গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। বেইলি রোডের বহুতল ভবন গ্রিন কোজি কটেজে প্রাণহানি ঘটেছে ৪৬ জন মানুষের। এরপর জানা গেল ভবন অগ্নিঝুঁকিতে, তা জানত সরকারি সংস্থা। তিনবার চিঠি দেয়ার পরও তা আমলে নেননি ভবন মালিক। বছরের পর বছর ধরে রাজধানীজুড়ে এরকম নিরাপত্তাহীন পরিবেশে অনুমোদনহীন রেস্তোরাঁ ব্যবসা চলে আসছে। এখন রাজধানীর বিভিন্ন জায়গার রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা করে আসছে পুলিশ। এতে কিছু রেস্টুরেন্ট সিলগালা করে দেয়ার পাশাপাশি কয়েকজনকে আটকও করা হয়। এ অভিযান আতঙ্কে অনেক রেস্তোরাঁ মালিক স্বেচ্ছায় বন্ধ করে দিচ্ছেন।
অভিযান পরিচালনা করে রেস্তোরাঁ বন্ধ করা স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। এমনকি সাময়িক সমাধানও নয়। রেস্তোরাঁ শিল্পে হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকার প্রশ্ন জড়িত। তাদের ৯৫ শতাংশই অতি নিরীহ সাধারণ মানুষ। সামনেই ঈদুল ফিতর। ৪৬ জন মানুষের প্রাণহানির ঘটনা কোনোভাবেই তুচ্ছ বিষয় নয়, তেমনি ঢালাওভাবে রেস্তোরাঁ বন্ধ করা হলেও অনেক মানুষ পথে বসবে।
গতকাল ‘রেস্তোরাঁ ব্যবসা: ১৩ ছাড়পত্র নিয়মে আছে, কেউ নেই ধারেকাছে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে একটি সহযোগী দৈনিকে। প্রতিবেদনের ভাষ্য: যেসব রীতি মেনে রেস্তোরাঁ ব্যবসা চালানোর কথা, রাজধানীর তারকা হোটেল ছাড়া আর কেউ ওসব নিয়মের ধারেকাছে নেই। স্থানভেদে সরকারি কমবেশি ১৩ প্রতিষ্ঠান-দপ্তর থেকে অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও মাত্র দু-তিনটি ছাড়পত্র হাতে নিয়েই দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে রেস্তোরাঁ ব্যবসা। অনেকে একটি ব্যবসায়িক নিবন্ধন নিয়ে পাঁচ-সাতটি শাখা খুলে বসেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রেস্তোরাঁ ব্যবসার নিয়মকানুন এত জটিল করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তর-সংস্থার অনুমতি নিতে গেলে গলদঘর্ম হতে হয়। ঘাটে ঘাটে ঢালতে হয় টাকা। এসব কারণে ব্যবসায়ীরা অনুমতি নেয়ার ক্ষেত্রে মুখ ফিরিয়ে নেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে এক ছাতার নিচে আনার দাবি জানিয়ে আসছি, তবে কাজ হচ্ছে না। যে কারণে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতারা মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টেরও পূর্ণাঙ্গ কাগজপত্র সংগ্রহ করতে পারেননি। দু-চারটি দপ্তর-সংস্থার অনুমতি নিয়েই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রেস্তোরাঁ ব্যবসার জন্য ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি ছাড়াও সিটি করপোরেশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কলকারখানা অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ বিভাগসহ মোট ১৩টি দপ্তর-সংস্থার অনুমতি নিতে হয়। তবে বেশির ভাগ রেস্তোরাঁ শুধু জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অনুমোদন ও সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদনের বিষয়টি একটু জটিল বলে অনেকেরই সে অনুমোদন নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়মিত ভ্যাট আদায় করলেও অনেক রেস্তোরাঁ সংস্থাটির অনুমোদনের বাইরেই রয়ে গেছে। অবশ্য এনবিআরের অনুমোদন পাওয়া সহজ। কেননা সংস্থাটি রাজস্ব আদায় বাড়ানোর স্বার্থেই সহজে অনুমোদন দেয়। সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রেও তা-ই। তাই বলা যায়, দায় কমবেশি সবার আছে। কেবল নিরীহ রেস্তোরাঁ কর্মীদের বিপদে ফেলার কোনো নৈতিক ও মানবিক যুক্তি নেই। বরং আইনের শাসন ও জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু করে অনাকাক্সিক্ষত অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানি কমিয়ে আনা সম্ভব।