দোয়েল মাহমুদ: বেশ কিছুদিন ধরে ছোট ভাইয়ের আবদার, তাকে নিয়ে বেড়াতে যেতে হবে। কিছুতেই সে মানবে না, যেতেই হবে। যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বাদ সাধলো কর্মব্যস্ততা। সীমাহীন ব্যস্ততার মধ্যে কীভাবে যে বেড়াতে যাই! তবুও রাজধানীর ভেতরে কোথাও যাওয়া যায় কি না, তাই ভাবছিলাম। ভাবছিলাম এমন জায়গায় যেতে হবে যেখানে গেলে দিনের মধ্যেই বাসায় ফেরা যাবে। অনেক ভেবেচিন্তে বিমানবাহিনী জাদুঘরে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম।
মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় দুপুরের পর বেরিয়ে পড়ি। কারণ জাদুঘরটি বিকালের দিকে খোলা থাকে। মিরপুর এক নম্বর থেকে আলিফ পরিবহনের বাসে চড়ে চলে যাই আগারগাঁও বিমানবাহিনী জাদুঘরে। আইডিবি ভবনের সামনে পুরোনো বিমানবন্দরের রানওয়ের পশ্চিম পাশে সুবিশাল জায়গা নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে জাদুঘরটি। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস ও স্বাধীনতাযুদ্ধে ব্যবহার করা বিমান ও হেলিকপ্টারসহ নানা নিদর্শন তুলে ধরতেই স্থাপন করা হয়েছে এই সামরিক জাদুঘরটি।
বিকাল ৫টার দিকে আমরা পৌঁছে গেলাম জাদুঘরে। ছোট ভাইয়ের বয়স দুবছরের বেশি হওয়ায় তার জন্যও টিকিট নিতে হলো। আমরা টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করলাম। দুবছরের কম বয়সী শিশুদের টিকিটের প্রয়োজন হয় না। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য রয়েছে ৫০ শতাংশ ছাড়।
ভেতরে ঢুকেই পরিচয় হলো অটোরিকশাচালক মো. সোহেলের সঙ্গে। পুরো বিমানবন্দরে তার এই একটি অটোরিকশাই চলাচল করে। কথা বলে জানতে পারলাম, প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে এক হাজার দর্শনার্থী এখানে বেড়াতে আসেন। শুক্রবারে এ সংখ্যা তুলনামূলক বেশি থাকে। শুক্র ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা ও সোম থেকে বৃহস্পতিবারে বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জাদুঘরটি খোলা থাকে। রোববার বন্ধ।
আমাদের বেড়ানো শুরু সোহেলের অটোতে চড়ার মধ্য দিয়ে। এজন্য গুনতে হলো ৬০ টাকা। সোহেল অনেক সময় নিয়ে আমাদের ভেতরটা ভালো করে ঘুরিয়ে দেখালেন। সব উড়োজাহাজ কিংবা হেলিকপ্টারের ইতিহাস তার জানা। তিনি আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন হান্টার বিমানের সঙ্গে, যা মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় বিমানবাহিনী বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে উপহার দিয়েছিল। এন-২৪ বলাকা বিমানটি দেখে খুব ভালো লাগলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ বিমানে চড়েই বিভিন্ন রাষ্ট্র সফর করেছেন। রাশিয়ার তৈরি এই বিমান বাংলাদেশে আসে ১৯৫৮ সালে। এছাড়া এফটি-৭ বিমান, এফ-৮৬ যুদ্ধবিমান, এ-৫ বিমান, পিটি-৬ বিমান, ফুগাসি এম-১৭০ বিমান প্রভৃতি দেখি সেদিন।
দু-একটা বিমান সম্পর্কে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কাছ থেকে জেনে নিই। এখানে নিরাপত্তার জন্য রয়েছে সিসিক্যাম ও সিকিউরিটি গার্ড।
বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর ছোট ভাই বায়না ধরলো, সে বিমানে উঠবে। আবারও দুটি টিকিট কেটে উঠে পড়ি বিমানে। পাইলটের সিটে বসে দু-একটা ছবিও তুলেছি দুজনে।
বিমানে থেকেই সে বিশাল ডিম্বাকৃতির একটি জিনিস আবিষ্কার করলো। জানতে চাইলো এটা আবার কেমন বিমান? ডিম্বাকৃতির সেটা কী তা পরখ করতেই দুই ভাই চলে গেলাম তার কাছাকাছি। সেখানে গিয়ে জানতে পাড়লাম এটি একটি থিয়েটার। ভেতরে লেজার লাইটের মাধ্যমে অ্যানিমেশন সিনেমা দেখানো হয়। ৪০ টাকা টিকিট। এটি ছাড়া শিশুদের খেলার জন্য ছোট তিনটি পার্ক রয়েছে জাদুঘর চত্বরে। পার্কগুলোয় বিভিন্ন রাইড রয়েছে, যেমন রেন্জার, বেবি ট্রেন, স্লিপার প্রভৃতি।
ঘোরাঘুরির পর চলে আসি একটি খাবার দোকানে। এখানে খাবার, খেলনা, রেস্তোরাঁসহ ৯টি দোকান রয়েছে। জাদুঘরের ভেতরে আরও একটি পার্ক রয়েছে, এর নাম স্কাই পার্ক। এখানে মূলত ছোট শিশুদের বিভিন্ন রাইড রয়েছে। সময়স্বল্পতার কারণে আমরা আর সেদিকে গেলাম না। সন্ধ্যা ৭টার দিকে অনেক মজা করে সঙ্গে মজার স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসি।
Add Comment