ক্রীড়া ডেস্ক: জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ১ উইকেট হারিয়ে দল ১০৫। লক্ষ্যটাও খুব বেশি দূরে নেই। নেলসনের ব্যাটিং উইকেটে ধৈর্য ধরে দাঁড়াতে পারলেই ধরা দেবে ‘সোনার হরিণ’। উইকেটে তখন ইমরুল কায়েস আর সাব্বির রহমান। দুজনের ব্যাট নিউজিল্যান্ডে প্রথম জয়ের স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি নিয়ে যায় বাংলাদেশকে। কিন্তু এরপরই ছন্দপতন! ব্যাটসম্যানদের আত্মহত্যার শুরু! সহজ ম্যাচটা বড় ব্যবধানে হার!
২৫২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভয়ঙ্কর ব্যাটিং বিপর্যয়! আশা জাগিয়ে ৬৭ রানের হারে সিরিজটাও শেষ। এই জয়ে এক ম্যাচ আগেই ২-০তে জিতে নিল নিউজিল্যান্ড।
অথচ গতকাল জয়ের পথটা তৈরি করে দিয়েছিলেন বোলাররা। যে উইক স্যাক্সটন ওভালের উইকেট ব্যাটসম্যানদের স্বর্গরাজ্য, সেখানেই কি-না দাপট থাকলো টাইগার বোলারদের। টস জিতে বোলারদের হাতে বল দিয়ে ভুল করেননি অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ব্যাটিংয়ে নামা কিউইদের ৫০ ওভারে ২৫১ রানে অলআউটের পর নেলসনের বাংলাদেশি ভক্তরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ছয় বছর পর জাতীয় দলে ফেরা নেইল ব্রুমের ব্যাট তেমন প্রাচীর তুলে না দাঁড়ালে আরও আগেই শেষ হতে পারতো স্বাগতিকদের ইনিংস। তিনি ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে অপরাজিত ১০৯ রান করেন। সঙ্গে লুক রঞ্চির ৩৫ রান।
মাশরাফির শিকার ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান এবং তাসকিন আহমেদ।
মনে হচ্ছিল সেই সংগ্রহ টপকে গোটা বাংলাদেশকে নতুন বছর শুরুর আগে উচ্ছ্বাসে ভাসাবে টাইগাররা। ঠিক পথেই ছিল দল। তামিম ইকবাল ১৬ রানে ফিরে গেলে লড়তে থাকেন ইমরুল কায়েস ও সাব্বির রহমান। জয়ের পথটাও হতে থাকে প্রশস্ত। দুজন ১০৫ রানে নিয়ে যান ধরের সংগ্রহ। ঠিক এরপরই মহাবিপর্যয়। রানআউটের শিকার সাব্বির। তার ৩৮ রানের বিদায়ই সব শেষ করে দেয়। এরপর ব্যাটসম্যানরা উইকেটে আসা-যাওয়ার খেলাতেই ব্যস্ত ছিলেন।
ইমরুল ফেরেন ৫৯ রানে। মাহমুদউল্লাহ, সাকিব, মোসাদ্দেকরা পরিকল্পনাবিহীন ব্যাট করে দ্রুত ফিরে যান সাজঘরে। এক পর্যায়ে অলআউট হয়ে ৪২.৪ ওভারে ১৮৪ রান করে বাংলাদেশ।
ম্যাচটিতে অবশ্য তিন ক্রিকেটারের ওয়ানডে অভিষেক করিয়েছে বাংলাদেশ। তারা হলেনÑনূরুল হাসান সোহান, তানভির হায়দার আর শুভাশীষ রায়। বিশ্রাম দেওয়া হয় মোস্তাফিজুর রহমানকে। ইনজুরিতে আউট মুশফিকুর রহীম। দল থেকে বাদ পড়েন ফর্ম খুঁজতে থাকা সৌম্য সরকার।
এমন হারের পর ব্যাটসম্যানদেরই দুষছেন মাশরাফি। টাইগার অধিনায়ক বলছিলেন, ‘ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ব্যাট করেছে, সেটা খুবই হতাশার। ১০০ রানে এক উইকেট থাকার পর এভাবে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়াটা মেনে নেওয়া যায় না।’ মাশরাফি জানালেন, উইকেটও তেমন কঠিন ছিল না, ‘দেখুন, আমরা আগে থেকেই জানতাম নিউজিল্যান্ডে সুইং, বাউন্স থাকতে পারে। কিন্তু নেলসনের এই উইকেট বেশ ফ্ল্যাট ছিল। আমার মনে হয় আমাদের ব্যাটসম্যানরা তাদের পরিকল্পনা মাঠে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। যে কারণেই আমরা আউট হয়ে গেছি।’
এ অবস্থায় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য শুধুই হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই। ৩১ ডিসেম্বর তেমন ম্যাচে টাইগাররা মুখোমুখি হবে। তারপরই তিনটি টি-টোয়েন্টি ও দুটি টেস্ট ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৫১/১০ (ল্যাথাম ২২, উইলিয়ামসন ১৪, ব্রুম ১০৯*, নিশাম ২৮, মানরো ৩, রনকি ৩৫, স্যান্টনার ৯, সাউদি ২, ফারগুসন ৪, বোল্ট ১২ ; মাশরাফি ৩/৪৯, শুভাশীষ ১/৪৫, তাসকিন ২/৪৫, সাকিব ২/৪৫, তানভীর ০/৪৭, মোসাদ্দেক ১/১২)।
বাংলাদেশ: ৪২.৪ ওভারে ১৮৪/১০ (তামিম ১৬, ইমরুল ৫৯, সাব্বির ৩৮, মাহমুদউল্লাহ ১, সাকিব ৭, মোসাদ্দেক ৩, তানভীর ২, নূরুল ২৪, মাশরাফি ১৭, তাসকিন ০, শুভাশীষ ১*; বোল্ট ২/২৬, সাউদি ২/৩৩, মানরো ০/১২, ফারগুসন ১/৫৩, স্যান্টনার ১/২০, নিশাম ০/১৩, উইলিয়ামসন ৩/২২)।
ফল: নিউজিল্যান্ড ৬৭ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউজিল্যান্ড ২-০তে এগিয়ে।
ম্যাচসেরা: নেইল ব্রুম।
Add Comment