেই ভাষার দাবিতে প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা অনেক তরুণ তাজা প্রাণ। একটি ভাষা, একটি জাতির বড় পরিচয়, যা আমরা পেয়েছি শহিদদের জীবন উৎসর্গের মধ্য দিয়ে। রক্তের সিঁড়ি বেয়ে রচিত হয়েছিল ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জনের এক অমোঘ ইতিহাস। এই মাস এলেই বাংলা ভাষা নিয়ে চলে নানা ধরনের আয়োজন, পরিষ্কার করা হয় শহিদ মিনারগুলো। অথচ বছরের অন্যান্য সময় অবহেলায়, অপরিচ্ছন্নতায় নষ্ট হয় শহিদ মিনারের পরিবেশ ও গাম্ভীর্য। এই চিত্র দেখা গেছে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের ক্ষেত্রেও।

দুই দিন আগেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহিদ মিনার পরিষ্কার থাকার কথা থাকলেও সবচেয়ে অবহেলিত এবং উপেক্ষিত। এর কিছু কিছু অংশে ভেঙে গেছে। পাশের গাছগুলো থেকে শুকনো পাতা পড়ে মিনারের চারপাশ অপরিষ্কার হয়ে আছে। স্টিলের রেলিংগুলো মরিচা পড়ে গেছে। দীর্ঘদিন কোনো যত্ন না নেয়ায় মিনারের রং পরিবর্তন হয়ে গেছে। এছাড়া মিনারের গায়ে জমে আছে শেওলার আস্তরণ। শহিদ মিনারটির সুরক্ষায় নেই কোন সীমানা প্রাচীর। ফলে কুকুর, বিড়াল থেকে জুতা পায়ে উঠে পরে দর্শনার্থীরাও। ভাষার মাস উপলক্ষেও কোনো রকমের রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে।

আর এক দিন পরেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বছরজুড়ে অবহেলায় পড়ে থাকা জরাজীর্ণ শহিদ মিনারটি স্বেচ্ছায় পরিষ্কার করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিফাত হারুন আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী।

পরিষ্কার কার্যক্রমে নেতৃত্বদানকারী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ছাত্রলীগ নেতা সিফাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র শহিদ মিনারটি ভাষার মাস উপলক্ষে যেন একটু হলেও যত্নে থাকে সেজন্য এই উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু প্রশাসনের উচিত খুবই গুরুত্বের সঙ্গে শহিদ মিনারটি পরিচর্যা করা। শুধু ভাষার মাস না, বছরের প্রতিটি দিন যেন পরম যত্নে থাকে আমাদের বীর সন্তানদের স্মৃতি রক্ষার্থে শহিদ মিনারটি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান খান শুভ বলেন, ‘আজ সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের শহিদ মিনারের ওদিকে গেছিলাম। শহিদ মিনারের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় চোখে পড়ল আবর্জনা। দেখে মনে হচ্ছে কোনো কাঁচাবাজারের সামনে দিয়ে যাচ্ছি। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার। মিনারকে এমন অপরিচ্ছন্ন যত্নহীন অবস্থায় ফেলে রাখা ভাষা শহিদদের অপমানের শামিল। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে বিষয়টি আমার কাছে খুবই লজ্জার।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মাওলা প্রিন্সকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবোধের চর্চা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলন ও শহিদ মিনার আমাদের জীবন-মন-সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যে-কারণে শুধু একটি মাসের একটি দিনে শহিদ মিনার গুরুত্ব পাবে, তা মোটেও কাম্য নয়। কোনো শহিদ মিনার পরিত্যক্ত হবে, অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকবে, তা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

শহিদ মিনারের অযত্ন-অবহেলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবির বলেন, ‘সারাদেশেই তো শহিদ মিনারের কার্যক্রম ভাষার মাসকেন্দ্রিক। আমাদের এখানেও তাই করা হয়। তবে শহিদ মিনার তো একটা পবিত্র জায়গা। এটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বা এটার পবিত্রতা রক্ষা করার দায়িত্ব শুধু প্রশাসনের না। ওখানে যারা যাবে তাদেরও এটা মাথায় রাখা উচিত।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০