প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীতে হঠাৎ করে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩০০ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। তবে দিন যত যাচ্ছে, গরমের সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। গত এক সপ্তাহে ২৬৪ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন রোগীর সংখ্যাও কম নয়।
এদিকে ডায়রিয়ার রোগীর চাপে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। হাসপাতালের মেঝে থেকে শুরু করে হাঁটার পথ, বারান্দা সবখানেই অস্থায়ী বিছানা পেতে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে মশা-মাছি এবং নোংরা পরিবেশের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন আগত রোগী ও তাদের স্বজনরা।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী এলাকার রোগী আয়শা বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই পাতলা পায়খানা ও বমি শুরু হয়। রাতে পাঁচ থেকে ছয়বার টয়লেটে যাওয়ার পর সকালে আর দাঁড়ানোর শক্তি ছিল না। এরপর সরাসরি পটুয়াখালী হাসপাতালে এসে ভর্তি হই। সেই থেকে স্যালাইন চলছে। এখন শরীর কিছুটা ভালো। তবে হাসপাতালে কোনো বেড পাইনি, তাই বারান্দায় ফোম বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমাদের বাড়িতে আরও কয়েকজনের এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তবে তারা বাড়িতেই চিকিৎসা করাচ্ছে।
একই কথা জানান কলাপাড়া থেকে আসা রোগী ইসমাইল ফরাজী। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি, কিন্তু কোনো সিট খালি নেই। রাস্তার পাশে ছিট বিছিয়ে স্যালাইন দিচ্ছি। স্যালাইন-ওষুধ হাসপাতালই দিয়েছে। তবে মশা-মাছির কারণে টিকতে পারছি না। চারদিকে গন্ধ আর প্রচুর গরম, ভোগান্তির যেন শেষ নেই।’
পটুয়াখালী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত সাত দিনে জেলায় ২৬৪ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন উপজেলায় ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বাউফল উপজেলায় ২৯ জন, দশমিনা উপজেলায় ২৬ জন, দুমকি উপজেলায় ১৮ জন, মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ১২ জন, কলাপাড়া উপজেলায় ৩২ জন, গলাচিপা উপজেলায় ৩৪ জন এবং পটুয়াখালী সদরে ১১৩ জন ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া গত ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত জেলায় দুই হাজার ১০৩ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিলেও কোনো রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি।
পটুয়াখালী সিভিল সার্জন এসএম কবির হাসান বলেন, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিগত বছরগুলোয়ও এভাবে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। এসব বিষয় মাথায় রেখে ডায়রিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি রয়েছে। তবে সবার খাবার গ্রহণ এবং পানি পানের ক্ষেত্রে এই সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পরিস্থিতি এখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। খাবার স্যালাইনসহ অনান্য ওষুধেরও পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।
অপরদিকে ডায়রিয়ার পাশাপাশি জেলায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে ১৬২ জন নিউমোনিয়ায় আক্রন্ত হয়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন। তবে ডায়রিয়া কিংবা নিউমোনিয়ায় এ বছর জেলায় কোনো রোগী এ পর্যন্ত মারা যাননি।
