বিদেশি ঋণের বিষয়ে সতর্ক হোন

ঋণ পরিশোধের জন্য সরকার নতুন করে ঋণ নিচ্ছে বলে দাবি করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের ঋণ ও পরিশোধের বাধ্যবাধকতা বাড়ছে, যা সরকারকে অপর্যাপ্ত রাজস্ব আদায়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধের জন্য ক্রমাগত নতুন ঋণ নিতে বাধ্য করছে। কভিড বা ইউক্রেন যুদ্ধ নয়, ভিন্ন কারণে সরকারের ঋণ নেয়ার প্রবণতা ত্বরান্বিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সিপিডি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ এবং পরিশোধের সক্ষমতা: উদ্বেগের কারণ আছে কি?’ শীর্ষক সংলাপের মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলা হয়।

সংলাপে সিপিডির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়া, চীনসহ বিভিন্ন উৎস থেকে বড় প্রকল্পে কঠিন শর্তের ঋণ নেয়া হচ্ছে। ওই সব ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়ও এসে গেছে। এতে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে।

সংলাপে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেছেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার বিদেশি ঋণে একের পর এক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও তার সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না কেন? একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বৈদেশিক ঋণের মেগাপ্রকল্পকে পুঁজি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে, এমনকি বিদেশে অর্থও পাচার করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রতারণামূলক বাস্তবতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এত মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের পরও জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ এখনও ২৩ শতাংশে কেন আটকে আছে? বরং সরকারের হিসাবে, জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ কমেছে।

গত তিন অর্থবছরের বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করতে গিয়ে সরকারকে ২৪ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা ঋণ করতে হয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব আদায়ের বিকল্প নেই, ঋণ করে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু এসব প্রকল্প রপ্তানি বাড়াতে পারছে কি না, তা দেখতে হবে। এসব প্রকল্পে আয় হচ্ছে টাকায়। ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে ডলারে। ডলারের দাম বাড়ার ফলে ঋণ পরিশোধে বেশি টাকাও খরচ হচ্ছে। এমনকি বেসরকারি খাতের ঋণ পরিশোধেও রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

সরকার ঋণ করে বিদেশি ঋণ পরিশাধ করছে, অন্যদিকে দেশে ব্যাংকের ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে খুবই অমনোযোগী।

শেয়ারবাজারের মাধ্যমে মধ্যবিত্তের টাকা লোপাট হচ্ছে। বৈদেশিক ঋণে মেগাপ্রকল্পের মাধ্যমে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর পুঁজি সঞ্চয়ের নতুন উৎস হিসেবে উৎসাহিত করা হয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে তা বেশি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেন, মেগাপ্রকল্পের সঙ্গে ওই বিশেষ গোষ্ঠীর টাকা পাচারের সংশ্লেষ পাওয়া যাবে।’

এত নেতিবাচক দিক থাকা সত্ত্বেও বিদেশি ঋণ দিয়েই আমাদের চলতে হবে। তবে তা যেন সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আর অবশ্যই সরবরাহকারী ঋণসহ (সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট) ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ এড়িয়ে চলতে হবে। সেখানে ঋণফাঁদে পড়ে বড় সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা থাকে। কোন দেশে কার ফাঁদে কীভাবে পড়েছে, সে দৃষ্টান্ত সামনে রেখে বিদেশি ঋণের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০