সংকটে পড়ে রেডি মিক্স কারখানা বিক্রয়ের বিজ্ঞপ্তি!

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: নির্মাণ খাতে মন্দা এবং নতুন করে রেডি মিক্স ব্যবসায় ভ্যাট আরোপিত হয়েছে। এসব কারণে রেডি মিক্স কংক্রিট ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। তাই কনফিডেন্স রেডি মিক্স কারখানার পুরোটাই ভাড়া কিংবা বিক্রয় করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কনফিডেন্স সিমেন্ট। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানি কনফিডেন্স সিমেন্ট পিএলসির সহযোগী প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্স রেডি মিক্স। তাদের প্লান্টের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ লাখ সিএফটি হলেও, বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে সীমিত পরিসরে।

কনফিডেন্স সিমেন্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করার পর ধীরে ধীরে দেশের অন্যতম বৃহৎ সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে কনফিডেন্স সিমেন্ট। এর বার্ষিক সিমেন্ট উৎপাদন ক্ষমতা ১২ লাখ টন। সময়ের সঙ্গে কনফিডেন্স সিমেন্টের ব্যবসা এগ্রিগেট এবং রেডি মিক্স কংক্রিট তৈরি ব্যবসায় সম্প্রসারিত হয়। বেশ কয়েক বছর ভালো ব্যবসা করলেও বর্তমানে পতেঙ্গার সি বিচ রোডের ২৫৪ শতক জমির ওপর নির্মিত কারখানার উৎপাদন চলছে নামমাত্র। মূলত ডলার সংকট, নির্মাণ খাতের মন্দা এবং নতুন করে রেডি মিক্স ব্যবসায় ভ্যাট আরোপিত হওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটির রেডি মিক্স কংক্রিটের ব্যবসা সংকটে পড়েছে। গত কয়েক মাসে কারখানার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ হিসেবে বর্তমানে ১০-১১ লাখ সিএফটি উৎপাদন হচ্ছে, যা দিয়ে কোম্পানির প্রত্যাশিত আয় হচ্ছে না। এ কারণে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ কারখানা ভাড়া কিংবা পুরো কারখানা বিক্রয়ের চেষ্টা করছে। গত ১৪ মার্চ চট্টগ্রামের কয়েকটি স্থানীয় গণমাধ্যমে ভাড়াটিয়া বা ক্রেতা চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়।

আরও জানা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কনফিডেন্স রেডি মিক্স কারখানা থেকে আয় হয়েছে তিন কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিক্রয় কমেছে এক কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এছাড়া চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কনফিডেন্স সিমেন্টের রাজস্ব ছিল ১৮৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা পূর্ববর্তী ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের ছিল ১৯৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় বিক্রয় কমেছে ১৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়ায় ৪৩ কোটি ৪১ লাখ টাকায়, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে হয়েছিল ৩৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের বিগত অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে আট কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

প্রতিষ্ঠানটির বিপণন কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নির্মাণ ও আবাসন খাতে মন্দা চলছে। এতে রেডি মিক্সের ব্যবহার কমেছে। অন্যদিকে, চলমান ডলার সংকটের কারণে আগের মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় এলসি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া রেডি মিক্স ব্যবসায় ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। তাই রেডি মিক্স কংক্রিট ব্যবসায় সংকট চলছে। ফলে ব্যবস্থাপনা পর্ষদ প্রথমে কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে কারখানা ভাড়া কিংবা বিক্রয় করার জন্য ক্রেতা খুঁজছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য কোম্পানি সচিব দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি। এ কারণে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে কনফিডেন্স রেডি মিক্স বিক্রয় বা ভাড়ার বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেড অব সাপ্লাইচেইন ম্যানেজমেন্ট মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, রেডি মিক্স কংক্রিটের উৎপাদন সীমিত পরিসরে চলছে। কারখানাটি ভাড়া কিংবা বিক্রয় করে দেয়ার জন্য আমাকে পরিচালনা পর্ষদ থেকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেভাবে আমি কাজ করছি। বিক্রয় ও ভাড়ার জন্য কিছু জায়গায় কথাও চলছে। এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৩০ দশমিক ৩৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ৩৬ দশমিক চার শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৩৩ দশমিক ৬২ শতাংশ মালিকানা রয়েছে। গত এক বছরের শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৯৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন দাম ছিল ৭১ টাকা ২০ পয়সা।

 

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০