অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে একটি বহুতল ভবনে আগুনে অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে খবর এসেছে, ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর তা ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পাশাপাশি ক্রেনের সাহায্যে ভবনের সপ্তম তলা ও ছাদে আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিদের নামিয়ে আনতে থাকেন তারা।

নিকট অতীতে রাজধানীতে অনেকে অগ্নিদুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ২০১০ সালের ৩ জুন রাতে পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম থেকে ছড়ানো আগুনে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় রাসায়নিক গুদামে আগুনে প্রাণ হারান ৭১ জন। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনে ২৭ জন প্রাণ হারান। গত বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন এলাকায় ১২ দিনে পাঁচটি মার্কেটে বড় অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এগুলোয় প্রাণহানি না হলেও কোটি কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে গেছে, পথে বসেছেন হাজারো ব্যবসায়ী। এরপর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্বান্ত হন ৮০০ ব্যবসায়ী।

প্রতি বছরই অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়, অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে নানা পরামর্শ আসে। কিন্তু পরবর্তী সময় তা চাপা পড়ে যায়। সন্দেহ নেই রাজধানীতে অগ্নিকাণ্ডের প্রতিটি ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হলো অগ্নিদুর্ঘটনাগুলোর সময়, প্রকৃতি ও একই ধরনের ভবন (অর্থাৎ ঝুঁকিপূর্ণ)। কয়েকটি অগ্নিদুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অনেকে বলেছেন, তাদের বিতাড়নে এ কৌশল নেয়া হয়েছে। কেননা এসব মার্কেট অনেক দিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ এবং আবার ভেঙে মার্কেট করার কথা রয়েছে। বেইলি রোডের ভবনটির বাসিন্দাদের তাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা ছিল কি না, তা জানা যায়নি।

রাজধানীর বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবন অনেক আগে থেকেই অতি ঝুঁকিপূর্ণ। ফায়ার সার্ভিস একাধিকবার চিঠি দিলেও ঝুঁকিপূর্ণ এবং অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিপণিবিতানগুলোর সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সমিতি কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বেইলি রোডে ভবনের অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর জানা গেল এ ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার নোটিসও দিয়েছে, কর্ণপাত করেনি কেউ। এখন জীবন দিয়ে, জীবš§ৃত হয়ে এবং পরিবারকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়ে মাশুল দিতে হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের জন্য একে অপরের প্রতি দায় না চাপিয়ে বরং কীভাবে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া যায়, তার ওপর জোর দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ডিএসসিসিসি কর্তৃপক্ষের উচিত হবে প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা। শুধু তা-ই নয়, অগ্নিদুর্ঘটনা ও ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা ভবন চিহ্নিত করে সেগুলোর বাসিন্দাদের সরিয়ে ফেলতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০