বাউসার বাগানে এবার আসেনি শামুকখোল

প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে অবস্থিত আম বাগানে এ বছর শামুকখোল পাখির আগমন না হওয়ায় উদ্বিগ্ন পরিবেশপ্রেমীরা। ঐতিহ্যবাহী ১০ বিঘাজুড়ে বিস্তৃত এই বাগানে ৩৮টি আমগাছ এই প্রজাতির পাখির জন্য আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রতি প্রজনন মৌসুমে, শামুকখোল পাখিরা এখানে বাচ্চা ফোটানোর জন্য আসত এবং বাচ্চাগুলো উড়তে শিখে গেলে তারা চলে যেত।

এই অঞ্চলে প্রতি বছর আসা এই প্রাণীটি যা সাধারণত উদ্ভিদ ও অন্যান্য ছোট প্রাণীদের খাদ্য শৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তার অনুপস্থিতি পরিবেশ বিজ্ঞানীদের চিন্তিত করে তুলেছে। এর ফলে পরিবেশের ওপর এর প্রভাব এবং এই অনুপস্থিতির কারণ সম্পর্কে গভীর অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এই ঘটনা বাঘা এলাকার পরিবেশ সংরক্ষণ ও জৈববৈচিত্র্য নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।

২০১৯ সালে, বাগানের ইজারাদার পাখিগুলোকে উড়িয়ে দিতে চাইলে, স্থানীয় পরিবেশপ্রেমীরা তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান এবং ঘটনাটি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত ওই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণার বিষয়ে প্রশ্ন তোলে। প্রশাসন অবশেষে আম বাগানের ৩৮টি গাছের জন্য বার্ষিক ভাড়া হিসেবে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করে।

কৃষি মন্ত্রণালয় পাখির স্থায়ী আবাস গড়ে তোলার জন্য জেলা প্রশাসককে প্রস্তাব পাঠালেও, জমি অধিগ্রহণ এবং গাছের মূল্য নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তী কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বাগান মালিকরা ভাড়া কম বলে কিছু গাছ কেটে ফেলেন এবং গত বছর পাখি আসলে তাড়িয়ে দেন। ফলে এ বছর বাগানটি পাখিহীন রয়ে গেছে, যা এই অঞ্চলের বন্যপ্রাণীর প্রতিকূল অবস্থা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরগুলোর অবহেলার প্রতীক।

রাজশাহীতে দেখা যায়, প্রায় ৩৫০ প্রজাতির পাখি, যেখানে দেশে মোট ৭১৪ প্রজাতির পাখি রয়েছে। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে এই অঞ্চলের বিভিন্ন আবাসস্থল নষ্ট হওয়ায় পাখির প্রজাতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। গত ১৫ বছরে ৫৬৬ প্রজাতির মধ্যে ১৯ প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যা পরিবেশপ্রেমীদের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ।

পরিবেশবিদরা বলছেন, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আম বাগান থেকে শামুকখোল পাখিদের বিদায় শুধু একটি ঘটনা নয়, বরং এটি পরিবেশ সংরক্ষণের সামনে রয়েছে এক বৃহত্তর চ্যালেঞ্জের প্রতিফলন। এই ঘটনা কেবল বিচ্ছিন্ন একটি সমস্যা হিসেবে দেখা উচিত নয়; বরং এটি আমাদের পরিবেশগত অবহেলা এবং স্থানীয় প্রাণীদের আবাসস্থল ধ্বংসের এক ব্যাপক ছবি তুলে ধরে।

রাজশাহীর পাখি বিশেষজ্ঞ ড. শরীফ খান বলেন, পরিবেশের এই পরিবর্তন পাখিদের অস্তিত্বের জন্য বিরাট হুমকি সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও বলেন, পাখি আমাদের পরিবেশের সূচক, তাদের অবস্থা দেখে আমরা পরিবেশের অবস্থা বুঝতে পারি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র দাস বলেন, কিছু মানুষ পোষা প্রাণী হিসেবে, অন্যরা অবাধ বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বন্যপাখি ধরছেন। শিকারিদের নির্মম কার্যকলাপে বহু পাখি এই এলাকা ত্যাগ করছে। পাখিদের অস্তিত্ব বিপন্ন হলে, এটি স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রা ও জীবিকার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে এবং পরিবেশতন্ত্রের সাম্যতা বিঘ্নিত হবে।

বন্যপ্রাণী বিষয়ক বিভাগীয় কর্মকর্তা, আহমেদ নিয়ামুর রহমান জানিয়েছেন, পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া, নতুন করে বেশ কিছ– গাছ রোপণ করা হয়েছে যা বড় হলে পাখিদের আবাসস্থলের সমস্যা মিটে যাবে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০