রুমার পর থানচির দুই ব্যাংকে ডাকাতি

প্রতিনিধি, বান্দরবান: বান্দরবানের রুমার পর এবার থানচি উপজেলা শহরের সোনালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় ডাকাতি হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা ১টার দিকে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অং প্রু ম্রো বলেন, বেলা ১টার দিকে থানচি সদরের শাহজাহানপুরের দিক থেকে তিনটি চাঁদের গাড়িতে করে সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে বাজার এলাকায় প্রবেশ করে। এরপর থানচি উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে নগদ টাকা যা পেয়েছে তা নিয়ে চলে যায়। এরপর তারা আবার ওই তিন গাড়িতে করে শাহজাহানপুরের দিকে চলে।

রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম বলেন, সোনালী ব্যাংকের থানচি শাখায় হামলার খবর পেয়েছি। পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেছে। তারা কাজ করছে।

এদিকে নিরাপত্তাজনিত কারণে বান্দরবান সদর শাখা ছাড়া থানচি, রুমা, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনালী ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের চট্টগ্রাম উত্তর বিভাগীয় কার্যালয়ের জেনারেল ম্যানেজার মো. মোসা. খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার ও বুধবারের ঘটনায় নিরাপত্তাজনিত কারণে সাময়িক সময়ের জন্য বান্দরবানের সদর শাখা ছাড়া সব উপজেলার সোনালী ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, থানচি সোনালী ব্যাংকে থেকে ১৫ লাখ ও কৃষি ব্যাংক থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা লুট করে দুর্বৃত্তরা।

এদিকে রুমায় সোনালী ব্যাংকের ভল্টের ভেতরে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ভল্ট খুলতে না পারায় কোনো টাকায় নিতে পারেনি লুটেরা বাহিনী। এদিকে ভল্টের চাবি না দেয়ায় ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। গতকাল বুধবার প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ভল্ট খুলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সত্যতা নিশ্চিত করে সোনালী ব্যাংক বান্দরবান জেলা কার্যালয়ের ডেপুটি ম্যানেজার জেনারেল মো. ওসমান গনি জানান, ভল্ট খুলতে না পারায় ব্যাংকের কোনো টাকায় লুটেরা নিতে পারেনি। ভল্ট খুলে ব্যাংকের সব টাকায় সুরক্ষিত পাওয়া গেছে। তবে থানচি সোনালী ব্যাংকের শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় নিরাপত্তা বিবেচনায় বান্দরবান জেলা সদর ছাড়া অন্য ৬টি উপজেলা রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়িতে ব্যাংকিং কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে বুধবার রুমায় লুট হওয়া ব্যাংক পরিদর্শন করেন  বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার সৈকত শাহীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। এদিকে ব্যাংক লুট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট ও ব্যাংক ম্যানেজার অপহরণের ঘটনায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে অপহƒত ব্যাংক ম্যানেজারের মুক্তিপণ বাবদ পরিবারের কাছে মোবাইল ফোনে ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে অপহƒতের স্ত্রী বান্দরবান ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মাইছুরা ইশফাত কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

পরিদর্শনকালে বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, ব্যাংক লুটের ঘটনায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ৮টি চায়না রাইফেল, ২টি এসএমজিসহ ১০টি অস্ত্র ও ৩৮০ রাউন্ড গুলি ও আনসার সদস্যদের ৪টা শর্টগান ৩৫ রাউন্ড গুলিসহ মোট ১৪টি অস্ত্র লুট করেছে সন্ত্রাসীরা।  ক্রাইম টিম ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তদন্ত করবে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত করা হচ্ছে কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে। যৌথ বাহিনী  সম্মিলিতভাবে লুটেরাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অপহƒতের মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি জানা নেই।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, সোনালী ব্যাংকের ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ, ক্রাইমসিন টিমের উপস্থিতিতে ব্যাংকের ভল্ট চেক করে নিশ্চিত হওয়া গেছে ব্যাংকের সব টাকায় সুরক্ষিত পাওয়া গেছে। অপহƒত ব্যাংক ম্যানেজার ও লুট হওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধারে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অভিযান চালাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে তিনটি ব্যাংক লুট, ম্যানেজারকে অপহরণ এবং ১৪টি অস্ত্র লুটের প্রতিবাদ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বান্দরবানের রুমা ও জেলা সদরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সামনে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ আয়োজিত কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০