শেয়ার বিজ ডেস্ক: তথ্যপ্রযুক্তির গোলযোগের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, হংকং ও যুক্তরাজ্যে অনেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে ম্যাকডোনাল্ডস। ওই সব স্থানে অনলাইন ও অ্যাপে অর্ডার নেয়াও স্থগিত করেছে তারা। খবর: সিএনএন।
ম্যাকডোনাল্ডস জাপান গত শুক্রবার এক এক্স পোস্টে বলেছে, সারা দেশে অনেক স্টোর সাময়িকভাবে কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এর আগে তারা জানিয়েছে, আমরা যান্ত্রিক ত্রুটির মুখোমুখি হয়েছি।
সিএনএনের সহযোগী বার্তা সংস্থা নাইন নিউজ তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ায় ম্যাকডোনাল্ডসের স্টোরগুলো বড় ধরনের বিভ্রাটের শিকার হয়েছে। ফলে গ্রাহকরা অর্ডার দিতে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। ম্যাকডোনাল্ডস অস্ট্রেলিয়ার এক মুখপাত্র বলেন, দেশজুড়ে আমাদের রেস্তোরাঁগুলোকে প্রভাবিত করা যান্ত্রিক ত্রুটি সম্পর্কে আমরা অবগত। যত দ্রুত সম্ভব আমরা এর সমাধানের চেষ্টা করছি।
ফেসবুকে একটি পোস্টে ম্যাকডোনাল্ডস হংকং বলেছে, কম্পিউটারে একটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মোবাইল অর্ডার এবং সেল্ফ অর্ডার কাজ করছে না। আপনারা রেস্তোরাঁর কাউন্টারে সরাসরি এসে অর্ডার করুন।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ম্যাকডোনাল্ডসের একটি স্টোরে কাজ করা মারিয়া আভরাম নামের একজন কর্মী জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে একটি যান্ত্রিক গোলযোগের ঘটনা ঘটে। ফলে কর্মীরা সশরীরে অর্ডার নিচ্ছিলেন এবং কী রান্না করতে হবে তা নিজেরা কিচেনে গিয়ে বলে এসেছেন। এ বিষয়ে ম্যাকডনাল্ডসের মন্তব্য জানতে চেয়েছে সিএনএন।
তাইওয়ানে এই ফাস্ট ফুড চেইনটির ম্যাকডেলিভারি সার্ভিস তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এখনও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনলাইন ও টেলিফোনে অর্ডার করা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। তাইওয়ানের টেলিভিশন চ্যানেল টিবিবিএস ম্যাকডোনাল্ডসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ইন্টারনেট বিভ্রাটের কারণে এখনও অনলাইনে লেনদেন স্থগিত রয়েছে। আমরা ক্রেতাদের আশ্বস্ত করেছি, ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে এবং সংযোগ ফিরে পেতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
সমস্যার মুখোমুখি হওয়া দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকডোনাল্ডসের স্টোরের সংখ্যা সবচেয়ে বেশিÑপ্রায় ১৩ হাজার ৫০০, সবচেয়ে বেশি রেস্টুরেন্ট জাপানেÑতিন হাজারের ওপরে, যুক্তরাজ্যে দেড় হাজারের কাছাকাছি এবং অস্ট্রেলিয়ায় তাদের স্টোরের সংখ্যা এক হাজারের কিছু বেশি।
ম্যাকডোনাল্ডসের বৈশ্বিক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ব্রায়ান রাইস এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্বজুড়ে আমরা প্রযুক্তিগত সমস্যায় পড়েছিলাম, তবে দ্রুত এই সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সমাধানও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অনেক রেস্টুরেন্ট অনলাইনে অর্ডার নিচ্ছে এবং বাকিরা অনলাইনে সেবা দেয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, এই সমস্যার সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তার কোনো সংযোগ নেই। মূলত তৃতীয় পক্ষ, যাদের কাছ থেকে সেবা নেয়া হচ্ছে, তাদের কারিগরি ত্রুটির ফলে এমনটি ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের উত্তেজনায় ম্যাকডোনাল্ডসের ইসরায়েলকে সমর্থন করা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি বাজারে কোম্পানিটি ব্যবসায়িক ক্ষতিতে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্রিস্টোফার কেম্পজিনস্কি। ইসরায়েলে গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পরের সপ্তাহগুলোয় ম্যাকডোনাল্ডস জানিয়েছিল, তারা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিনা খরচে খাবার বিতরণ করছে। এই ঘোষণার ফলে গাজায় সেরায়েলের সামরিক অভিযানে ক্ষুব্ধ সমর্থকরা ব্র্যান্ডটি বয়কটের আহ্বান জানায়। এর প্রভাবে কুয়েত, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর ম্যাকডোনাল্ডস প্রতিনিধিরা ব্র্যান্ডটি থেকে নিজেদের দূরত্ব বজায় রেখে বিবৃতি দেন। বিশ্বজুড়ে ম্যাকডোনাল্ডসের ৪১ হাজার ৮০০ আউটলেট রয়েছে, যার প্রায় পাঁচ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত।
মধ্যপ্রাচ্য সংকট এবং এই অনলাইন বিভ্রাটের ফলে চলতি বছরে ভালো মুনাফা করতে পারেনি ম্যাকডোনাল্ডস। সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটি জানায়, মধ্যপ্রাচ্যের কারণে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এ ঘটনা অব্যাহত থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক পণ্যের মতো এটিও এই অঞ্চলের অনেক স্থানে বয়কটের শিকার।