রফিক মজিদ, শেরপুর: শেরপুরের নকলায় নিখোঁজের দুদিন পর হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় আসাদুজ্জামান আসাদ (১৭) নামে এক অটোরিক্সা চালকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ঘটনায় জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
১৩ মার্চ বুধবার দুপুরে পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম পিপিএম তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওইসব কথা জানান। আটককৃত অটোরিক্সা চোর চক্রের সদস্যরা হচ্ছে নকলা উপজেলার ডাংধরাকান্দা গ্রামের মো. মজিবর মিয়ার ছেলে মো. হামিদুল ইসলাম খোকন (২৪), পূর্ব গজারিয়া গ্রামের মো. আবু হানিফের ছেলে মো. নূর নবী (২১), ধনাকুশা গ্রামের মৃত আশকর আলীর ছেলে মো. জাহিদুল ইসলাম এমসি জাহিদ (২২) ও ইশিবপুর গ্রামের মো. চান মিয়ার ছেলে মো. মিলন মিয়া (২৪)। আর নিহত ইজিবাইক চালক আসাদ দক্ষিণ নকলা এলাকার মো. ফজলুর করিমের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত ১২ মার্চ মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে নালিতাবাড়ী উপজেলার তিনানী বাজারস্থ এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করাকালে এসআই মুকুল সরকার অটোরিক্সা চোর সন্দেহে একটি অটোরিক্সাসহ হামিদুল ইসলাম খোকন ও মো. নূর নবী নামে ২ জন ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। তাদের জিজ্ঞাসাবাদকালে একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দিলে সন্দেহ আরও ঘণীভূত হতে থাকে।
এদিকে অটোরিক্সা উদ্ধারের খবর পেয়ে নকলা থানার বাসিন্দা মো. ফজলুর করিম নালিতাবাড়ী থানায় গিয়ে জানান যে, তার ছেলে অটোরিক্সা চালক আসাদুজ্জামান আসাদ গত ১১ মার্চ অটোরিকক্সা নিয়ে বের হয়ে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। পরে ফজলুর রহমানকে পুলিশের উদ্ধারকৃত অটোরিক্সা ও একটি মোবাইল ফোন দেখানো হলে সেগুলো তার ছেলের বলে শনাক্ত করেন।
পরে আটককৃতদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এক পর্যায়ে তারা দু’জনসহ জাহিদুল ইসলাম এমসি জাহিদ ও মিলন মিয়া- এ ৪ জন মিলে আসাদুজ্জামান আসাদের অটোরিক্সা ছিনতাই ও ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ায় তাকে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে।
নিহত তরুণ সাজ্জাদের বাবা ফজলুল করিম কান্নায় ভেঙে পড়ে জানায়, আমার ৫ ছেলে মেয়ের মধ্যে ৩ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ২ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে গাজীপুরে গার্মেন্টসে কাজ করে। এই ছেলেটা স্থানীয় হাইস্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ছে। আগামীতে এসএসসি পরীক্ষা দিবে। আমি আগে রিক্সা চালাতাম। আমার অসুস্থতার কারণে আমি এখন রিকশা চালাতে পারি না। তাই ছেলেটা সংসারের খরচ মেটাতে পড়াশোনার ফাঁকে সে অটো ভাড়া নিয়ে অটো চালাতেন। কিন্তু ১১ই মার্চ রাতে অটো নিয়ে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ওই ঘটনায় নকলা থানায় ভিকটিম আসাদের বাবা মো. ফজলুর রহমান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আটক আসামিদের বুধবার বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংকালে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. খোরশেদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) আরাফাতুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইদুর রহমান, ডিআইও-১ জাহাঙ্গীর আলম, নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদের খান, প্রেসক্লাব সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার, সাধারণ সম্পাদক আদিল মাহমুদ উজ্জলসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সাজ্জাদের নিয়তের ঘটনায় তার গ্রামের বাড়ি নকলা শিববাড়ি তাদের বাড়িতে এবং পুরো গ্রাম জুড়ে চলছে শোকের মতম।
সাজ্জাদের সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা জানায়, সাজ্জাদ ছিলেন একেবারেই সহজ-সরল নরম প্রকৃতির ছেলে। অটো চালানোর কারণে ক্লাস কম করতো। তবে মাঝেমধ্যে স্কুলে যেতো। তাকে এই নির্মমভাবে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই।