পদ্মার গ্রাহক এক্সিম থেকে টাকা তুলতে পারবেন, চাকরি হারাবে না কেউ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ধুঁকতে থাকা পদ্মা ব্যাংক একীভূত হচ্ছে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে। সেই লক্ষ্যে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করেছে পদ্মা ব্যাংক।

গতকাল সোমবার গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে এক অনুষ্ঠানে দুই ব্যাংকের মধ্যে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন ও পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রিয়াজ খান তাতে সই করেন।

এক্সিম ব্যাংক ও বিএবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিমসহ তিন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

পুরো মার্জার বা একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে কয়েক মাস। তখন আর পদ্মা ব্যাংকের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। একীভূত ব্যাংকটি এক্সিম ব্যাংক নামেই পরিচালিত হবে। পদ্মা ব্যাংকের সব গ্রাহক হয়ে যাবেন এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক।

এক্সিম ব্যাংক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, একীভূতকরণের ফলে প্রাথমিকভাবে পদ্মা ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার চাকরি যাবে না। তবে পদ্মার কোনো পরিচালক এক্সিমের পর্ষদে বসতে পারবেন না। আর পদ্মা ব্যাংকের আমানতকারীরা এক্সিম ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারবেন।

চুক্তি স্বাক্ষর শেষে নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘আমরা এক্সিম ব্যাংক এগিয়ে এসেছি পদ্মা ব্যাংক টেকওভার করতে। আমরা একত্র হয়েছি মার্জার করতে, একুইজিশন নয়। পদ্মা ব্যাংক সম্পর্ণূরূপে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে মিলিত হয়ে গেছে। পদ্মা ব্যাংকের আর অস্তিত্ব থাকল না। পদ্মা ব্যাংকের সকল দায় দেনা এক্সিম ব্যাংক পরিশোধ করবে।’

তিনি বলেন, ‘পদ্মা ব্যাংকের সকল গ্রাহকের দায়-দায়িত্ব এক্সিম ব্যাংক নেবে। নাম পরিবর্তন হয়ে গেলে পদ্মা নামে আর কিছু থাকবে না। পদ্মা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কারও ভয়ের কিছু নেই। কেউ চাকরি হারাবে না। ব্যাংকিং কার্যক্রম আগের মতোই চলবে। কোনো গ্রাহকের ক্ষতি হবে না। দুটি ব্যাংক এক হওয়ায় ব্যাংকিং কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হবে।’

একীভূত হওয়ার পর পদ্মা ব্যাংকের কোনো পরিচালক এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কীভাবে এক্সিম ব্যাংকে সমন্বয় করা যায় তা আমরা দেখব।’

ব্যাংক একীভূত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চাপ ছিল কি নাÑএমন প্রশ্নের উত্তরে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে একটা প্রপোজাল ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের প্রপোজাল দিয়ে বলেছে, তোমরা (এক্সিম ব্যাংক) এটি নিতে পারবে কি না। আমরা তা নিয়েছি। এখানে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চাপ ছিল না। শুধু অর্থনীতির স্বার্থে আমরা নিয়েছি।’

এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান আগামী এক মাসের মধ্যে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ করার কথা বললেও, এ কাজে আরও বেশি সময় লাগতে পারে বলে জানান পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আফজাল করিম, যিনি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, ‘পদ্মা ব্যাংক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে মার্জার করতে নীতিগত সিদ্ধান্তের পর সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হলো। এখন তিন থেকে ছয় মাস লাগবে একীভূত হতে।’

সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা  ব্যাংক পরস্পরের সমঝোতার ভিত্তিতে একীভূত হতে এমওইউ করল। এখন তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করবে মার্জার করতে। এরপর নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান দিয়ে আমরা অডিট করব, দায়-দেনা ঠিক করা হবে।’

স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিবন্ধকের কার্যালয়ের (আরজেএসসি) আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মার্জার প্রক্রিয়া শেষ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সহযোগিতা করবে বলে মুখপাত্র জানান।

এ প্রক্রিয়ায় কত সময় লাগবে তা নির্দিষ্ট না করে মেজবাউল হক বলেন, দুই ব্যাংক আইনি প্রক্রিয়া শেষ করার পর নতুনভাবে কার্যক্রম চালাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেদিন অনুমোদন দেবে, সেদিন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে মার্জার কার্যকর হবে।

একীভূত হতে এক্সিম বা পদ্মা ব্যাংককে কোনো ছাড় দেয়া হবে কি নাÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নীতি সহায়তা দেয়া হবে মাত্র। সেটা ব্যাংকভেদে আলাদা হবে। যে ব্যাংকের যেমন নীতি সহায়তা লাগবে তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

মার্জার (একীভূতকরণ) নীতিমালা তৈরির কাজ কতটুকু এগোলো, সেই প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, ‘নীতিমালার কাজ চলছে। একটা গাইডলাইন আছে। তা আমরা হালনাগাদ করে জানাব। এটি আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।’

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘পরিচালকদের অনিয়ম ও ব্যাংকের জন্য ক্ষতিকারক এমন কোনো দায় পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। মার্জার না হলেও এটি করা হয়।’

 

 

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০