ইলিশ রক্ষা হলে উৎপাদন আরও বাড়বে

 

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম হিসেবে আগামীকাল থেকে টানা ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ ও তার  কেনাবেচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতে স্বাভাবিকভাবেই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা ইলিশ উৎসবে ভাটা পড়বে। তা সত্তে¡ও দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এ আইনের প্রতি সবাই শ্রদ্ধাশীল থাকবেন এমনটাই কাম্য। ইলিশ শুধু জাতীয় সম্পদ নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্যেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাছাড়া সম্প্রতি ইলিশ বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভের কারণে এটিকে আরও সমৃদ্ধ করার দায় আমাদের আগের চেয়ে বেড়েছে।

ইতোমধ্যে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। দেশে ২০০২ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ইলিশের ডিম পাড়া ও বিচরণক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত হয়েছে। এছাড়া বছরের আট মাস জাটকা ধরা ও ডিম পাড়ার ২২ দিন (যা আগে ১৫ দিন ছিল) সব ধরনের ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ইলিশ আহরণের ওপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্র দিয়ে বছরে তিন মাস সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আর্থিক সহায়তা জুগিয়ে আসছে সরকার। এমন পদক্ষেপের আওতা আরও বিস্তৃত করা যায় কি না, তা বিবেচ্য। মূলত এ ধরনের পদক্ষেপের কারণেই বিশ্বের ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টির মধ্যে ১০টি দেশেই এ মাছের পরিমাণ হ্রাস পেলেও কেবল বাংলাদেশে ইলিশের আহরণ প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ছে। এর ফলে সম্প্রতি দেশীয় বাজারে ইলিশ সুলভ হয়েছে। ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসায় ইলিশ কম-বেশি কিনতে পেরেছেন সাধারণ ভোক্তারাও। অনেকে সস্তায় এটি কিনে ডিপফ্রিজে মজুত করেছেন। এ অবস্থায় ইলিশ রফতানি পুনরায় শুরুর প্রস্তাবও উঠেছে বলে খবর রয়েছে।

বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী দেশগুলোয় সাধারণভাবে পাওয়া গেলেও প্রজনন মৌসুমে আহরিত মেঘনা ও পদ্মার ইলিশ সবচেয়ে বিখ্যাত। এবার অবশ্য প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও বেশিরভাগই সমুদ্র মোহনার। সাম্প্রতিক বন্যার ঢলের কারণেও সময়ের আগে প্রচুর ইলিশ মোহনামুখী হয়েই ধরা পড়েছে। ধারণা করা যায়, বাজারে ডিমওয়ালা মাছের আধিক্যের এটি বড় কারণ। অন্যদিকে নদীতে এবার বড় ইলিশের পরিমাণ কম। জানা যাচ্ছে, ঢলের পানি পেয়ে মোহনাতেই থেকে  গেছে বিপুলসংখ্যক ইলিশ। আর এ সুযোগে বিস্তৃত এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে একটি চক্র নদীতে পৌঁছানোর আগেই ইলিশ আহরণ করেছে। এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো দরকার ছিল। প্রাকৃতিক বা অন্য কোনো কারণে ইলিশের আচরণগত পরিবর্তন হচ্ছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা জরুরি মনে হয়। সেক্ষেত্রে পরিবর্তিত আচরণ অনুযায়ীই ইলিশ রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।

সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে ইলিশের রয়েছে বিরাট অবদান। আমাদের মোট মাছ উৎপাদনের ১৩ ভাগ আসে ইলিশ থেকে। জিডিপিতে এর অবদান প্রায় দুই শতাংশ। ইলিশ আহরণ ও বাজারজাতকরণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ জড়িত বলে জানা যায়। তাই ইলিশ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে মৎস্যজীবী, আড়তদার, দাদনদার, ইলিশ গবেষক, ভোক্তাসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে। গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে বিষয়টিকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করাও প্রয়োজন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০