নিজস্ব প্রতিবেদক: খোল করতাল, ঢাকের বাদ্যি ও শঙ্খধ্বনি। সঙ্গে ভক্তদের নাচ, উলুধ্বনি। গতকাল বিজয়া দশমীতে এমনি উৎসমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব। বিসর্জনের আগে সিঁদুর ও রংখেলায়ও মেতে ওঠেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
দেবী দুর্গাকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। গতকাল শনিবার রাতে চোখের জলে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান ভক্তরা। রাজধানীসহ সারা দেশে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পুকুর, খাল, বিল, নদীসহ অন্য জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মর্ত্য ছেড়ে আবারও স্বর্গলোকে গমন করলেন দুর্গতিনাশিনী দুর্গা।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেবীপক্ষ। মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে ২৬ সেপ্টেম্বর শুরু হয় পাঁচ দিনের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিবারের মতো মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষরা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেছেন।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের আয়োজকরা জানিয়েছেন, বৃষ্টি উপেক্ষা করে উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গতকাল সকালে বিজয়া দশমীর পূজা আরম্ভ হয়। এরপর পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হয় সকালেই। সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে দেবীর দর্পণ বিসর্জন দেওয়া হয়। হিন্দু সধবা নারীরা প্রতিমায় সিঁদুর পরিয়ে দেন, নিজেরা একে অন্যকে সিঁদুর পরান। একে অপরকে রঙে রাঙান তারা। মূলত এ দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সকালে দেবীর শাস্ত্রীয় বিসর্জন সম্পন্ন হয়। বিকালে বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিক শোভাযাত্রা বের করা হয়। এরপর বিসর্জনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হয়। বিসর্জনের আগে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পানি ছিটিয়ে ও কিছু নিয়ম মেনে কাঁধে করে প্রতিমা নৌকায় তোলা হয়। মাঝ নদীতে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করে।
এ বছর পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন। নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ, নারী-পুরুষের আসা ও বের হওয়ার আলাদা পথ এবং পরিচয় কার্ডধারী নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে ২৪ ঘণ্টা তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। বিজয়া দশমীর রাত ৮টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বছর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।
Add Comment