সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: দেশে চিনির চাহিদা ধরা হয় বছরে ২০ থেকে ২২ লাখ টন। এর প্রায় পুরোটাই পূরণ করা হয় আমদানির মাধ্যমে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয় মোট ২১ লাখ ৭৫ হাজার টন চিনি। এর মধ্যে অপরিশোধিত ছিল ২১ লাখ ৬১ হাজার টন, যার ৭০ শতাংশই আমদানি করে সিটি ও মেঘনা গ্রুপ। বাকি ৩০ শতাংশ আমদানি করে আব্দুল মোনেম, এস আলম ও দেশবন্ধু গ্রুপ ।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোট ২১ লাখ ৭৫ হাজার টন চিনি আমদানি করা হয়, যার আর্থিক মূল্য সাত হাজার ৯৩৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পুরো চিনিই বেসরকারি খাতে আমদানি করা হয়।
তীর ব্র্যান্ডখ্যাত সিটি গ্রুপের সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড আমদানি করে আট লাখ ৮৯ হাজার টন, যার আর্থিক মূল্য তিন হাজার ৩০৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ কোম্পানিটি ২০১৫-১৬ অর্থবছরেও সর্বোচ্চ চিনি আমদানিকারক ছিল। ওই বছর আট লাখ ছয় হাজার টন চিনি আমদানি করে সিটি সুপার।
জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা শেয়ার বিজকে বলেন, চিনির বাজারে শীর্ষ ব্র্যান্ড তীর। চাহিদা মেটাতে নিয়মিত বাজারে চিনি সরবরাহ করে আসছে সিটি। বর্তমান বাজারে সরকার নির্ধারিত ৬০ টাকা মূল্য হলেও আমরা বাজারে চিনি সরবরাহ করছি ৫২ থেকে ৫৩ টাকায়।
চিনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় পরের স্থানে আছে ফ্রেশ ব্র্যান্ড নামে বাজারজাত করা মেঘনা গ্রুপ । এরা ইউনাইটেড সুগার মিল লিমিটেড নামে চিনি আমদানি করে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মেঘনা গ্রুপ ছয় লাখ ১৩ হাজার টন চিনি আমদানি করে, যার আর্থিক মূল্য এক হাজার ৯৯১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। মেঘনা গ্রুপ ২০১৫-১৬ অর্থবছরেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানিকারক ছিল। ওই অর্থবছরে তারা আমদানি করে পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার টন চিনি।
বাকি ৩০ শতাংশ তিনটি শিল্প গ্রুপ আব্দুল মোনেম, এস আলম ও দেশবন্ধু গ্রুপ মিলে আমদানি করে। ঈগলু ব্র্যান্ডখ্যাত আব্দুল মোনেম গ্রুপ আছে তালিকার তৃতীয় স্থানে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে গ্রুপটি আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেড নামে দুই লাখ ৮৮ হাজার টন চিনি আমদানি করে। এই গ্রুপ আগের অর্থবছরেও প্রায় সমপরিমাণ চিনি আমদানি করে। শীর্ষ পাঁচ আমদানিকারকের চতুর্থ স্থানে আছে চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ । গ্রুপটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চিনি আমদানি করে দুই লাখ ২২ হাজার টন। আমদানি তালিকায় সবার শেষে আছে ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশবন্ধু গ্রুপ । গ্রুপটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক লাখ ৩৯ হাজার টন চিনি আমদানি করে।
অন্যদিকে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে পরিশোধিত ১৩ হাজার ৪৮০ টন চিনি আমদানি করে ৫৪টি প্রতিষ্ঠান। পরিশোধিত চিনি আমদানিকারকের প্রায় সবগুলোই বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি। ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে এসব চিনি আমদানি করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিটি গ্রুপ প্রতিদিন বাজারে চিনি সরবরাহ করে প্রায় তিন হাজার টন, মেঘনা গ্রুপ দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০, ঈগলু গ্রুপ ৫০০ থেকে ৭০০, এস আলম ও দেশবন্ধু গ্রুপ থেকে সরবরাহ করা হয় ৫০০ টন।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে উৎপাদিত ও আমদানির পর চাহিদার তুলনায় চিনি বেশি থাকার কথা, সেই ক্ষেত্রে বাজারে চিনির সংকট হওয়ার কথা নয়। তবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ও রোজার আগে মিল সংস্কার অথবা যে কোনো খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে বাজারে চিনির দাম বৃদ্ধি করে বেসরকারি চিনিকল মালিকরা।
পাইকারি ব্যবসায়ী মো. আলমগীর পারভেজ বলেন, আজ চিনির বাজারদর মণপ্রতি এক হাজর ৭৯০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল আরও ৬০ টাকা বেশি। এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি পাওয়া গেলেও রোজার সময় চাহিদা অনুযায়ী চিনি পাওয়া যায়নি।
Add Comment