শেয়ার বিজ ডেস্ক: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মানব পাচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জেনারেল ইউর্গেন স্টক জানিয়েছেন, মানব পাচারের জন্য সংগঠিত অপরাধ চক্রের মাধ্যমে কার্টেলগুলো বছরে প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ডলারের অবৈধ অর্থ আয় করে থাকে। খবর: সিএনএন।
স্টক জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিকভাবে সংগঠিত একটি অপরাধ চক্র বছরে ৫০ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার কোটি ডলার আয় করে এবং প্রতি বছর মানব পাচার খাতে বিশ্ব অর্থনীতিতে দুই থেকে তিন ট্রিলিয়ন ডলারের অবৈধ অর্থের লেনদেন হয়।
স্টক আরও জানিয়েছেন, সংগঠিত অপরাধ চক্রের মাধ্যমে বিশ্বে মোট অবৈধ আয়ের ৪০ থেকে ৭০ শতাংশই আসে মাদক পাচার থেকে। ওই পাচার চক্র ব্যবহার করেই অপরাধ চক্রগুলো মানব পাচার এবং অস্ত্র ও চুরি হওয়া দ্রব্য পাচারের কাজও করে থাকে।
বৈশ্বিক পুলিশ সমন্বয় সংস্থার সিঙ্গাপুর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্টক বলেন, নতুন ব্যবসায়িক মডেলগুলোর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে কভিডকাল থেকে বেনামে এই সংগঠিত অপরাধ চক্রগুলো এমন এক মাত্রায় কাজ করছে, যা এক দশক আগেও অকল্পনীয় ছিল। এখন আর সামনাসামনি বন্দুক ধরে ব্যাংক ডাকাতি হয় না। এই কাজগুলো হাজার মাইল দূর থেকে অনলাইনে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক হুমকি হিসেবে গড়ে ওঠা মানব পাচারের অপরাধটি আজ বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়েছে। সরাসরি ও অনলাইনে এক্ষেত্রে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ ভুক্তভোগী হয়েছেন।
ইন্টারপোল জানিয়েছে, তারা এশিয়ায় ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তিকে আটক করেছেন এবং অবৈধ উপায়ে অর্জিত ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের দেয়া সাক্ষ্য, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রচারণা ও গত তিন বছরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানব পাচার চক্রগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অনলাইনে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের শারীরিক পরিশ্রম করা ব্যক্তিদের চাকরির লোভ দেখিয়ে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে তারা।
এশিয়াজুড়ে ভিক্টিমদের প্রায়ই বৈধ চাকরির লোভ দেখানো হয়। এরপর তাদের এমন সব জায়গায় পাচার করা হয়, যেখানে তারা জোরপূর্বক শ্রম, নির্বিচারে আটক, অবমাননাকর আচরণ ও নির্যাতনের শিকার হন। এক্ষেত্রে তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ন্যূনতম কোনো ধরনের সহায়তা পান না।
জাতিসংঘের গত বছরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনলাইনে প্রতারণার মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হাজার হাজার মানুষ প্রতি বছর পাচারের শিকার হন। বৈশ্বিক সংস্থাটির ধারণা, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় দাস হিসেবে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ এবং কম্বোডিয়ায় এক লাখ মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে। পাচারের শিকার হওয়া ওই ব্যক্তিরা সেখানে আধুনিক দাসত্বের শিকার হচ্ছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে বলেন, এই স্ক্যামিং অপরেশনগুলোয় কাজ করা মানুষদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বাধ্য করা হয়। অপরাধী না হলেও ওই ব্যক্তিরা তখন অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন।
দক্ষিণপূর্ব চীনের সঙ্গে পার্বত্য সীমান্ত থাকা মিয়ানমার এই ধরণের স্ক্যাম সিন্ডিকেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বর্তমানে ওই অঞ্চলে চীনের নাগরিকদের লক্ষ করে গড়ে ওঠা অপরাধ চক্রগুলোর বিভিন্ন অপরাধ দমনের কাজ করছে বেইজিং। স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমার-চীন সীমান্ত এলাকাগুলোয় হাজার হাজার মানুষকে অপরাধী গ্যাংগুলো অনলাইনে অপরিচিতদের সঙ্গে প্রতারণা করতে বাধ্য করছে। অপরাধী গ্যাংগুলো যাদের ওপর বলপ্রয়োগ করে এই ধরণের কর্মকাণ্ড করাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই চীনের নাগরিক। এ ধরণের অপরাধমূলক কার্যক্রম এর লাগাম টানতে মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে চাপ দিচ্ছে বেইজিং। কিন্তু এতে আশানুরূপ ফল আসছে না।
অন্যদিকে চীনের জুয়াড়িদের মাধ্যমে ফিলিপিনজুড়ে ক্যাসিনো ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ছে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহƒত এসব জুয়া কেন্দ্র ও ক্যাসিনোর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা হ্রাস করতে হিমশিম খাচ্ছে ম্যানিলা।