বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কতটা ভঙ্গুর, তা স্পষ্ট বৈশ্বিক অতিমারি কভিডকালে। নতুন করে শঙ্কাজনক এক পরিসংখ্যান সামনে এনেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলছে, এশিয়া ও প্যাসিফিক (প্রশান্ত মহাসাগরীয়) অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে গড় আইসিইউ বেড সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। এডিবির সম্প্রতি প্রকাশিত ‘হোয়াট হ্যাজ কভিড-১৯ টট আস অ্যাবাউট এশিয়া’স হেলথ ইমারজেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি লাখ মানুষের জন্য মাথাপিছু আইসিইউ বেড রয়েছে একটিরও কম। অথচ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ২৮টি দেশ বিবেচনায় প্রতি লাখের জন্য আইসিইউ বেড রয়েছে গড়ে ছয় দশমিক ৯০। এছাড়া হাসপাতালে সাধারণ বেড এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা সূচকেও ২৮ দেশের মধ্যে পেছনের সারিতেই রয়েছে বাংলাদেশ।
এডিবির প্রতিবেদনে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আইসিইউ বেড রয়েছে তাইওয়ানে। দেশটিতে প্রতি লাখ মানুষের জন্য আইসিইউ বেড রয়েছে ২৭টি করে। পরের অবস্থানে থাকা কাজাখস্তানে আইসিইউ বেড রয়েছে প্রতি লাখের জন্য ২৩টি। আমাদের মনে আছে কভিডে প্রাদুর্ভাবে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় আইসিইউ বেডের জন্য এক প্রকার হাহাকার চলেছে। কোথাও শয্যা খালি নেই। একটা আইসিইউ বেড ছিল সোনার হরিণ। আইসিইউ সাপোর্টের অভাবে কত রোগীরা রাস্তায় মারা গেছে, তার ইয়ত্তা নেই। খোদ চিকিৎসকরাই আইসিইউ বেড পাননি। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন নিজের কর্মস্থলে আইসিইউ পাননি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে আনা হলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান তিনি। কভিডের জন্য চীনকে কমবেশি দায়ী করা হয়। কিন্তু সন্দেহভাজন দেশটি কভিড মোকাবিলায় ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে। দেশটি সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছে দ্রুত। হাই ফ্লো অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করতে পেরেছে। দুর্ভাগ্যজন হলো আমাদের দেশে হাই ফ্লো অক্সিজেন তো নেইই। পর্যাপ্ত আইসিইউ শয্যাই নেই।
কভিড যখন প্রথম শুরু হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র দিগি¦দিক হারিয়ে ফেলেছিল। অপারেশন থিয়েটার পর্যন্ত তারা আইসিইউ করে ফেলে। পরে বেডগুলোও আইসিইউ করে ফেলেছে। অথত আমরা যোজন যোজন পিছিয়ে। বিশ্বের কোনো দেশেরই কভিড মোকাবিলার পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। থাকবে কীভাবে! রোগটি যে নতুন। আগে দেখেনি কেউ। যুক্তরাষ্ট্রের না হয় একজন অ্যান্টনি ফাউসি ছিলেন। কভিডকালে দেবদূত হয়ে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই জনস্বাস্থ্যবিদ। কিন্তু কভিডের পরও আমরা প্রতি লাখ মানুষের জন্য একটি আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা করতে পারিনি। জীবনের আনন্দ ভোগ করার জন্য মানুষকে সুস্থ থাকা আবশ্যক। অসুস্থতা জীবনের সব আনন্দ নষ্ট করে দেয়। প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালগুলোতেও অন্তত ১৫টি আইসিইউ বেড থাকা প্রয়োজন। ইমারজেন্সি আইসিইউ বা ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা দিতে পারে না। আইসিইউ, ভেন্টিলেটর বা উন্নত চিকিৎসার জন্য ক্লিনিকগুলোর দ্বারস্থ হতে হয়। অথচ বেসরকারি ক্লিনিকের ব্যয় ভার বহরে ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নেই। সরকারি হাসপাতালগুলো চিকিৎসার জন্য মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ভরসার শেষ জায়গা। সরকার পদক্ষেপ নিলে সরকারি হাসপাতালে ক্রমান্বয়ে পর্যাপ্ত আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা করা কঠিন নয়।