নিজস্ব প্রতিবেদকঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে দরপতনের শীর্ষে ছিল খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড : প্যাকেজিং লিমিটেড। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে ২১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আর গত সপ্তাহে কোম্পানিটির মোট ১৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দৈনিক গড় হিসাবে এ লেনদেন ছিল ৩ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার টাকা। স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, উৎপাদন এবং পরিচালনা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কাগজ ও মুদ্রণ খাতের প্রতিষ্ঠান খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তারা কোম্পানিটির কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে কার্যক্রম বন্ধ দেখতে পান। সিকিউরিটিজ আইনানুসারে কারখানা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে সে তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও স্টক এক্সচেঞ্জকে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানায়নি কেপিপিএল। তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন করছে ডিএসই।
২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৭৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। পুঞ্জীভূত লোকসান রয়েছে ৮৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, ১ দশমিক ১১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে এবং বাকি ৫৯ দশমিক ১৩ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) কেপিপিএলের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১১ পয়সা, আগের হিসাববছরে যা ছিল ২ টাকা ৯৯ পয়সা। সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৬ পয়সা, আগের হিসাববছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৯৬ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৯৮ পয়সায়।
সর্বশেষ ছয় বছর ধরে টানা লোকসানে রয়েছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। সর্বশেষ বছরগুলোয় কোম্পানিটির ব্যবসার পরিধিও ছোট হয়েছে। আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ হিসাববছর থেকে টানা লোকসানে রয়েছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। আলোচ্য হিসাববছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছিল ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ সামান্য আয়ের বিপরীতে কোম্পানিটিকে পরিচালন লোকসান গুনতে হয়েছে ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। বিভিন্ন খরচ শেষে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। লোকসানের কারণে আলোচ্য হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। একইভাবে পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ হিসাববছরেও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। আলোচ্য হিসাববছরে কোম্পানিটি আয় দেখিয়েছে শূন্য। এ সময়ে তাদের পরিচালন লোকসান গুনতে হয়েছে ২ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছিল ৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
২০১৮-১৯ হিসাববছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাব বছরে আয় আগের বছরের তুলনায় বাড়লেও কোম্পানিটির পরিচালন লোকসান গুনতে হয়েছে ৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।
২০১৯-২০ হিসাববছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছিল ১০৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটি পরিচালন মুনাফায় ফিরলেও বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান গুনতে হয়েছে ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাববছরে তারা শেয়ারহোল্ডারদের দশমিক ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০২০-২১ হিসাববছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ৫২ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে পরিচালন লোকসান হয়েছে ৪০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছিল ৪৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাববছরে শেয়ারেহাল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।
সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাববছরে কোম্পানিটির আয় আরো কমার পাশাপাশি নিট লোকসানও কমেছে। এ সময়ে কোম্পানিটির আয় হয়েছে মাত্র ১৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে পরিচালন লোকসান গুনতে হয়েছে ২০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ২২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। লোকসানে থাকায় সর্বশেষ হিসাববছরেও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশের সুপারিশ করেনি কোম্পানিটি।