এফবিসিসিআই জনমুখী, শিল্প ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট চায়

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: বর্তমানে জাতীয় অর্থনীতি একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ালেও কভিড-১৯-পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব, চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মধ্যেও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নের গতিধারাকে এগিয়ে নিতে হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহায়ক পরিবেশকে আরও সুদৃঢ় ও জোরদার এবং চলমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং দেশের বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীল খাতকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে একটি শিল্প ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট চায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এফবিসিসিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির ৪৪তম সভায় আগামী জাতীয় বাজেট প্রসঙ্গে এই প্রত্যাশার কথা জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।

সভাপতি বলেন, সরকার চতুর্থবারের মতো দায়িত্ব গ্রহণ করায় আগামী বাজেটকে ঘিরে জনগণের ব্যাপক প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে একটি জনমুখী ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণীত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ব্যবসায়ীদের ওপর থেকে করের বোঝা কমানো, আমদানিকৃত কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যসহ শিল্প উপকরণের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর (এআইটি), আগাম কর (এটি) প্রভৃতি প্রত্যাহার, ব্যাংকঋণের সুদহার হ্রাসসহ আমদানি পণ্যের যথাযথ শুল্কায়ন এবং পণ্য খালাসের জটিলতা দূর করতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন বাস্তবায়নের প্রস্তাব তুলে ধরেন মাহবুবুল আলম। পাশাপাশি কর হার কমিয়ে আয়কর ও মূসকের আওতা সম্প্রসারণ করে রাজস্ব আয় বাড়ানো, সক্ষম ব্যক্তিদের করের আওতায় আনার মাধ্যমে ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি এবং রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে স্থানীয় বাজার থেকে সংগৃহীত পণ্য, কাঁচামাল ও সেবা ক্রয়কে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ও সুশাসন নিশ্চিতকরণে ব্যাংকিং কমিশন গঠন কিংবা ব্যাংক খাত সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেন মাহবুবুল আলম। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি এবং মানুষের প্রকৃত আয় বিবেচনায় রেখে আগামী জাতীয় বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা চার লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে সাড়ে চার লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেন তিনি।

মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজার মনিটরিং, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিট্যান্স প্রবাহ, রপ্তানি বৃদ্ধি, বহুমুখীকরণ, সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার সংযোজন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, সুদের হার এবং আর্থিক ও ব্যাংক খাতের সংস্কার, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কার্যক্রম জোরদারকরণ, ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বৃদ্ধিকরণ, রাজস্ব নীতির সংস্কার এবং মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয়, সর্বস্তরে সুশাসন এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাই জাতীয় অর্থনীতিতে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) কমিয়ে আনা, বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং খরচসহ সব ধরনের পরিবহন খরচ হ্রাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্থায়ী পরিকাঠামো উন্নয়নে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর আদায়ের ক্ষেত্রে হয়রানি ও জটিলতা দূরীকরণের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব কর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আগামী বাজেটে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানান মাহবুবুল আলম।

পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যসামগ্রী, যেমনÑচাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনিসহ সব ধরনের কৃষিজাত নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যকে উৎসে কর কর্তনের আওতাবহির্ভূত রাখার প্রস্তাব করা হয় এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে।

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পসহ সব রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর হার এক শতাংশ থেকে হ্রাস করে আগের মতো শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা এবং তা আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখা। পাশাপাশি নগদ সহায়তার ওপর আয়কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ নির্ধারণ করা, মিনিমাম ট্যাক্স ও উইথহোল্ডিং ট্যাক্সকে যৌক্তিকীকরণ করা, আপিলাত ট্রাইবুনাল নিরপেক্ষ করার জন্য কর বিভাগের বাইরে থেকে অর্থাৎ অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ অথবা প্রফেশনাল সদস্য আবশ্যকভাবে নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করা, মূসক আইন-৩১(২) ধারার আলোকে পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে আমদানিকৃত উপকরণের ক্ষেত্রে তিন শতাংশ ও পাঁচ শতাংশ আগাম কর (অঞ) প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয় এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থমন্ত্রী জানান, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বর্তমান সরকার বেসরকারি খাতকে সঙ্গে নিয়ে নিরলস কাজ করে চলেছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত প্রস্তাবনাগুলো আগামী জাতীয় বাজেটে সরকার গুরুত্বসহ বিবেচনা করবে বলেও এসময় জানান অর্থমন্ত্রী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান জানান, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়চিত্ত নেতৃত্বে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতি সামনের পথে এগিয়ে চলেছে। এসময় দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে রপ্তানি বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ব্যবসায়ীরা কর ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, কর ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে সরকার ও ব্যবসায়ী সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে এরই মধ্যে খাতভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তাদের প্রস্তাবনাগুলো থেকে যৌক্তিক প্রস্তাবনাগুলো বাজেটে তুলে ধরতে কাজ করছে এনবিআর। ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোনো অসন্তোষ থাকলে সেগুলো সমাধানে এনবিআর কাজ করবে বলেও জানান তিনি। উন্নত আধুনিক ও সুখী-সমৃদ্ধ-স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চান তিনি।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০