ঢাকার যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ কতদূর?

মাছুম বিল্লাহ ভূঞা: আদিকাল থেকে মানুষ নিজের প্রয়োজনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করত। তখন মানুষ যাতায়াত করত পায়ে হেঁটে, কিংবা নদীপথে। মানুষ নিজের প্রয়োজনে গড়ে তুলেছে শহর ও নগর। পৃথিবীতে যত সভ্যতা গড়ে উঠেছে তার সবকটি নদীকেন্দ্রিক। কারণ নদীপথের মাধ্যমে সহজে ও স্বল্প খরচে যাতায়াত ও পরিবহন করা যায়। কিন্তু শিল্পবিপ্লবের পর থেকে ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রথম দিকে গণপরিবহনের মাধ্যমে মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করত। বিশেষ করে রেলগাড়ি করে। গণপরিবহনের আক্ষরিক অর্থ জনগণের সেবার পরিবহন।

সাম্প্রতিক সময়ের ভীষণ আলোচিত ও একাধারে সমালোচিত আমাদের ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারের হার বৃদ্ধি। কিন্তু ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াতের ফলে নগর জীবনে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। রমজানে দুপুরে অফিস ছুটির পর ইফতারের আগ পর্যন্ত নগরীর প্রতিটি সড়কে তীব্র যানজট দৃশ্যমান। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজানে তীব্র যানজটে মানুষের ক্ষোভ বহুগুণ বাড়ছে। কারণ ঢাকার রাস্তা ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। অপ্রতুল গণপরিবহন ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট এবং প্রতিনিয়ত জনজীবনে ভোগান্তির মধ্যে পড়ছে মানুষ। অতিমাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের কারণে বাড়ছে বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণে রাজধানী ঢাকা শীর্ষে অবস্থান করছে আর তাই মানুষের মনে দিন দিন ক্ষোভের পরিমাণও বাড়ছে। অন্যান্য শহরের তুলনায় যানজটের ভয়াবহ রূপটি রাজধানী ঢাকাতেই বেশি দেখা যায়। এখানে প্রতিনিয়তই যাত্রীরা যানজটের শিকার হচ্ছেন, ক্ষুণ্ন হচ্ছে তাদের নাগরিক অধিকার এবং অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ। শহরে যানজটের কারণে যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে স্থবির হয়ে পড়ছে। সেখানকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সঙ্গে সঙ্গে শহরের বায়ুকে আরও বেশি দূষিত করছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর তথ্য বলছে, রাজধানীতে প্রতি ২ ঘণ্টার যাত্রাপথে ৪৬ মিনিটই নষ্ট হয় যানজটে। এভাবে বছরে গড়ে ২৭৬ ঘণ্টা নষ্ট হয়। নষ্ট হয় কর্মঘণ্টা এবং কমে যায় শ্রমের মান। উত্তরণের পথ কোন দিকে প্রশ্ন সবার।

রাজধানীর এ ভয়াবহ যানজট এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। সময়মতো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে ভুল পরিকল্পনায় ফলে এমন দুরবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ক্রমাগত অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ফুটপাত দখল, ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে না চলা, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি, অপ্রশস্ত সড়ক, ফিটনেসবিহীন গাড়ির অবাধ চলাচল ঢাকাকে যানজটের নগরীতে পরিণত করেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ও মানহীন মিনিবাস, ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ায় বাড়ছে যানজট। একই সঙ্গে ফুটপাত দখল করে হকারের পণ্যের পসরা বসিয়ে দখলদারত্ব, এলোমেলো স্থান থেকে গণপরিবহনে ওঠানামা এবং রাস্তা পারাপারে জেব্রাক্রসিং ব্যবহার নিশ্চিত না হওয়া, আইন অমান্যে জরিমানাসহ আইনের যথাযথ প্রয়োগে প্রশাসনের তৎপরতার ব্যর্থতা নগরীর যানজট বৃদ্ধির জন্য দায়ী। যানজট নিরসনে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ সালে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় দৈনিক গড়ে ৩ কোটি ট্রিপ বা লোক চলাচল ছিল (একজন লোক যতবার চলাচল করে, ততটা ট্রিপ তৈরি হয়)। ২০২৫ সালে ৪ কোটি এবং ২০৩৫ সালে ৫ কোটির বেশি ট্রিপ তৈরি হবে। এর বাইরেও আছে পণ্য পরিবহন।

