শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যায় পাঠদান ব্যাহত

দ্বিপাল ভট্টাচার্য্য, সুনামগঞ্জদীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক সংকটে ভুগছে হাওরপাড়ের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ভরসাস্থল সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ। শিক্ষক সংকটসহ বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত কলেজটিতে ধুঁকে ধুঁকে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। জেলার প্রাচীন বিদ্যাপীঠ হিসেবে হাওরপাড়ের শিক্ষার্থীরা এ কলেজ থেকে : মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন দেখেন। অন্য কোথাও গিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ কিংবা সামর্থ্য না থাকায় প্রতি বছর এই কলেজে হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তবে ভর্তি হওয়ার পরেই ঘটে বিপত্তিÑনা পান পর্যাপ্ত ক্লাস, না পান উচ্চশিক্ষার কোনো সুযোগ-সুবিধা। যার ফলে ফলাফলে ঘটে বিপর্যয়। জেলায় কিছুটা ভালো করলেও বিভাগীয় পর্যায়ে বরাবরই পিছিয়ে থাকে কলেজটি। জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের কেন এমন অবস্থা? এ উত্তর জানতে গেলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তুলে ধরেন দীর্ঘদিনের শিক্ষক সংকটের কথা। তারা জানান শিক্ষক সংকট দূর করার জন্য বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সংকটের সমাধান হয়নি।

জানা যায়, ১৯৪৪ সালের শেষভাগে আসামের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ সাদউল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে সুনামগঞ্জ কলেজের দ্বার উšে§াচন করেন। এটিই ছিল তৎকালীন আসাম প্রদেশের প্রথম প্রাইভেট বিজ্ঞান কলেজ। পরে ১৯৮০ সালে  জাতীয়করণ করা হয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার কারণে তারা কখনোই রুটিন অনুযায়ী ক্লাস পান না। যার ফলে শেষ হয় না সিলেবাস। অন্যদিকে শিক্ষকদের জন্য আবাসন সুবিধা না থাকায় যে কয়জন শিক্ষক আছেন তাদের বেশিরভাগই সিলেটে থেকে আসা-যাওয়া করেন। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই বিঘ্নিত হয় পাঠদান। সব মিলিয়ে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ হাওরাঞ্চলের বৃহত্তম এই  কলেজের দিকে নজর নেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। আর তাদের নজর নেই বলেই বছরের পর বছর বহুমুখী সংকটে ধুঁকছে কলেজটি এবং মানসম্মত  শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাওরপাড়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী; যা মেনে নেয়া কষ্টকর।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, ‘পদ অনুযায়ী শিক্ষক থাকার কথা ৫২ জন কিন্তু আছেন মাত্র ২৮ জন। অন্যদিকে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার।’

শিক্ষক সংকটের চিত্র তুলে ধরে কলেজটির অধ্যক্ষ প্রফেসর শামসুল আলম বলেন, ‘জেলার বৃহত্তম বিদ্যাপীঠে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদান করতে আমরা বদ্ধপরিকর। কিন্তু শিক্ষক সংকটের কারণে সেটি অনেকাংশেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কলেজে শিক্ষক সংকট দূর করাসহ নতুন পদ সৃষ্টি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভাইস প্রিন্সিপালসহ (প্রশাসনিক পদ) ২২ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। বিপরীতে ইন্টার, অনার্স, ডিগ্রি, মাস্টার্স মিলিয়ে ১০ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী। বিপুল পরিমাণ এই শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষক সংকট দূর করা অতিব জরুরি। এ ব্যাপারে আমরা স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্যদের সহযোগিতা প্রয়োজন।’ “

শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মোহাম্মদ জমসিদ আলী বলেন, ‘কলেজে যেসব বিষয়ে  অনার্স কোর্স চালু আছে, সেসব বিষয়ের জন্য শিক্ষক প্রয়োজন ৭ জন আর মাস্টার্স কোর্সের সহ শিক্ষক প্রয়োজন হয় ১২ জন। অথচ কলেজের ১০টি বিষয়ে অনার্স ও ৪টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্সের জন্য শিক্ষক রয়েছেন ২ জন বা ১ জন করে। কোনো কোনো সময় দেখা যায় একজনও থাকেন না। এ অবস্থায় কলেজের পাঠদান বিঘ্নিত হয়।’

কলেজের শিক্ষার্থী মো. ইব্রাহীম মিয়া বলেন, ‘কলেজে শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের। দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা কলেজে এসে ক্লাস না পেয়ে ঘোরাঘুরি করে বাড়ি ফিরে যায়। যার ফলে প্রান্তিক জেলার শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং বিভিন্ন পরীক্ষায় কলেজের ফলাফল খারাপ হচ্ছে। আমাদের একটাই দাবি, অনতিবিলম্বে কলেজের শিক্ষক সংকট দূর করা হোক।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০