নিজস্ব প্রতিবেদক : তিন দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন ভারতের অর্থ ও করপোরেট বিষয়ক মন্ত্রী অরুণ জেটলি। সফরের প্রথম দিনে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ-ভারত বিজনেস সভায় অংশ নিয়েছেন তিনি। এ সভায় বক্তারা দুদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য অশুল্ক বাধাকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। সভায় এসব বাধা নিরসন করে বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতিকে সমন্বিত করা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল মঙ্গলবার ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সফররত ভারতের অর্থ ও করপোরেটবিষয়ক মন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, ‘দুদেশের মধ্যে ডায়ালগ বা আলোচনার ব্যবস্থাগুলো খুবই শক্তিশালী। ফলে প্রধান প্রধান বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর সমাধান হয়েছে। এখন দুদেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করা প্রয়োজন। দুদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ঐক্য রয়েছে। এবার তাকে অর্থনৈতিক সমন্বয়ে (ইন্টিগ্রেশন) রূপ দিতে হবে। এজন্য দুদেশেরই বেশ কিছু সংস্কার সাধিত হয়েছে। ভারত একটি বিরাট বাজার এবং সেখানে বিনিয়োগের জন্য উদার পরিবেশ বিদ্যমান। তাই বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য ভারতে বিনিয়োগের সুযোগ উম্মুক্ত। আর ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছেন। এটা দুদেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করবে। ভারতের জন্য দেওয়া দুটো অর্থনৈতিক অঞ্চল সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় সেখান থেকে পণ্য আনা-নেওয়া সুবিধাজনক হবে।’
বাংলাদেশকে ‘পানি উদ্বৃত্ত দেশ’ উল্লেখ করে পানি, বিদ্যুৎ, জনশক্তি, দক্ষতা ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুদেশের সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়ে জোর দেওয়ার কথা বলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী ভারত। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। অবশ্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি হয় বলেই এ বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধিকে আমরা সমস্যা মনে করি না। তবে এটা কমিয়ে আনতে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধি এবং ভারতীয় উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের মাটিতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। ভারত তামাক ও অ্যালকোহল ছাড়া সব পণ্যেই বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু নন-ট্যারিফ ও প্যারা-ট্যারিফ বাধা বিদ্যমান রয়েছে। এগুলো নিরসন না করলে বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। পাটসহ কিছু পণ্যের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটিও আরোপিত রয়েছে।’ এসব বাধা তুলে নিতে ভারতীয় অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগের আশা করেন তিনি।
সভায় ভারতীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের নেতা পঙ্কজ প্যাটেল, রাজেশ সি সাহা, এফবিসিসিআই’র প্রথম সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ব্যবসায়ী নেতা আবদুল মাতলুব আহমাদ, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, এমসিসিআইয়ের সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ করিব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে গতকাল ঢাকায় আসেন ভারতের অর্থ ও করপোরেটবিষয়ক মন্ত্রী অরুণ জেটলি। গতকাল বিকালে ভারতের একটি বিশেষ বিমানে ঢাকার কুর্মিটোলায় অবতরণ করেন তিনি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাকে স্বাগত জানান। সেখান থেকে তিনি সোনারগাঁও হোটেলে যান। সফরকালে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। সফরে ভারতের অর্থ সচিব সুভাষ চন্দ্র গর্গসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের ২৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রয়েছে।
আজ সফরের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে অরুণ জেটলির। পরে বাংলাদেশকে ভারতের ঘোষিত ৪০০ কোটি ডলারের ঋণ (তৃতীয় পর্বের এলওসি) বাস্তবায়নের চুক্তি সই হবে। এছাড়া এ সময় দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সুরক্ষার জন্য দুই দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তির ‘যৌথ ব্যাখ্যামূলক কিছু নথি সই হবে। পরে ‘ভারত সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উদ্যোগ’ বিষয়ে একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখবেন ভারতের অর্থমন্ত্রী। এছাড়া দুই অর্থমন্ত্রী যৌথভাবে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ‘ক্যাশলেস ভিসা সার্ভিস’ এবং এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ঢাকা কার্যালয়ের উদ্বোধন করবেন।
Add Comment