২০০৫ সালে তৎকালীন সরকার ঢাকার অভ্যন্তরীণ সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়ন, মহানগরীতে প্রবেশ ও নির্গমন, যানজট নিরসনে ২০ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) হাতে নেয়। পরে ২০১৬ সালে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপির) অধিকাংশ প্রস্তাবনা মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) প্রণয়নের জন্য সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লুইস বার্জার গ্রুপ। ওই পরিকল্পনায় ২০২৪ সালের মধ্যে ৩ কোটি ৬০ লাখ যাত্রীর পরিবহন চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে যাতায়াতব্যবস্থা উন্নয়নে সুপারিশ করা হয়েছিল। রাস্তার শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, অযান্ত্রিক যান ব্যবস্থাপনা, বৃত্তাকার নৌপথ চালু করা, পথচারী চলাচল ও নিরাপত্তা, পার্কিং নীতিমালা প্রণয়ন, পূর্ব-পশ্চিমমুখী সড়ক সম্প্রসারণের বিষয়টি তাতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এসব বিষয় উপেক্ষিত।

বৃহত্তম ঘনবসতির ঢাকা নগরীতে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল অবকাঠামো ব্যবস্থা আজ জনজীবন করে তুলেছে স্থবির, এর অন্যতম কারণ যাত্রীর তুলনায় অপ্রতুল গণপরিবহন এবং তুলনামূলক বিত্তবানদের ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে একই পরিবারের দুই বা ততধিক ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার। বড় লোকের ছোট গাড়ি যানজট সৃষ্টি করছে। নীতিনির্ধারকদের অবিবেচনামূলক কর্মকাণ্ড বর্তমানে আমাদের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা ও পরিকল্পনায় আবর্তিত হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়িকে ঘিরে। যার ফলে প্রতিনিয়ত গণপরিবহন হচ্ছে অবহেলিত। গণপরিবহনের অপ্রতুলতা এবং সেবার মানবৃদ্ধি না পাওয়াও ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। প্রত্যেক যাত্রী নিরাপদে, স্বাচ্ছন্দ্যে এবং আরামে যাতায়াত করতে চায়, কিন্তু গণপরিবহনে এই সুবিধাগুলো পর্যাপ্ত নেই বললেই চলে।

