ধূমপান নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

‘নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ধূমপান: তিন বছরে বিএটির সিগারেট বিক্রি ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, সেটিকে কোনো মানদণ্ডে ইতিবাচক বলার সুযোগ নেই। দেশে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন আইন করা হয়েছে। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সিগারেটের প্যাকেটে সতর্কীকরণ প্রচারণা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রতি বছর শুল্কহার বাড়ানো হচ্ছে। এতে প্রতিবার জাতীয় বাজেট ঘোষণার পর সিগারেটের দাম বাড়ছে। তবু কোনোভাবেই সিগারেট ব্যবসায় লাগাম টানতে পারছে না সরকার। বরং তা বিক্রি থেকে আয় বেড়েই চলেছে বাংলাদেশে সিগারেট উৎপাদন, বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর (বিএটি)। দেশের বাজারে সিগারেটের বড় অংশই সরবরাহ করছে বিএটি। এতে প্রতি বছর ব্যবসা ও মুনাফা বেড়ে চলেছে কোম্পানিটির। সর্বশেষ গত তিন বছরে (২০২১-২৩) বিএটি সিগারেট বিক্রি করেছে এক লাখ ১০ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকার। এই সময়ে কোম্পানিটি সিগারেট বিক্রি করেছে প্রায় ২০ হাজার কোটি  শলাকা। আর তিন বছরে বিএটি মুনাফা করেছে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি।

সুস্থ জনগোষ্ঠী এবং সমৃদ্ধ দেশ গঠনের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক তামাকজাত পণ্য বিশেষ করে সিগারেট। ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন তামাকের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে ২০০৩ সালে প্রণীত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)। ফ্রেমওয়ার্কটিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশ। ২০০৪ সালে অনুস্বাক্ষরের পর বাংলাদেশ ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করে। পূর্ববর্তী আইনের সীমাবদ্ধতা ছিলÑএ আইনে ধোঁয়াবিহীন তামাকদ্রব্য বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ফলে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যÑযেমন গুল, জর্দা ও খইনি, বেশির ভাগ মানুষ সেবন করে, সেসব বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ ছিল না। তাই ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়। নতুন আইনে সব রকম ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ধোঁয়াযুক্ত তামাকসহ ধোঁয়াবিহীন তামাকÑযেমন গুল, জর্দা, খইনি ও সাদাপাতাও তামাকজাত দ্রব্য হিসেবে গণ্য হবে। আইন সংশোধনের ফলে সব ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য একই আইনের আওতায় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আইন পরিপালন নিশ্চিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হয়। তামাকপণ্য ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাও প্রশংসিত হয়েছে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। সরকার কোনোভাবে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না; এটি দুঃখজনক। কাগজে-কলমে ‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ’-এর মাধ্যমে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সময়োপযোগী করতে হবে। তামাকপণ্যের দাম কার্যকরভাবে বাড়ানো হলে নতুন করে ধূমপানে আগ্রহীরা নিরুৎসাহিত হবেন। সিগারেটের ওপর অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করারোপ করা হয় বেশি। তারপরও উন্নত দেশ তো বটেই, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশে সিগারেটের দাম কম। এটি প্রকারান্তরে তামাকজাক পণ্য বিপণনকে প্ররোচিত করছে। তামাকপণ্যে করারোপের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব আহরণের চেয়ে জনস্বাস্থ্যকে বেশি অগ্রাধিকার দিলে তা ধূমপান নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতো।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০