প্রতিনিধি, ফরিদপুর : ফরিদপুরের কানাইপুরের দিগনগর (তেঁতুলতলা) এলাকায় পিকআপ ও যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত পাঁচজনকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নিহতরা সবাই পিকআপের যাত্রী ছিলেন। ঘটনাটি তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে সদর উপজেলার কানাইপুরের তেঁতুলতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি হাসানুজ্জামান।
এক পরিবারের নিহত চারজন হলেন বোয়ালমারী উপজেলার বেজিডাঙ্গা গ্রামের রাকিবুল ইসলাম মিলন (৩৮), তার স্ত্রী সুমি বেগম (৩৫) ও দুই ছেলে রুহান (৮) ও হাবিব সিনান (৩)।
নিহত অন্যরা হলেনÑআলফাডাঙ্গা উপজেলার চরবকাইল গ্রামের তবিবুর খান (৫৫), বেজিডাঙ্গা গ্রামের জাহানারা বেগম (৫৬), সোনিয়া বেগম (৫৮), নুরারী (২), পিকআপ চালক কুসুমদি গ্রামের নজরুল ইসলাম (৩৫), হিদাডাঙ্গা গ্রামের শুকুরুন নেছা (৮৫), কহিনুর বেগম (৭০) ও সূর্য বেগম (৫৫)।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. মোর্শেদ আলম জানান, সকাল আটটার দিকে সাতক্ষীরাগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে পিকআপে থাকা ১১ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা উদ্ধারকাজে অংশ নেন। আহতাবস্থায় আটজনকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে আরও দুইজনের মৃত্য হয়। গুরুত্বর আহত আলফাডাঙ্গার ইকবাল হোসেনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হলে ঢাকায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মোট ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি জানান, দ্রুত গতির কারণেই এ হতাহতের ঘটনা দুর্ঘটনা ঘটেছে। দ্রুতগতির কারণে দুটি বাহন একই লেনে চলে আসায় মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় দেড় ঘণ্টা ধরে যান চলাচল বন্ধ থাকার পর সাড়ে নয়টার পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. দীপক কুমার বিশ্বাস জানান, আহতদের মধ্যে নুরী বেগম নামের একজনের অবস্থা কিছুটা গুরুত্বর। অন্যরা শঙ্কামুক্ত। তিনি জানান, আহতদের সুচিকিৎসায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানান, নিহতদের দাফনের জন্যে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। পরে আবেদন করলে প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা দেয়া হবে।
হাইওয়ে থানা পুলিশের উপপরিদর্শক ইমতিয়াজ উদ্দিন জানান, এরই মধ্যে নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি জানান, নিহতদের বাড়ি ফরিদপুরের অলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী উপজেলায়।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এ কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত করে জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রথমে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির কথা বলা হলেও পরে দুজনকে বাড়ানো হয়েছে।
এ কমিটির সভাপতি করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) একজন প্রতিনিধি, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও বিআরটিএ-এর একজন করে প্রতিনিধি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, এ ঘটনা ঘটার পর আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে একটি কমিটি করে এটি তদন্ত করে কীভাবে ঘটনা ঘটেছে, কার দোষ এবং এ থেকে উত্তরণে কী কী উপায় থাকতে পারে এসব বিষয় উল্লেখপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন।
তিনি বলেন, আমরা এটি নিয়ে এখনও বসিনি। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর থেকেও প্রতিনিধি বাছাই করে আমাকে জানানো হয়নি। এই প্রতিনিধি কালকের মধ্যে পেয়ে যাব। আশা করছি, আজ বুধবার (১৭ এপ্রিল) আমাদের কমিটির অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে আমরা কাজ শুরু করে আগামী তিন দিনের ভেতর এ প্রতিবেদন জমা দিতে সক্ষম হবো।