আগে একটি গণপরিবহন (বাস) দিনে ১৭০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার চলাচল সম্ভব হতো, কিন্তু বর্তমানে যানজটের কারণে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটারের বেশি চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। তীব্র যানজটের কারণে গণপরিবহন (বাস)-এর নিয়মিত ট্রিপ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন সাম্প্রতিক তথ্যমতে, ঢাকায় গণপরিবহন ব্যবহার করেন ৫৩ শতাংশ যাত্রী আর মাত্র ১১ শতাংশ যাত্রী ব্যবহার করেন ব্যক্তিগত গাড়ি। অথচ ঢাকার প্রায় ৭০ শতাংশ রাস্তা ব্যক্তিগত গাড়ি দখলে থাকে। ঢাকায়  মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ আর রিকশার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তার আগে ২০১১ সালে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রির্সাচ সেন্টারের প্রকাশিত এক পরিসংখানে বলা হয়েছে, গণপরিবহন ৬ শতাংশ জায়গা দখল করে থাকলেও ২৮ ভাগ যাত্রী পরিবহন করে। ব্যক্তিগত গাড়ি ৩৪ দশমিক ৪১ শতাংশ জায়গা দখল করে থাকে কিন্তু যাত্রী পরিবহন করে মাত্র ৮ দশমিক ৮৩ ভাগ। গবেষণা তথ্যমতে, যানজট বাড়ার প্রধান কারণ বাসের মতো গণপরিবহন না বাড়িয়ে ছোট ও ব্যক্তিগত গাড়ির নিবন্ধন বাড়ানো। পরিসংখানে আরও বলা হয়েছে, একটি ব্যক্তিগত গাড়ি প্রতিদিন দুই-তিনজন যাত্রী পরিবহন করে, কিন্তু একটি রিকশা প্রতিদিন (প্রায়) একশ জন যাত্রী পরিবহন করে। যানজট সৃষ্টি করার কারণে উন্নত বিশ্বে অনেক রাস্তা দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের অনুমোদন করা হয় না। ঢাকা শহরে যানজটের কারণে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করার ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করার কথা, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে তা উল্টো। বেশি যাত্রী পরিবহন করার পরও অনেক রাস্তা দিয়ে পরিবেশবান্ধব যানবাহন (রিকশা) চলাচল নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। যার ফলে রাস্তার ওপর ব্যক্তিগত গাড়িগুলোর পার্কিং করার জন্য জায়গা বেড়ে গেছে, যা ওই এলাকাতে যানজটকে আরও জটিল রূপ দিয়েছে। সরকার বর্তমানে গণপরিবহন (বাস) আমদানির জন্য ঋণ সুবিধা দেয় না বললেই চলে। কিন্তু অন্য দিকে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে। এখানে শেষ নয়, সরকার ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের বিনা সুদে ৩০ লাখ টাকা দিচ্ছে এবং মন্ত্রীদের ও সংসদ সদস্যদের জন্য বিনা শুল্কে ব্যক্তিগত গাড়ি আমদানি করার সুবিধা করে দিয়েছে।

বিআরটি-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ৩০০টি ব্যক্তিগত গাড়ি ঢাকার রাস্তায় নামছে। ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার ছয় থেকে সাত (৬-৭) ভাগ মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে। গত কয়েক বছরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন রুটে ৪২টি গণপরিবহন কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে, এর অন্যতম কারণ সিন্ডিকেট এবং চাঁদাবাজি। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে পরিবহন সংকট। সাধারণ মানুষের অভিযোগ রয়েছে, চালু বাসগুলোতেও যাত্রীদের জন্য সুবিধা অপ্রতুল। নারী যাত্রীদের বাসে উঠতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের গণপরিবহনের (বাস) ওঠানামা বা গণপরিবহন ব্যবহার করা একেবারে অসম্ভব। আমাদের দেশে গণপরিবহন সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা প্রচলিত আছে। মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর ৫৯ ধারাতে বর্ণিত আছে, রুট পারমিট আদায়ের জন্য জনকল্যাণই মুখ্য বিবেচ্য বিষয় এবং ৬০ ধারাতে বর্ণিত আছে, যাত্রীদের জন্য আনুষঙ্গিক সেবার কথা, যা বর্তমানে কোনো গণপরিবহনে দেখা যায় না বললেই চলে। একই আইনের ৬০(১২) ও (১৩) উপ-ধারাতে বর্ণিত আছে, ভাড়ার হার অনুমোদিত হতে হবে এবং ভাড়ার রসিদ প্রদান করতে হবে।

যানজটের জন্য একই সঙ্গে যাত্রী এবং চালক দুইজনেই প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছে। বাস্তবতা হচ্ছে এই সমস্যার তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান এই মুহূর্তে নেই। যেটা সরকার করতে পারে সেটা হচ্ছে, অবস্থা আরও খারাপ হতে না দেয়া এবং সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ভবিষ্যৎ হতে হবে সর্বোচ্চ পরিকল্পিত। যদিও সরকার ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে মেট্রোরেল চালু করেছে। কিন্তু প্রতিটি  মেট্রো-স্টেশনে কীভাবে যাত্রী পৌঁছবে এবং প্রতিটি স্টেশন থেকে তাদের গন্তব্য স্থলে পৌঁছার সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ এখনও দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এজন্য ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মেট্রোরেল যাত্রীদের।

