জার্মানিতে টেসলার কারখানায় আগুন, উৎপাদন বন্ধ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: জার্মানির ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যে গত মঙ্গলবার ভোরে টেসলার গিগা ফ্যাক্টরিতে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় অন্তত সাত দিন বন্ধ থাকছে টেসলার কারখানাটি। খবর: ডয়েচে ভেলে।

গ্রুনহাইডে এলাকার ওই কারখানায় প্রতিদিন ৭৫০টি গাড়ি তৈরি হতো। ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে একটি বৈদ্যুতিক পাইলনে আগুন জ্বলে ওঠার পর পুরো এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ফলে সারাদিন কারখানায় কোনো কাজ হয়নি। কারখানার ১২ হাজার কর্মীকে দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়।

আগুনের সূত্রপাত যেখানে, তার কাছেই জড়ো করা রাখা হয়েছিল অনেক পুরোনো টায়ার। তাই ধারণা করা হচ্ছিল, কেউ পরিকল্পনা করে গাড়ির কারখানায় আগুন দিয়েছে।

এর আগে টেসলা প্ল্যান্টের কাছে বার্লিনের দক্ষিণ-পূর্বে একটি বিদ্যুতের টাওয়ারে আগুন জ্বলার খবরে মঙ্গলবার ভোরে জরুরি পরিষেবাগুলোকে ডাকা হয়েছিল। পরে আগুন নিভিয়ে ফেলা হলেও লাইনগুলো ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ায় ব্র্যান্ডেনবার্গ প্রদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির এই কারখানার পাশাপাশি আশপাশের গ্রামগুলোও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, তারা সন্দেহজনক এই অগ্নিসংযোগের তদন্ত শুরু করেছে।

পরিকল্পিতভাবে অগ্নিসংযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় ভলকানো গ্রুপ (ফুলকান গ্রুপ) দায়িত্ব স্বীকার করার পর। চরম বামপন্থি পরিবেশ সংস্থাটি আগুন ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই খোলা চিঠি প্রকাশ করে।

আগুনে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় জার্মানিতে অন্তত সাত দিন বন্ধ থাকছে টেসলার কারখানা। বামপন্থি সংগঠন ভলকানো গ্রুপ আগুন লাগানোর দায় স্বীকার করেছে।

টেসলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগুনে কয়েকশ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। কারখানায় আবার কাজ শুরু করতে অন্তত এক সপ্তাহ লাগবে বলেও জানিয়েছে তারা।

ভলকানো গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা আজ টেসলাকে সাবোটাজ করেছি। টেসলার সিইও ইলন মাস্ককে ‘টেকনো-ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রমিকদের শোষণ, পরিবেশের ক্ষতিসাধন চলছে এবং সেখানে নজরদারির প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। খোলা চিঠিতে ভলকানো গ্রুপ দাবি করে, টেসলাকে হাঁটুর কাছে নিয়ে আসার জন্য এমন নাশকতামূলক কাজ করা হয়েছে।

ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার। তিনি বলেন, এটা মারাত্মক অপরাধ, কোনোভাবেই এটাকে জায়েজ ভাবা যায় না।

অন্যদিকে ইলন মাস্ক বলেছেন, এরা (ভলকানো গ্রুপ) হয় বিশ্বের সবচেয়ে বোবা ইকো-টেররিস্ট, নয়তো এরা তাদের হাতের পুতুল যাদের কোনো ভালো পরিবেশগত লক্ষ্য নেই।

কট্টরপন্থি এই গ্রুপটি এর আগে টেসলার এই কারখানার পরিবেশগত প্রভাব এবং স্থানীয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার ওপর প্ল্যান্টের প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগের বিষয় তুলে ধরেছিল।

এদিকে ব্র্যান্ডেনবার্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল স্টুবেগেন বলেছেন, অগ্নিসংযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হলে এটি হবে আমাদের বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর ওপর একটি ভয়ংকর আক্রমণ।

তিনি বলেন, এই ঘটনায় হাজার হাজার মানুষ তাদের মৌলিক বিদ্যুৎ পরিষেবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল এবং বিপদে পড়েছিল। আইনের শাসন এই ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে চরম কঠোরতার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাবে।

নাশকতার এই ঘটনার পর আশপাশের শহর এবং গ্রামে কয়েক ঘণ্টা পরে বিদ্যুৎ পরিষেবা আবার চালু করা হয়েছিল, কিন্তু টেসলা কারখানা এখনও বিদ্যুৎহীন রয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ পরিষেবা আবার চালু করতে কয়েক দিন সময় লাগবে।

২০২২ সালের মার্চ মাসে কারখানাটি খুলেছিল টেসলা। এর মাধ্যমে জার্মান অটোমেকারদের তাদের নিজের দেশেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয় গাড়ি প্রস্তুতকারী এই প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বখ্যাত এই কোম্পানিটি এখন একটি মালবাহী ডিপো, গুদাম ও একটি কোম্পানি কিন্ডারগার্টেন তৈরি করতে তাদের স্থান আরও সম্প্রসারণ করতে চায়। এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে আরও ১০০ হেক্টরেরও বেশি (২৪৭ একর) বন কেটে ফেলতে হবে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০