ঢাকা বিশ্বের অপরিকল্পিত নগরীগুলোর একটি। এই নগরীকে বাঁচাতে হলে ঢাকামুখী জনস্রোত আর কোনোভাবেই বাড়তে দেয়া যাবে না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবা, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই ঢাকাকেন্দ্রিক। এই জন্য যানজট আরও বেশি প্রকট। এছাড়া জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল থেকে মানুষ জীবন ও জীবিকার তাগিদে পূর্বপুরুষের ভিটামাটি ছেড়ে চলে আসছে। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সদর দপ্তরে ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২৩’ ফলাফল এ তথ্য বলছেÑশহরের বস্তিতে বসবাসকারী প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ বরিশাল অঞ্চলের মানুষ। প্রশাসনিক অফিসসহ এসব কিছু বিকেন্দ্রীকরণ আজ তাই সময়ের দাবি। পাশাপাশি ঢাকাগামী রেল সেবাকে আরও উন্নত করতে হবে। যাতে করে মানুষ ঢাকার বাইরে থেকে এসেও কাজ করে আবার বাড়ি ফিরে যেতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এ ক্ষেত্রে আমাদের আদর্শ হতে পারে। দিল্লি এবং বেঙ্গালুরের মতো, প্রথম দিকে সপ্তাহে এক দিন জোড় ও বিজোড় ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। বিশেষ করে, স্কুল ও কলেজগুলো যেন হাঁটার পথের মধ্যে হয় (যেমন-কমিউনিটি স্কুল ও কলেজ), এই জন্য প্রত্যেক কমিউনিটিতে একই মানসম্পন্ন স্কুল এবং কলেজ প্রতিষ্ঠা করার দিকে সরকারকে সুদৃষ্টি দিতে হবে। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাস ব্যবস্থা করার জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষদের নিদের্শনা প্রদান করা। ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে  যাওয়া-আসার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।

সিঙ্গাপুর সরকারের মতো ব্যক্তিগত গাড়ির নিবন্ধন বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা হলে শহরের যানজট হ্রাস পাবে, পাশাপাশি শহরে বায়ুদূষণ ও পরিবেশদূষণ কমবে। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য মতে, প্রতি বছর ঢাকা শহরে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায়। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারকারীকে বায়ুদূষণ ও পরিবেশ দূষণের জন্য উচ্চহারে কর আরোপ করা। রাস্তায় বা যত্রতত্র স্থানে গাড়ি পার্কিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা এবং ব্যক্তিগত গাড়িতে সিএনজি ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা। ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ১৮টি সংস্থা জড়িত। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ তার মধ্যে একটি সংস্থা। এই সংস্থাগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সমন্বয় ভালো থাকলে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।

সংবিধানে জনস্বার্থে এবং জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে সমষ্টিগত অধিকার সংরক্ষণের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। জনস্বার্থে এবং জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে সরকারের এই দিকে সুদৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। স্বল্পদূরত্বে যাতায়াত করার জন্য পরিবেশবান্ধব যানবাহনকে (সাইকেল ও রিকশা) প্রাধান্য দিতে হবে। গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে অধিক যাত্রী পরিবহনকারী এসি ও নন-এসি গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা এবং যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি করা। উন্নত বিশ্বের মতো আমরা যাত্রী কল্যাণে স্বল্পমূল্যে মাসিক টিকিটে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে পারি। শহরের রাস্তায় ট্রামের মতো গণপরিবহনের ব্যবস্থা করলে যাত্রীরা নিরাপদে, আরামে ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবে। তাছাড়া ঢাকার আশপাশের চারটি প্রধান নদীসহ খালগুলোকে দখলমুক্ত ও সংযোগ স্থাপন করে নদীকেন্দ্রিক যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত করে তোলার একটি চমৎকার উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা। নদীপথ, লেক ও খালভিত্তিক এই রকম আরও উদ্যোগ হতে পারে যানজট নিরসনে একটি চমৎকার বিকল্প। যানজট নিরসনে সরকারের রাজনৈতিক সময়োপযোগী ও সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে পারলে সুফল আনা সম্ভব। তাই যানজট নিরসনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের এই দিকে সুদৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

আইনজীবী

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০